মৌ(উত্তরপ্রদেশ), 16 মে : প্রথমে দোষ চাপিয়েছিলেন তৃণমূলের উপরই । কিন্তু, তাতেও বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার বিষয়ে ক্ষোভ পুরোপুরি কাটাতে পারেননি। আর এ বার মোক্ষম ঘোষণাটা করেই ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । কথা দিলেন, যে জায়গায় মূর্তি ভাঙা হয়েছে, সেখানেই পঞ্চধাতুর মূর্তি পুনঃস্থাপন করা হবে ।
আজ উত্তরপ্রদেশের মৌতে নির্বাচনী জনসভা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে সেখান থেকেই তিনি টার্গেট করেন বাংলার তৃণমূল সরকারকে । রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করেন। পাশাপাশি, তাঁর ভাষণে উঠে আসে বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গও। কথা দেন ফের মূর্তি স্থাপন করা হবে । প্রধানমন্ত্রী কথায়, ''বিদ্যাসাগরের আদর্শে আমরা বিশ্বাসী । তাঁর ভাবধারাকে মেনে চলব । কথা দিচ্ছি, ওই একই জায়গায় বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি পুনঃস্থাপন করব ।''
বিতর্কের সূত্রপাত গত মঙ্গলবার । ওই দিন BJP সভাপতি অমিত শাহের সভায় বিশৃঙ্খলার সময় ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি । বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে ওঠে । স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূল-BJP এই ঘটনার জন্য একে অপরের দিকে আঙুল তোলে ।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মোদি-অমিত শাহকে আক্রমণ করেন । অন্য দিকে, এত দিন মূর্তি ভাঙা দিয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী । এমনকী, টাকির জনসভায় মোদি কৌশলে মূর্তি ভাঙার বিষয়টি এড়িয়ে যান । কেবল, দাবি করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, ভোটের আগে একটি রোড শো করতে গেলেও হামলা হয় । কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রক্ষা পায় না ।
শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গের 9 টি কেন্দ্রে ভোট । যেগুলির অধিকাংশই কলকাতায় এবং কলকাতার চারপাশে । মোদি-শাহরা মুখে যাই বলুন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার নেতিবাচক প্রতিফলন ভোটযন্ত্রে পড়ার আশঙ্কা যে রয়েছে, সে কথা উড়িয়ে দিতে পারছে না BJP নেতৃত্ব । সেই কারণেই স্থির হয়, অন্য সব কমর্সূচি বাতিল করে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গকে । কৌশল মতোই যাঁর রোড শোয়ে ওই তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে, সেই অমিত শাহকে সামনে রেখেই আক্রমণের ঘুঁটি সাজায় দল । অমিত দাবি করেন, ‘‘রোড শোয়ের শুরু থেকেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা উস্কানি দিচ্ছিল । ওরা কেরোসিন বোমা ছুড়েছে । আমার প্রাণ সংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় এ যাত্রা বেঁচে গেছি । বিদ্যাসাগর কলেজ তো তালাবন্ধ ছিল । আমাদের সমর্থকদের কাছে চাবি ছিল না। তা হলে BJP কর্মীরা ভিতরে ঢুকে মূর্তি ভাঙল কখন ?’’
যদিও সেই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয় তৃণমূল। দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমি আবেগদৃপ্ত হওয়ার জন্য লজ্জিত নই । বরং খুশি যে, ওই নবজাগরণ ঘটানো এক পুরুষের অবমাননার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পেরেছি ।’’ রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মণীশ গুপ্তের কথায়, ‘‘শুধু শাহের রোড শো নয়, গত ছ’দফার ভোটেই পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে গুন্ডা আমদানি করেছে BJP । তাদের রাখা হয়েছে BJP সমর্থকদের বাড়িতে এবং হোটেলে।’’
রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, ক্রমেই বিষয়টি নিয়ে চাপ বাড়ছিল BJP অন্দরে । কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর চাপও বাড়াচ্ছিল রাজ্যের গেরুয়া নেতারা । ফলে এ বার অনেকটা পরিস্থিতির চাপেই মুখ খুলতে হল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে । রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেও জনমানসে ক্ষোভ কমাতে মূর্তি পুনঃস্থাপনের মোক্ষম চালটি দিতে বাধ্য হলেন নরেন্দ্র মোদি ।