দিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি : ভোর সাড়ে তিনটে। ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে রওনা দিল ১২টি যুদ্ধবিমান। লক্ষ্য সীমান্তের ওপারে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে মিরাজ যুদ্ধবিমান থেকে চলল মুহুর্মূহু বোমাবর্ষণ। মুহুর্তে গুঁড়িয়ে গেল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি।
ভারতের বায়ুসেনার রণসম্ভারে রয়েছে সুখোই, জাগুয়ার, MIG-27-এর মতো যুদ্ধবিমান। তবুও এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে কেন বেছে নেওয়া হল মিরাজ ২০০০-র মতো যুদ্ধবিমানকে ?
"মিরাজ ২০০০" র প্রেক্ষাপট-
৮-এর দশক। অ্যামেরিকা থেকে F-16 যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে পাকিস্তান। টনক নড়ে ভারতের। শুরু হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা, বৈঠক। শেষে ফ্রান্সের যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা দাঁসোর সঙ্গে যুদ্ধবিমান ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি করে ভারত। ৩৬টি এক আসন ও চারটি দুই আসন বিশিষ্ট মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান কেনে ভারত। ২৯ জুন ১৯৮৫, মিরাজ ২০০০ মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয়। শক্তিশালী হয় ভারতীয় বায়ুসেনার সমরসজ্জা।
"মিরাজ ২০০০" র বৈশিষ্ট-
- Mach ২.৩ অর্থাৎ, ২.৩৩৬ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে উড়তে সক্ষম এই বিমান
- বিমানের দৈর্ঘ ১৪.৩৬ মিটার
- নিজের ওজন সহ ১৩.৮০০০ কেজি বহন করতে সক্ষম মিরাজ ২০০০
- একটানা ১৫০০ কিলোমিটার উড়তে পারে
"মিরাজ ২০০০" র সমরসম্ভার
- ৩০ মিলিমিটারের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ১২৫ রাউন্ড করে গুলি ছোড়া সম্ভব
- বিমানে রয়েছে ৬৮ মিলিমিটারের রকেট পড
- প্রতিটি পড থেকে ১৮টি রকেট ছোড়া যায়
- মিরাজ থেকে অনায়াসেই বোমা নিক্ষেপ করা যায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে
- PGM ৫০০ এবং PGM ২০০০ মডুলার গাইডেড বোমা ছোড়া সম্ভব
- একাধিক লেজ়ার গাইডেড মিজ়াইল ছোড়া সম্ভব মিরাজ ২০০০ থেকে
- "মিরাজ ২০০০ N" যুদ্ধবিমান থেকে আনবিক ক্রুজ় মিজ়াইল ছোড়া সম্ভব
রণক্ষেত্রে সাফল্য-
ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্তির পর মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান প্রথম ব্যাপক হারে ব্যবহার হয় ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে। পরীক্ষাতে মিরাজ ২০০০ চূড়ান্ত সফল হয়।
শত্রুপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে আকাশের বুকচিড়ে উড়ে যাওয়া মিরাজ ২০০০ আজও ভারতীয় বায়ুসেনার মজবুত হাতিয়ার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বায়ুসেনার সমরসম্ভারে যোগ হয়েছে আরও অনেক পালক। কিন্তু, মিরাজ ২০০০ আজও ভারতের আকাশের অতন্দ্রপ্রহরী।