মেট্রোয় চুম্বন-কাণ্ডে নীতি পুলিশি ! পড়তে পারেন আইনি ঝামেলায়, সতর্কতা লালবাজারের - KISSING VIDEO OF COUPLE
সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের হেনস্তার অভিযোগ যদি ওই যুগল জানান, সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে কলকাতা পুলিশ ৷ পুরুষতন্ত্রের আগ্রাসন বলে উল্লেখ মনোবিদের ৷
Published : Dec 19, 2024, 9:19 PM IST
কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: বিগত কয়েকদিনে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে কলকাতা মেট্রোর একটি ভিডিয়ো ৷ কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে যুগলের চুম্বনের ওই ভিডিয়ো নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা জনের, নানা মত দেখা যাচ্ছে ৷ কেউ কেউ যুগলের পক্ষ নিলেও, অনেকেই সমালোচনা করছেন ৷ এককথায় 'নীতি পুলিশি' শুরু হয়েছে ৷ এবার সে নিয়ে সতর্ক করে দিলেন কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ৷
যুগলের সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই, ব্যক্তিগত আক্রমণ, পারিবারিক শিক্ষা-সহ নানা মন্তব্য উঠে আসে ৷ এই আবহে এবার নাগরিকদের সতর্ক করল কলকাতা পুলিশ ৷ লালবাজারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানিয়ে দিলেন, যুগল যদি অভিযোগ করেন, তাহলে আইনি ঝামেলায় পড়বেন সেই সকল সমালোচকরা ৷
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন, "প্রকাশ্যে চুম্বন আইনত অপরাধ নয় ৷ তাঁরা কাউকে বিরক্ত করেননি ৷ তবুও, সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে ৷ অনেকে সেই ছবিকে সামনে রেখে নীতি পুলিশগিরি কিংবা মোরাল পুলিশিং করছেন ৷ শুধু তাই নয় বরং, তাঁদের হেনস্তার চেষ্টা হচ্ছে ৷ যদি ওই যুগল পুলিশে অভিযোগ করেন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি পুলিশগিরির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি ৷"
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (সদর) মিরাজ খালিদ ইটিভি ভারতকে বলেন, "বিষয়টা আমি শুনেছি ৷ ভালোভাবে খতিয়ে দেখে বলব ৷" যদিও, এই ঘটনায় ওই যুগলের সঙ্গে কথা বলা যায়নি ৷ তবে, এই নীতি পুলিশগিরির সমালোচনা করেছেন মনোবিদ চিকিৎসক তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতা ৷
মেট্রো স্টেশনে যুগলের চুম্বনের সমালোচনা বা তাঁদের পারিবারিক শিক্ষা বা চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা পুরুষতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেছেন মনোবিদ তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতা ৷ তিনি বলেন, "আমরা যেটাকে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সংস্কৃতি বলে প্রকাশ করি, তা আদতে আমাদের মনের ইচ্ছেগুলোকে দমন করে রেখে, ভালো বলে দেখানোর একটা চেষ্টা ৷ যা মূলত পুরুষতন্ত্রকে বহন করে নিয়ে যাওয়া বলতে পারি ৷"
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পুরনো কলকাতার একটি শ্রেণির কথা তুলে ধরেন এই চিকিৎসক ৷ তিনি লেখক মানস ভাণ্ডারির 'সেকালের কলকাতার যৌনাচার' নামে একটি বইয়ের লেখাকে উদ্ধৃত করে বলেন, "একটা সময় কলকাতার একটি শ্রেণির মধ্যে ভয়ঙ্কর রকমের যৌন প্রবৃত্তি কাজ করত ৷ যা মাঝে-মাঝে যৌন অপরাধে পরিণত হতো ৷ আর সেটা ছিল, কারও সহমত ছাড়া, তাঁদের (মহিলাদের) যৌনদাসি হিসেবে ব্যবহার করা ৷"
তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতার কথায়, "আমরা যখনই আমাদের সংস্কৃতির কথা বলি, তখন কলকাতার এই ইতিহাসটাকে সযত্নে এড়িয়ে যাই ৷ এটা আসলে একপ্রকার ব্যাধী ৷ আমি নিজে যেটা করতে পারি না বা আমাকে ছোট থেকে যে জিনিসটা করতে বাধা হয়েছে, সেই স্বাধীনতা অন্য কেউ ভোগ করলে, সেটার বিরোধিতা করি ৷"
এই বিষয়টিকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেছেন এই মনোবিদ ৷ তিনি বলেন, "একজন ব্যক্তি কেবল পুরষতন্ত্রের ধারক বা বাহক নন ৷ একজন মহিলাও তা করে থাকেন ৷ যখন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ের ব্যাগে নিরোধকের প্যাকেট পেলে তিরস্কার করেন, তখন সেই মহিলাও পুরুষতন্ত্রের বাহক হয়ে ওঠেন ৷"