কলকাতা, 19 নভেম্বর: পথ দুর্ঘটনা এড়াতে এবং বাসের রেষারেষির জেরে পথ দুর্ঘটনার উপর রাস টানতেই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা আদর্শ আচরণবিধি আনতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত বেসরকারি বাস মালিকদের একাংশ। ব্যবসা করতে নেমে যদি বিনা বা লঘু দোষে গুরু শাস্তি হয়, সেই ভয় পাচ্ছে তারা। তাই সুরাহার পথ খুঁজতেই আজ বৈঠকে বসতে চলেছে মালিক পক্ষ।
সম্প্রতি সল্টলেকে দু'টি বাসের রেষারেষিতে বলি হয় এক স্কুল পড়ুয়া। তার আগে একইভাবে বেহালায় মৃত্যু হয় এক স্কুল ছাত্রের। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বাসের রেষারেষি থেকে শুরু করে বেপরোয়াভাবে অত্যধিক গতিতে গাড়ি চালাবার জন্য পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে সম্প্রতি । আর সেই বৈঠকে বাস মালিকদের বক্তব্য শোনার পর সরকারের তরফে জানানো হয়, পরিবহণ দফতর একগুচ্ছ নয়া নিয়ম আনতে চলেছে ৷ আর তার পরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বেসরকারি মালিক পক্ষের একাংশ ৷
প্রসঙ্গত, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সেই ক্ষেত্রে চালকের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার মামলা রুজু হওয়া থেকে শুরু করে বেসরকারি বাসের কর্মীদের কমিশন প্রথা বন্ধ করে মাসিক বেতন ব্যবস্থা শুরু করার কথা বলা হয়েছে ৷ পাশাপাশি আরও একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। এই ধরনের আরও কি কি নয়া নিয়ম থাকতে পারে এসওপি-তে সেই বিষয়টি চিন্তায় ফেরেছে মালিকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস মালিক জানিয়েছেন, এমনিতেই করোনাকাল মালিকদের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে ৷ তারপর থেকে এক চুলও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই কয়েক বছরে জ্বালানি থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং গাড়ি চালাবার জন্য জরুরি কাগজপত্রের খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে । আগের চেয়ে রাস্তায় যাত্রী সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে ৷ এবার যদি নিয়মের ক্ষেত্রে অযথা কড়াকড়ি করা হয়, তাহলে ব্যবসা করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু কি ইচ্ছাকৃত হত্যার সমান ? প্রশ্ন তোলেন সিটি সুবারবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা। তিনি জানান, বাস চালাতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে 6 মাসের জন্য চালকদের লাইসেন্স বরখাস্ত করা হয়। সেই নিয়ম আগে থেকেই রয়েছে । এই সময়কালে সেই চালকের সংসারের সমস্ত দায়ভার এসে পড়ে মালিকদের উপর। তাই এত বড় শাস্তির পর আরও কি শাস্তি দেওয়ার দরকার আছে ?
তিনি বলেন, "তাই আমাদের মতে কঠোর শাস্তির পরিবর্তে যদি চালকদের সচেতন করা যায় এবং পুলিশ ও চালকদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা যায় তাতে অনেকটাই কাজ হবে। তাই মালিকদের পক্ষ থেকে চালকদের জন্য নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করা প্রস্তাব দেওয়া হবে সরকারকে।" চালকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত হত্যার মামলায় মালিকদের নামও যুক্ত করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে মালিকপক্ষ। ব্যবসা করতে নেমে যদি বিনা কারণে বা লঘু দোষে গুরু শাস্তি হয় তাহলে তো ভয় আর কেউ বাস চালাবে না বা কোনও মালিক রাস্তায় বাসও নামাবে না বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েস্টবেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু জানান, পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে এসওপি-তে কি কি নিয়ম থাকছে, সেটা দেখে তারপরেই এই বিষয়ে পরের পদক্ষেপ করা হবে। আগেই আতঙ্কিত হলে কাজের কাজ কিছু হবে বলে মনে হয় না। যদি কঠোর নিয়ম করা হয়, তাহলে ভয়ে কেউ বাস চালাতেই চাইবে না। কারণ সব সময় যে চালকদের দোষেই পথ দুর্ঘটনা ঘটে, তেমনটা তো নয় ৷ অনেক সময় পথচারী বা অন্য গাড়ির চালকদেরও ত্রুটি থাকে। তাই কোনও দুর্ঘটনা হলে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন।