আসানসোল, 14 ফেব্রুয়ারি: আগ্রায় শাহজাহান-মুমতাজের প্রেমের প্রতীক তাজমহল হোক কিংবা মহারাষ্ট্রের পুনেতে বাজিরাও-মস্তানির প্রেমের নিদর্শন মস্তানি মহল । এ দেশে প্রেম চিরকাল সৃষ্টির নজির গড়েছে । আসানসোলেও নিজের প্রেম হারিয়ে প্রেমিকাকে চিঠি হিসেবে সুইসাইড নোট লিখতে বসেছিলেন অনুপম ঘোষাল । কিন্তু তা হয়ে উঠল একটি আস্ত পত্র উপন্যাস । ভোজবাড়ির রোল পেপারে লেখা 327 ফুটের অনুপমের সেই দীর্ঘ প্রেমপত্র কলকাতার দুটি প্রকাশনা ইতিমধ্যেই বই হিসেবে প্রকাশ করেছে । বেস্ট সেলার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বইটি ।
আসানসোলের অনুপম ঘোষাল । একসময় চিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন । করেছেন বহু সংবাদমাধ্যমে খবর সম্পাদনার কাজ । বর্তমানে বয়স 50 ছুঁইছুঁই । কঠিন নার্ভের অসুখে বিপর্যস্ত তিনি । ঘরবন্দি। এই অনুপম ঘোষাল নয়ের দশকে উত্তাল প্রেমে পড়েছিলেন । কোনও এক পারমিতার প্রেমে পড়ে অনুপম তখন আত্মহারা । কিন্তু কয়েক বছর প্রেম করার পর 2000 সালে পারমিতা চলে গেল অন্য আরেকজনের হাত ধরে । আর তা মেনে নিতে পারেননি অনুপম ঘোষাল । ভেবেছিলেন, এই জীবন রাখার মানে কী । আর তাই প্রেমিকাকে চিঠি লিখেই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেবেন ভেবেছিলেন । শুরু হয় চিঠি লেখা ।
টানা 72 ঘণ্টা না খেয়ে, না স্নান করে, চিলেকোঠার ছাদে বসে তিনি লিখে গিয়েছিলেন চিঠি । কিন্তু নিজের লেখা সেই চিঠি যখন তিনি পড়তে শুরু করলেন তখন তিনি দেখলেন তাঁর কলম দিয়ে বেরিয়েছে অদ্ভুত সব শব্দ । যা সাহিত্যগুণে কোনও অংশে কম নয় । আর তাই লেখা থামালেন না । অনুপম ঘোষাল বিয়েবাড়ির রোল পেপার কিনে এনে তার উপরেই লিখে চললেন । টানা তিন মাস । আশি হাজার শব্দের এই চিঠিতে কখনও এসেছে কবিতা, কখনও তৈরি হয়েছে নতুন গান । পারমিতাকে লেখা সেই চিঠি 327 ফুট পর্যন্ত লিখে থামেন অনুপম । সিদ্ধান্ত নেন আত্মহনন নয়, এই সৃষ্টির আনন্দেই তিনি বেঁচে থাকবেন ।
এরপর সেই চিঠি তিনি পাঠিয়েছিলেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দফতরেও । সেই প্রান্ত থেকে সাড়াও মিলেছিল । কিন্তু তাঁরা জানিয়েছিলেন, পুনরায় আরেকটি চিঠি লিখতে হবে যা এই চিঠির চেয়ে আরও বেশি লম্বা । তা আর করে ওঠা হয়নি অনুপমের । কিন্তু স্বীকৃতি মিলেছে । অনুপমের এই দীর্ঘতম প্রেমপত্র কলকাতার দুটি বড় প্রকাশনী বই হিসেবে বের করেছে । সেই বইয়ের নাম 'তোমাকে লেখা প্রেমের চিঠি'। এ বারের বইমেলাতেও তার নতুন সংস্করণ হয়েছে ।