আলিপুরদুয়ার, 17 ফেব্রুয়ারি: জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যে ভ্রমণে এখন আর কোনও খরচ করতে হয় না পর্যটকদের ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত 24 জানুয়ারি থেকে বিনামূল্যে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা ৷ কিন্তু এতে সমস্যায় পড়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ৷
টিকিট কাটতে এসে অনেকেই ঢুঁ মেরে যেতেন কাউন্টারের পাশে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পরিচালিত দোকানে ৷ এখন কাউন্টারে যেতে হচ্ছে না ৷ ফলে দোকানমুখোও কেউ হচ্ছেন না ৷ বিক্রিবাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুজিরুটি বন্ধের মুখে ওই মহিলাদের ৷ এমনই ছবি ধরা পড়েছে আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়ায় ৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে যাঁর নির্দেশে এই সমস্যায় পড়েছেন ওই মহিলারা, সেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই তাঁদের দোকানের সূচনা হয়েছিল ৷
মুখ্যমন্ত্রীর এক নির্দেশে বন্ধের মুখে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রুটিরুজি (ইটিভি ভারত) তাই ওই মহিলারা এখন সরকারের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন ৷ তাঁদের আশা, সরকার নিশ্চয় তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করবে ৷ প্রশাসনের তরফেও ওই মহিলাদের সমস্যার বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গোড়ায় অভয়ারণ্যে প্রবেশের টিকিটের দাম নিয়ে জটিলতা তৈরি হয় ৷ সেই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের তরফে জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যগুলিতে প্রবেশ অবাধ করে দেওয়া হয় ৷ গত 24 জানুয়ারি এই নিয়ম বলবৎ হয় ৷ তার পর থেকে টিকিট ছাড়াই বিনামূল্যে জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্যে প্রবেশ করতে পারছেন পর্যটকরা ৷
আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজভাতখাওয়াতেও একই ছবি ৷ সেখানে আর কেউ কাউন্টারে আসেন না ৷ একেবারে সরাসরি চলে যান অভয়ারণ্যের ভিতরে ৷ আর এতই সমস্যায় পড়েছেন পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ৷ সেখানকার একজন প্রিয়া গোয়ালা মান্না বলেন, ‘‘পর্যটকদের জন্যই আমাদের দোকান চলত ৷ এখন আর এখানে কেউ আসেন না ৷ ক্রেতা না আসায় চরম সমস্যায় পড়েছি ৷’’
রাজভাতখাওয়ায় এই দোকানটিই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা চালান৷ (নিজস্ব ছবি) যে দোকানের কথা তিনি বলছেন, সেটি অবস্থিত রাজভাতখাওয়ার টিকিট কাউন্টারের পাশেই ৷ 2023 সালের 19 জানুয়ারি এই দোকানটির উদ্বোধন হয় ৷ সেই সময় আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক সভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেখানে হাসিমারার সুভাষিনী চা-বাগানের ময়দানে তিনি সভা করেন ৷ সেই সভা থেকেই এই দোকানের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তার পর থেকে বেশ চলছিল সব ৷ পর্যটকরা কাউন্টারে টিকিট কাটার ফাঁকে ঢুঁ মারতেন ওই দোকানে ৷ পছন্দ হলে সেখান থেকে সামগ্রী কিনেও নিয়ে যেতেন ৷ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য পূজা থাপা বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের পর স্বনির্ভর গোষ্ঠী হিসেবে এই দোকান আমাদের জেলাশাসকের দফতর থেকে দেওয়া হয়েছে ৷ এখানে হাতে তৈরি টুপি, কাঠের তৈরি গন্ডার, হরিণ-সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় ৷ আগে অনেক বেচাকেনা হতো ৷ সারাদিনে তিন-চার হাজার টাকা রোজগার হতো ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন বিনামূল্যে সব পর্যটকরা ভিতরে চলে যাচ্ছেন ৷ ফলে আর কেউ আসছেন না ৷ এখন দেখার সরকারের তরফে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় !’’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আরেক সদস্য রমা দাস বলেন, ‘‘টিকিট বন্ধ হলে লোকজন আসবেন কেন ? তাই বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷’’
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রবেশ পথ৷ রাজভাতখাওয়ায় (নিজস্ব ছবি) এই যে দোকানটি, সেখানে বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ৷ এমনটাই জানালেন রমা দাস ৷ তিনি জানান, এর সঙ্গে আরও চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী জড়িত ৷ সেই গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা এখানে যে সামগ্রীগুলি বিক্রি হয়, সেগুলি তৈরি করেন ৷
ফলে সরকারি এই নির্দেশের ফলে বিপাকে পড়েছেন বহু মহিলা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ৷ অনেকে এই কাজের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন ৷ সেই ঋণ এখন কীভাবে শোধ করবেন, সেই চিন্তাই করছেন ৷ প্রিয়া গোয়ালা মান্না যেমন বলছেন, ‘‘বিনামূল্যে না করে যদি টিকিটের দাম কমলে, তাহলেও ক্রেতা হতো ৷ বরং আগের থেকে বেশি হতো হয়তো ৷’’
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রবেশ পথ৷ রাজভাতখাওয়ায় (নিজস্ব ছবি) এই পরিস্থিতিতে বন দফতরের ভূমিকা কী ? তারা কিছু করতে পারবে না ? এই বিষয়ে রমা দাসের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিনামূল্যে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে ৷ তাই বন দফতর আর কী করবে ?’’ তাহলে কি পথে বসতে হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের ?
যদিও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি স্নিগ্ধা শৈব ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওদের যাতে ব্যবসা আবার ভালো হয়, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি । ওঁদের স্বাবলম্বী করার জন্য আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো চালু করেছেন, সেই প্রকল্পগুলোকে যাতে বাস্তবে কার্যকারী করতে পারি এবং ওঁদের সেই সব জায়গায় কাজ দিতে পারি, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি ।’’