কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: রত্না চট্টোপাধ্যায় নাটকবাজ । বছরের পর বছর ধরে নাটক করে যাচ্ছেন ৷ কলকাতা হাইকোর্টে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে সওয়াল করে এমনটাই দাবি করলেন তাঁর আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । মক্কেলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে নিজের দলেরই বিধায়ক রত্নার বিরুদ্ধে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানালেন কল্যাণ ।
শোভনের পক্ষে তিনি আদালতে সওয়াল করে বলেন, "আমরা যে সমাজে বাস করি জানি । ভাইয়েদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক যেমন থাকে, খারাপ সম্পর্কও থাকে । ওনার অবৈধ সম্পর্ক আছে ।" রত্না চট্টোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় নিম্ন আদালতের শুনানির উপর 3 মার্চ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । শুক্রবার বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য এই নির্দেশ দিয়েছেন।
রত্না চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, নিম্ন আদালত এই মামলায় তাঁর দেওয়া সাক্ষীদের বয়ান নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । এই দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রত্না । সেই আবেদনের বিষয়ে শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য । আগামী 28 ফেব্রুয়ারি এই বিষয়ে নির্দেশ দেবেন তিনি ।
এদিনের শুনানিতে রত্নার আইনজীবী রঞ্জন বাচাওয়াতের বক্তব্য, "শোভনের অভিযোগ তাঁরই তুতো ভাইয়ের সঙ্গে রত্নার নাকি অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে । নিম্ন আদালতে আমার মক্কেল নাকি ঠিকঠাক হাজিরা দিচ্ছেন না । কিন্তু সেই অভিযোগ তো শোভনের বিরুদ্ধেও করা যায় । গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের হাজির করা হচ্ছে না নিম্ন আদালতে ।" একইসঙ্গে শোভনকে প্রভাবশালী বলেও দাবি করেন রত্নার আইনজীবী ।
পালটা সওয়ালে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনের পক্ষে বলেন, "কে প্রভাবশালী ? প্রভাবশালী তো রত্না চট্টোপাধ্যায় । তিনি শাসকদলের বিধায়ক । তিনি কার বিরুদ্ধে প্রভাবশালীর অভিযোগ আনছেন ? অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন । সেসব ভাষা মুখে উচ্চারণও করা যায় না । তিনি একজন বিধায়ক । গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট করেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায় ৷"
রত্নাকে তীব্র আক্রমণ করে কল্যাণ আরও বলেন, "2017 সালে ডিভোর্সের মামলা ফাইল হওয়ার পর থেকে লাগাতার মামলার শুনানি হয়নি রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতির কারণে । এরপর তিনি 2018 সালে খোরপোষের আবেদন করেন নিম্ন আদালতে । সেই সময় দ্রুত শুনানির জন্য তিনি আবেদন করেন । যেই টাকা পেয়ে যান, (40 হাজার টাকা করে শোভনের মেয়ের খরচ বাবদ) তারপর থেকে তিনি আর নেই । মামলায় হাজির হন না । নাটকবাজ । লাগাতার নাটক করে যাচ্ছেন তার পর থেকে । 2018 থেকে বছরের পর বছর ধরে মামলায় রত্না চট্টোপাধ্যায় অনুপস্থিত থেকেছেন । তিনি নিম্ন আদালতে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না । 10-15 মিনিট পরেই তিনি ক্লান্ত হয়ে যান । এদিকে নিম্ন আদালতের বাইরে তাঁর সমর্থকরা চেঁচামেচি করেন ।"
শোভনের হয়ে কল্যাণের প্রশ্ন, "স্ত্রী বলে ওঁর সব অধিকার আছে । আমার কোনও অধিকার নেই ? বছরের পর বছর ধরে কেন ঘোরাচ্ছেন । আমার শান্তিতে বাঁচার অধিকার নেই নাকি ? আমরা যে সমাজে বাস করি জানি । ভাইয়েদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক যেমন থাকে, খারাপ সম্পর্কও থাকে । ওনার অবৈধ সম্পর্ক আছে । শুনানিতে আইনজীবী কোনওদিন হাজির হল না ঠিক আছে ৷ কিন্তু সাক্ষীদের কেন হাজির করছেন না নির্দিষ্ট তারিখগুলোতে ?
বজবজ বিধানসভায় হাজির হতে পারলেন আর নিম্ন আদালতে শুনানির সময় হাজির হতে পারেন না ? আমার তুতো ভাইয়ের সঙ্গে অসৎ সম্পর্ক আছে কি না সেটা প্রমাণ করতে হবে আমাকেই । সে দায়িত্ব আমার । তিনি কেন আগে থেকে অস্বীকার করছেন ?"
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, "2017 সাল থেকে 2025 সাল পর্যন্ত নাটক করে যাচ্ছে । আমার এখন 69 বছর বয়স ৷ আমি শান্তিতে বাঁচতে চাই ৷" কল্যাণের এই চাঁছাছোলা আক্রমণের জবাবে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বাচোয়াত ফের বলেন, "আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারা দেখিয়ে বিচ্ছেদের পক্ষে যুক্তি দেওয়ার কিছু নেই । আমরা ইংল্যান্ডে থাকি না । এটা আবেগ অনুভূতির বিষয় । 20-25 বছর একসঙ্গে থাকার পর হঠাৎ মনে হল যাও আর দরকার নেই । এটা এখানে এখনও অন্তত হয় না ।"