কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি: প্রসূন দে নিজের স্ত্রী রোমি ও বউদি সুদেষ্ণাকে খুন করেছে ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এমনই নাকি দাবি করেছেন দাদা প্রণয় দে ৷ কিন্তু কেন এই হত্যাকাণ্ড, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি । তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রণয়ের এই দাবির সত্যতা কতখানি, তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷
অন্যদিকে বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন প্রণয় দে ও তাঁর নাবালক ছেলে ৷ তাই বাইপাসের ধারে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন ট্যাংরা-কাণ্ডে আহত হওয়া ওই দু'জন ৷ হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রণয় ও তাঁর ছেলেকে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । সেখানেই তাঁদের বাকি চিকিৎসা হবে ৷
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, "প্রণয় ও ওই নাবালক এখন সুস্থ । তাদের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷"
তবে প্রণয় বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেও এখনই ছাড়া পাচ্ছেন না প্রসূন দে । তাঁকে শুক্রবারই আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাঁকে জেনারেল বেডে দেওয়া সম্ভব হয়নি । তাই তাঁর আপাতত বেসরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা চলবে ৷
প্রয়োজনে এদিনও হাসপাতালে গিয়ে প্রণয় দে ও প্রসূন দে'কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কলকাতা পুলিশ ৷ ট্যাংরা-কাণ্ডে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়েছে তদন্তকারীদের কাছে । তা হল, রোমি, সুদেষ্ণা, ও নাবালিকাকে কে বা কারা খুন করল ? কেন ঘটনার আগের দিন থেকে গাড়ি চালক, সুইপার, পুরোহিতকে আসতে বারণ করা হয়? বাড়িতে 20টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও কেন প্রত্যেকটি নিস্ক্রিয় ছিল ? কেন তাদেরকে এরকম একটি চরম পদক্ষেপ নিতে হল ?
বাজারে এত কোটি কোটি টাকা দেনা শুধুমাত্র কি দেখানোর জন্য ? আদতে খুনের জন্য অন্য মোটিভ কাজ করছিল ? বুধবার দেহ উদ্ধারের ঘটানোর আগে কেন একাধিকবার সপরিবারে জীবন শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছিল ? এই প্রকারের হাজার হাজার উত্তর খোঁজার জন্য ইতিমধ্যেই দে পরিবারের দুই ভাইকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ।
উল্লেখ্য, 19 ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বুধবার সকালে ট্যাংরার একটি বাড়ির তিনতলা থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার হয় ৷ ওই তিনজনের মধ্যে দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও একজন কিশোরী ছিল ৷ নিহত প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হলেন, রোমি দে ও সুদেষ্ণা দে ৷ পুলিশ যখন ট্যাংরার বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার করছে, ঠিক একই সময় বাইপাসের ধারে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে ৷ তাতে তিনজন আহত হয় ৷ পরে জানা যায়, ওই তিনজন ট্যাংরার দে পরিবারের সদস্য ৷
তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ গাড়ি দুর্ঘটনার সঙ্গে দেহ উদ্ধারের ঘটনার যোগ খুঁজে পায় ৷ হাসপাতালে গিয়ে আহত দুই ভাই প্রণয় দে ও প্রসূন দে'কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ তাতে তাঁরা বারবার দাবি করেন, তাঁরা মরার উদ্দেশ্যেই রাস্তার ধারের পিলারে গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মেরেছিলেন ৷ এমনকি বাড়ির তিন মহিলাও নিজেদের জীবন শেষ করার জন্য হাতের শিরা কেটেছিল বলে দুই ভাই দাবি করেন ৷ যদিও তাঁদের কথায় অনেক অসঙ্গতি মেলে বলে দাবি করে পুলিশ ৷ পরে খুনের মামলা রুজু হয় ৷ ময়নাতদন্তে রিপোর্টে খুনের দুই বধূ ও নাবালিকাকে ঠান্ডা মাথায় খুনের ইঙ্গিত মেলে ৷