পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সর্বদলীয় বৈঠকে নির্ভুল ভোটার তালিকার পক্ষে সওয়াল রাজনৈতিক দলগুলির

রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে সর্বদলীয় বৈঠকে নির্ভুল ভোটার তালিকার পক্ষে সওয়াল করল শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷

ETV BHARAT
রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে সর্বদলীয় বৈঠক (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 11, 2024, 8:12 PM IST

কলকাতা, 11 নভেম্বর: নির্ভুল ভোটার তালিকার পক্ষে সওয়াল করল সবক'টি রাজনৈতিক দল । আজ রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে হয় সর্বদলীয় বৈঠক ৷ সেখানেই ভুয়ো ভোটার সরিয়ে নির্ভুল ভোটার তালিকা করার উপরেই জোর দেয় রাজনৈতিক দলগুলি ।

আগামী 13 নভেম্বর রাজ্যের ছয়টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হতে চলেছে । আগামিকাল প্রকাশ হচ্ছে খসড়া ভোটার তালিকা । আর আগামী 5 জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে । তার আগে আজ রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে ভোটার তালিকা নিয়ে রাজ্যের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির কী কী বক্তব্য রয়েছে, সেই নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছিল ।

প্রদেশ কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত হন । বামেদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন কল্লোল মজুমদার ও পলাশ দাস । কল্লোল মজুমদার এদিন বলেন যে, আগামী একমাস বেলা 11টা থেকে বিকেল 4টে পর্যন্ত যাতে সমস্ত কেন্দ্রে ব্লক লেভেল অফিসার বা বিএলও-রা উপস্থিত থাকেন, সেই বিষয়ে নজর দিতে হবে । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মীদের অভাব থাকে কিংবা তাঁরা সময় মতো উপস্থিত থাকেন না । এছাড়া বারবার বলা সত্ত্বেও বিএলও-রা নাম তোলার ক্ষেত্রে ঢিলেমি দেখাচ্ছেন । এছাড়াও প্রতি শনিবার ও রবিবার বিএলও-দের বৈঠক করার কথা কিন্তু সেটা হয় না । এই বিষয়গুলির দিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নজর দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন বাম প্রতিনিধিরা ।

এছাড়াও বামেদের অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও বেসরকারি সংস্থা, ক্লাব কিংবা এনজিও ভবনে পোলিং বুথ করা হচ্ছে । শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় । এছাড়াও একটা বড় কলেজ বিল্ডিং বা কোনও বড় ভবনে পাঁচ থেকে ছটা পোলিং বুথ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে জানানো হয় কমিশনে ৷ তারা আরও বলে যে, ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তি বা অনুপস্থিত ভোটারদের নাম সরানোর বিষয়টি কলকাতায় এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় 30 শতাংশ হলেও বেশিরভাগ জায়গায় এই কাজটা করাই হচ্ছে না । ভুয়ো ভোটারদের তালিকায় রেখেই ভোট করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বামেরা ।

অন্যদিকে পলাশ দাস এদিন বিএলও-দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তিনি বলেন যে, কাদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সেটা দেখা দরকার । কারণ বিএলও যদি কোনও রাজনৈতিক দলের হন, সে ক্ষেত্রে তালিকায় ভুয়ো নাম রাখার জন্য তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন ৷

এদিন বিজেপির পক্ষ থেকে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন যে, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তরফে প্রায় 17 লক্ষ ভুয়ো ভোটারের তালিকা নির্বাচন কমিশনের অফিসে দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তখন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সেই সবক'টি তালিকা খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন । তাই আগামিকাল যখন খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে, তখনই বোঝা যাবে যে সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে কি না । বিজেপির পক্ষ থেকে আজ বলা হয় যে, সমস্ত বিএলও-দের যদি একই দিনে শুনানির জন্য ডাকা হয় তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও তালিকায় ভুয়ো ভোটারদের বিষয়টি পরিষ্কার হবে ।

পাশাপাশি বিজেপি আজ বিএলও-দের গুনগত মান নিয়েও প্রশ্ন তোলে । আগে সরকারি কর্মচারীরাও বিএলও হতেন ৷ কিন্তু এখন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা আশা কর্মীদেরও বিএলও করা হয় । তাই বহু ক্ষেত্রে বিএলও তৃণমূলের সম্প্রসারণ মাত্র বলে দাবি করে বিজেপি । তাদের অভিযোগ, সেই বিএলও-রা তৃণমূলের কর্মীর মতোই আচরণ করেন । তাই সরকারি কর্মীদেরই একমাত্র বিএলও করা হোক বলে দাবি করেছে বিজেপি ৷ এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদেরও যাতে বিএলও হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়টিও দেখার কথা বলা হয়েছে ।

পাশাপাশি আজ জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় আরও দাবি করেন যে, বাংলাদেশের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী যে আট থেকে নটি জেলা রয়েছে, সেইসব জায়গায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ভোটার ৷ আর এই বর্ধিত ভোটাররাই হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি এবং ভুয়ো ভোটার । তাঁর এই অভিযোগের জবাব দিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদার এদিন বলেছেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ৷

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়প্রকাশ মজুমদার ছাড়াও সুব্রত বকসি এদিনের বৈঠকে যোগ দেন ৷ বৈঠক শেষে জয়প্রকাশ মজুমদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন যে, ভারতীয় সংবিধান মেনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা ৷ তাই আজ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি করার আবেদন রাখা হয়েছে কমিশনের সামনে । এছাড়াও তিনি বলেন, যে সমস্ত অনাথ আশ্রমে মানুষজন থাকেন কিংবা বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি যাঁরা নাম তুলতে আসতে পারছেন না, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে যেন জাতীয় নির্বাচন কমিশন পৌঁছে গিয়ে তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় তোলার ব্যবস্থা করেন ।

তাঁর কথায়, "আজ এপিক কার্ড গর্বের বস্তু । সেটা হয়েছে সিএম-এর আন্দোলনের জন্য । তাই আমরা মনে করি এটা সিইও-র দায়িত্ব যাতে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি হয় ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details