ETV Bharat / state

মালদায় তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত 5, উদ্ধার সুপারির 10 লাখ টাকা, পুলিশের নজরে বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল - TRINAMOOL LEADER MURDER CASE

পুলিশের দাবি, দুলাল সরকারকে খুনের আগে অন্তত 10 দিন রেইকি করে দুষ্কৃতীরা ৷ কার্নিভাল শেষে ঢিলেঢালা পুলিশি ব্যবস্থার সুযোগেই খুন করা হয় ৷

Trinamool Leader Murder Case
মালদায় তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত 5, উদ্ধার সুপারির 10 লাখ টাকা, পুলিশের নজরে বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 3, 2025, 3:35 PM IST

Updated : Jan 3, 2025, 6:38 PM IST

মালদা, 3 জানুয়ারি: তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনে সুপারি কিলাররাই জড়িত, বৃহস্পতি থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনকে ধরার পর এমনটাই মনে করছে পুলিশ ৷ যে পাঁচজনকে ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন বিহারের বাসিন্দা ৷ বাকি তিনজন মালদা জেলারই ৷

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতরা স্বীকার করে নিয়েছে যে 12 লাখ টাকায় তাঁদের সঙ্গে খুনের ডিল হয়েছিল ৷ তবে কে বা কারা এই খুনের সুপারি দিয়েছিল, তা তাঁদের জানা নেই ৷ তাঁরা শুধু ভাড়াটে খুনি হিসাবে নিজেদের কাজ করেছেন ৷

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ডিলের 12 লাখ টাকার মধ্যে 10 লাখ টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে ৷ তবে কে বা কারা খুনের পরিকল্পনায় জড়িত, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি ৷ এক্ষেত্রে পুলিশের রাডারে উঠে আসছে একাধিক নাম ৷ তার মধ্যে কিছু রাঘব বোয়ালের নামও রয়েছে বলে খবর ৷

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার পরই সিসিটিভির ফুটেজ প্রতিটি থানায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ তাতেই ধরা পড়ে দুই দুষ্কৃতী ৷ জানা গিয়েছে, তাঁরা দুলালবাবুকে খুন করার পর কাছেই রেলগেট পেরিয়ে পাড়ার রাস্তা ধরে রথবাড়ি এলাকায় ওঠেন ৷ রেলগেটের কাছে একজন নিজের জ্যাকেট ও জুতো খুলে ফেলেন ৷ রথবাড়ি পেরিয়ে মানিকচকের দিকে যাওয়ার পথে বাগবাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গলের মধ্যে নিজেদের মোটর বাইকটিও ফেলে দেন ৷ সেখান থেকে বাস ধরে তাঁরা মানিকচক চলে যান ৷ উদ্দেশ্য ছিল, গঙ্গা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়া ৷ গঙ্গার ঘাটেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ৷

পরে তাঁদের ফেলে যাওয়া বাইক, জুতো ও জ্যাকেট উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ দুলালবাবুর গাড়ির চালক যে কোম্পানির বাইকের কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সেই কোম্পানিরই মোটর বাইক উদ্ধার করা হয়েছে ৷ গ্রেফতার হওয়া দুই দুষ্কৃতীর নাম মহম্মদ সামি আখতার ও টিংকু ঘোষ ৷ 20 বছরের সামির বাড়ি বিহারের কাটিহার জেলার কানহারিয়া এলাকায় ৷ টিংকু মালদা শহর সংলগ্ন যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাবগাছি এলাকার বাসিন্দা ৷

তাঁদের জেরা করে বিহার থেকে আরও এক দুষ্কৃতীকে আটক করা হয়েছে ৷ এদিন তাঁকে বিহার থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে ৷ দুপুরে তাঁকে নিয়ে ইংরেজবাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পুলিশ ৷ এছাড়াও মালদা শহরের মহানন্দা পল্লি ও কুলদীপ মিশ্র কলোনির আরও দুই যুবককে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের তরফ থেকে জানা গিয়েছে ৷

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত 8টা নাগাদ দুলালবাবুর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয় ৷ তাঁর শরীরে মোট সাতটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ৷ তিনটি গুলি মাথার পিছনে একই জায়গায় করা হয়েছিল ৷ একটি গুলি উদ্ধার হয় পিঠের উপরের অংশ থেকে ৷ দু’টি গুলির ছিদ্র পিঠের নীচের অংশে পাওয়া গেলেও কার্তুজ পাওয়া যায়নি ৷ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের অনুমান, ওই দু’টি গুলি শরীরে লাগার পর অন্যদিকে ছিটকে গেলেও যেতে পারে ৷

কিন্তু কেন এই খুনের পরিকল্পনা ? এর পিছনে কি রাজনীতি নাকি টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে ? জেলা পুলিশের অন্যতম এক শীর্ষকর্তার কথায়, “কিছুদিন ধরেই দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন দুলালবাবু ৷ দলের সহ-সভাপতি হলেও তাঁর বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব পেত না ৷ বর্তমানে শুধুমাত্র একজন কাউন্সিলর ছাড়া তাঁর কোনও প্রশাসনিক পদও ছিল না ৷ কিন্তু ভবানী মোড় থেকে শুরু করে সুকান্তপল্লি পর্যন্ত তিনি ছিলেন শেষ কথা ৷’’

ওই পুলিশ কর্তার আরও বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল আশাতীত৷ লকডাউনের সময় কয়েক মাস বিনা পয়সায় গরিব মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খুলেছিলেন ৷ এখনও গরিব মানুষের জন্য তাঁর কম মূল্যের ক্যান্টিন চলে ৷ সম্প্রতি জমি ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন ৷ এতে তাঁর গোপন শত্রু তৈরি হয়েছিল অনেক ৷ কিছুদিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কেও চিড় ধরেছিল ৷ দু’জন আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন ৷ তদন্তে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷”

ওই পুলিশকর্তা আরও বলেন, “দুলালবাবুকে খুনের পরিকল্পনা বেশ কিছুদিন আগেই করা হয়েছিল ৷ 2 জানুয়ারি যে তাঁর উপর হামলা চালানো হবে, সেটাও দুষ্কৃতীদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল ৷ 25 ডিসেম্বর থেকে 1 জানুয়ারি পর্যন্ত ভবানী মোড়ে বর্ষশেষের কার্নিভালের আয়োজন করেছিলেন দুলালবাবু ৷ অন্যদিকে ডিএসএ সংলগ্ন ময়দানে ওই সাতদিন একই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ইংরেজবাজার পুরসভা ৷ দুই কার্নিভালে সাতদিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল ৷ কার্নিভাল শেষের পর পুলিশকর্মীরাও একটু রিল্যাক্স মুডে ছিলেন ৷ তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা ৷’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘খুনের আগে অন্তত 10 দিন তাঁরা মালদা শহরে ঘাঁটি গেড়ে রেইকি চালিয়েছিলেন ৷ দুলালবাবুর প্রতিদিনের গতিবিধির উপর নজর রাখতেন ৷ তিনি কখন নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরোন, কোন রাস্তা ধরে প্লাইউড কারখানায় যান, রাস্তায় কোথায় কোথায় দাঁড়ান, সবকিছুই ছিল দুষ্কৃতীদের নখদর্পণে ৷ সেই অনুযায়ী তাদের খুনের পরিকল্পনা সার্থক হয় ৷”

শুক্রবার ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী আবারও বলেন, “টাকা-পয়সা দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে ৷ শুনেছি, এই খুনে 10 লাখ টাকার ডিল হয়েছিল ৷ দুষ্কৃতীরা মোট ছ’জন ছিল ৷ পুলিশ পাঁচজনকে ধরেছে ৷ একজন পালিয়ে রয়েছে ৷ তবে কেন এই খুন, তা পুলিশ দেখছে ৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন ৷ তাঁর নির্দেশমতোই কাজ হচ্ছে ৷”

অন্যদিকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলেছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে ৷ এর পিছনে যেই থাকুক না কেন, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে ৷ তবে এটা সুপারি কিলিং ৷ বিহারের দুষ্কৃতীরাও এই ঘটনায় যুক্ত ৷ কিন্তু বিহার থেকে এসে তারা গুলি চালাল কেন ? এর উত্তর পুলিশকে বের করতে হবে ৷ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ৷ আমি শুনেছি, এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে ৷”

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মালদার ঘটনা উদ্বেগজনক ৷ খারাপ ঘটনা ৷ কারা কী জন্য করল, সেগুলো পুলিশ দেখছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট কড়া মনোভাব নিয়ে পুলিশকে বলেছেন ৷’’ তবে এই ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের কোনও অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কুণাল ঘোষ ৷

তবে এনিয়ে এখনও পর্যন্ত জেলা পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷

মালদা, 3 জানুয়ারি: তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনে সুপারি কিলাররাই জড়িত, বৃহস্পতি থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনকে ধরার পর এমনটাই মনে করছে পুলিশ ৷ যে পাঁচজনকে ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন বিহারের বাসিন্দা ৷ বাকি তিনজন মালদা জেলারই ৷

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতরা স্বীকার করে নিয়েছে যে 12 লাখ টাকায় তাঁদের সঙ্গে খুনের ডিল হয়েছিল ৷ তবে কে বা কারা এই খুনের সুপারি দিয়েছিল, তা তাঁদের জানা নেই ৷ তাঁরা শুধু ভাড়াটে খুনি হিসাবে নিজেদের কাজ করেছেন ৷

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ডিলের 12 লাখ টাকার মধ্যে 10 লাখ টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে ৷ তবে কে বা কারা খুনের পরিকল্পনায় জড়িত, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি ৷ এক্ষেত্রে পুলিশের রাডারে উঠে আসছে একাধিক নাম ৷ তার মধ্যে কিছু রাঘব বোয়ালের নামও রয়েছে বলে খবর ৷

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার পরই সিসিটিভির ফুটেজ প্রতিটি থানায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ তাতেই ধরা পড়ে দুই দুষ্কৃতী ৷ জানা গিয়েছে, তাঁরা দুলালবাবুকে খুন করার পর কাছেই রেলগেট পেরিয়ে পাড়ার রাস্তা ধরে রথবাড়ি এলাকায় ওঠেন ৷ রেলগেটের কাছে একজন নিজের জ্যাকেট ও জুতো খুলে ফেলেন ৷ রথবাড়ি পেরিয়ে মানিকচকের দিকে যাওয়ার পথে বাগবাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গলের মধ্যে নিজেদের মোটর বাইকটিও ফেলে দেন ৷ সেখান থেকে বাস ধরে তাঁরা মানিকচক চলে যান ৷ উদ্দেশ্য ছিল, গঙ্গা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়া ৷ গঙ্গার ঘাটেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ৷

পরে তাঁদের ফেলে যাওয়া বাইক, জুতো ও জ্যাকেট উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ দুলালবাবুর গাড়ির চালক যে কোম্পানির বাইকের কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সেই কোম্পানিরই মোটর বাইক উদ্ধার করা হয়েছে ৷ গ্রেফতার হওয়া দুই দুষ্কৃতীর নাম মহম্মদ সামি আখতার ও টিংকু ঘোষ ৷ 20 বছরের সামির বাড়ি বিহারের কাটিহার জেলার কানহারিয়া এলাকায় ৷ টিংকু মালদা শহর সংলগ্ন যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাবগাছি এলাকার বাসিন্দা ৷

তাঁদের জেরা করে বিহার থেকে আরও এক দুষ্কৃতীকে আটক করা হয়েছে ৷ এদিন তাঁকে বিহার থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে ৷ দুপুরে তাঁকে নিয়ে ইংরেজবাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পুলিশ ৷ এছাড়াও মালদা শহরের মহানন্দা পল্লি ও কুলদীপ মিশ্র কলোনির আরও দুই যুবককে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের তরফ থেকে জানা গিয়েছে ৷

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত 8টা নাগাদ দুলালবাবুর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয় ৷ তাঁর শরীরে মোট সাতটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ৷ তিনটি গুলি মাথার পিছনে একই জায়গায় করা হয়েছিল ৷ একটি গুলি উদ্ধার হয় পিঠের উপরের অংশ থেকে ৷ দু’টি গুলির ছিদ্র পিঠের নীচের অংশে পাওয়া গেলেও কার্তুজ পাওয়া যায়নি ৷ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের অনুমান, ওই দু’টি গুলি শরীরে লাগার পর অন্যদিকে ছিটকে গেলেও যেতে পারে ৷

কিন্তু কেন এই খুনের পরিকল্পনা ? এর পিছনে কি রাজনীতি নাকি টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে ? জেলা পুলিশের অন্যতম এক শীর্ষকর্তার কথায়, “কিছুদিন ধরেই দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন দুলালবাবু ৷ দলের সহ-সভাপতি হলেও তাঁর বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব পেত না ৷ বর্তমানে শুধুমাত্র একজন কাউন্সিলর ছাড়া তাঁর কোনও প্রশাসনিক পদও ছিল না ৷ কিন্তু ভবানী মোড় থেকে শুরু করে সুকান্তপল্লি পর্যন্ত তিনি ছিলেন শেষ কথা ৷’’

ওই পুলিশ কর্তার আরও বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল আশাতীত৷ লকডাউনের সময় কয়েক মাস বিনা পয়সায় গরিব মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খুলেছিলেন ৷ এখনও গরিব মানুষের জন্য তাঁর কম মূল্যের ক্যান্টিন চলে ৷ সম্প্রতি জমি ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন ৷ এতে তাঁর গোপন শত্রু তৈরি হয়েছিল অনেক ৷ কিছুদিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কেও চিড় ধরেছিল ৷ দু’জন আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন ৷ তদন্তে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷”

ওই পুলিশকর্তা আরও বলেন, “দুলালবাবুকে খুনের পরিকল্পনা বেশ কিছুদিন আগেই করা হয়েছিল ৷ 2 জানুয়ারি যে তাঁর উপর হামলা চালানো হবে, সেটাও দুষ্কৃতীদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল ৷ 25 ডিসেম্বর থেকে 1 জানুয়ারি পর্যন্ত ভবানী মোড়ে বর্ষশেষের কার্নিভালের আয়োজন করেছিলেন দুলালবাবু ৷ অন্যদিকে ডিএসএ সংলগ্ন ময়দানে ওই সাতদিন একই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ইংরেজবাজার পুরসভা ৷ দুই কার্নিভালে সাতদিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল ৷ কার্নিভাল শেষের পর পুলিশকর্মীরাও একটু রিল্যাক্স মুডে ছিলেন ৷ তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা ৷’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘খুনের আগে অন্তত 10 দিন তাঁরা মালদা শহরে ঘাঁটি গেড়ে রেইকি চালিয়েছিলেন ৷ দুলালবাবুর প্রতিদিনের গতিবিধির উপর নজর রাখতেন ৷ তিনি কখন নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরোন, কোন রাস্তা ধরে প্লাইউড কারখানায় যান, রাস্তায় কোথায় কোথায় দাঁড়ান, সবকিছুই ছিল দুষ্কৃতীদের নখদর্পণে ৷ সেই অনুযায়ী তাদের খুনের পরিকল্পনা সার্থক হয় ৷”

শুক্রবার ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী আবারও বলেন, “টাকা-পয়সা দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে ৷ শুনেছি, এই খুনে 10 লাখ টাকার ডিল হয়েছিল ৷ দুষ্কৃতীরা মোট ছ’জন ছিল ৷ পুলিশ পাঁচজনকে ধরেছে ৷ একজন পালিয়ে রয়েছে ৷ তবে কেন এই খুন, তা পুলিশ দেখছে ৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন ৷ তাঁর নির্দেশমতোই কাজ হচ্ছে ৷”

অন্যদিকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলেছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে ৷ এর পিছনে যেই থাকুক না কেন, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে ৷ তবে এটা সুপারি কিলিং ৷ বিহারের দুষ্কৃতীরাও এই ঘটনায় যুক্ত ৷ কিন্তু বিহার থেকে এসে তারা গুলি চালাল কেন ? এর উত্তর পুলিশকে বের করতে হবে ৷ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ৷ আমি শুনেছি, এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে ৷”

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মালদার ঘটনা উদ্বেগজনক ৷ খারাপ ঘটনা ৷ কারা কী জন্য করল, সেগুলো পুলিশ দেখছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট কড়া মনোভাব নিয়ে পুলিশকে বলেছেন ৷’’ তবে এই ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের কোনও অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কুণাল ঘোষ ৷

তবে এনিয়ে এখনও পর্যন্ত জেলা পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷

Last Updated : Jan 3, 2025, 6:38 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.