কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: পাপের পাঁক থেকে কে না মুক্তি চায় ? সেই মুক্তির লোভকে হাতিয়ার করে গয়না হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল কলকাতা শহরে ৷ একটি বা দু’টি নয়, কলকাতার বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় এভাবে বহু মহিলার গয়না হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ তদন্তে নেমে আপাতত 11 জন ভুয়ো তান্ত্রিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ ধৃতদের জেরা করে এই চক্রে আরও কেউ আছে কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷
অভিযোগ কী: লাল রক্ত-জবা রংয়ের পোশাক পরিহিত কয়েকজন তান্ত্রিক প্রথমে কোনও বাড়িতে প্রবেশ করতেন ৷ দিনের যে সময় বাড়িতে শুধু মহিলারা থাকেন, সেই সময়ই তাঁরা হাজির হতেন ৷ তার পর নানা অছিলায় সংশ্লিষ্ট বাড়ির মহিলাদের অভিশাপ দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতেন ৷ এর পর আসরে নামত ওই তান্ত্রিকদের আরেকটি দল ৷ সেই দলের সদস্যরা ওই বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের বোঝাতেন অভিশাপ থেকে মুক্ত করার উপায় তাঁদের কাছে আছে ৷
উপায় হিসেবে তাঁরা বাড়ির মহিলাদের গয়না শোধন করার কথা বলতেন ৷ কখনও মহিলারদের গলার হার বা নেকলেস কিংবা আলমারিতে থাকা অন্য গয়না আনতে বলতেন ৷ তার পর বলতেন শোধন প্রক্রিয়া ওই মহিলারা দেখলে পাপমুক্তি ঘটবে না ৷ তাই ওই মহিলাদের পিছনে ঘুরে দাঁড়াতে বলতেন ওই তান্ত্রিকরা ৷ মহিলারা পিছনে ঘুরলেই সুযোগ বুঝে গয়না নিয়ে চম্পট দিতেন তাঁরা ৷ তাঁদের সঙ্গে বাইক থাকত৷ সেই বাইকেই দ্রুত উধাও হয়ে যেতেন তাঁরা ৷
পুলিশ কী বলছে:কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই আমরা বিভিন্ন থানা মারফত খবর পাচ্ছিলাম যে মুক্তি দেওয়ার জন্য মহিলাদের নেকলেস হাতিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে । ট্যাংরা, তপসিয়া, কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান থানায় এই ধরনের প্রতারণার মামলা রজু হয় । এরপরই তদন্ত নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । তদন্ত নেমে জানা যায় যে প্রত্যেকটি ঘটনার মোডাস অপরেন্ডি বা অপরাধের ধরন প্রায় এক ।’’
কিন্তু কোনোভাবেই ‘অপরাধী’দের ধরতে পারছিল না পুলিশ ৷ এই পরিস্থিতিতে ট্যাংরার একটি আবাসনে একইভাবে গয়না লুটের ঘটনা ঘটে ৷ ওই আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজে তান্ত্রিকদের চেহারা স্পষ্ট হয় ৷ তার পর কাঁকুড়গাছি, শিয়ালদা ও ট্যাংরা-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এক এক করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে শুরু করে পুলিশ ৷ এখনও পর্যন্ত 11 জনকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে যে এরা সকলেই উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ৷ কলকাতায় এসেছিল প্রতারণার উদ্দেশ্য়ে ৷ সেই উদ্দেশ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছিল ৷ তাদের কাছে থাকা বাইকগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট ছিল ৷ ফলে সেগুলি আসল নম্বর নাকি নকল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷ পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সেটাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন ৷
আরও পড়ুন:
- কমোডে ঢোকানো মুখ, নিজাম প্যালেস থেকে উদ্ধার কলকাতা পুলিশের কর্মীর দেহ
- সাইবার প্রতারণায় মৃত্যু তরুণীর, লাদাখ পুলিশের জালে কলকাতার যুবক
- বাড়ি সংস্কারের কাজ না দেওয়ায় প্রবাসী বাঙালির নাক ফাটালেন দাপুটে প্রমোটার