কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: অ্যাকশন ছাড়া কমার্শিয়াল সিনেমা আলুবিহীন বিরিয়ানির মতো খানিকটা। আর তাই কমার্শিয়াল ছবিতে যত্ন নিয়ে অ্যাকশন সিকোয়েন্স রাখেন পরিচালকেরা। অ্যাকশনের কারিকুরিতেও ছবি হিট হয়, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভিলেন অ্যাকশন করেন, হিরো অ্যাকশন করেন, পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্ররাও অ্যাকশন করেন। দিন দিন বদলাচ্ছে এর ধরন। কোথাও কি দক্ষিণী সিনেমার প্রভাব পড়ছে বাংলায়? নাকি বাজেটের কথা ভেবে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা চলছে? কী বলছেন চলচ্চিত্র পরিচালক থেকে অভিনেতা এবং অ্যাকশন ডিরেক্টররা? বছর শেষে খোঁজ নিল ইটিভি ভারত।
চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, "অ্যাকশনের কায়দাগুলো আমাদের এখানকার ফাইট মাস্টাররা কেউ মুম্বই থেকে কেউ সাউথ থেকে কেউ আবার বিদেশ থেকেও নিয়ে আসছেন। কোনও বাংলা ছবির অ্যাকশনে কোন স্টাইলটা দেখানো হবে সেটা নির্ভর করে একজন পরিচালক কী চাইছেন এবং ছবিটার কনটেন্ট কী বলছে। সোজা কথায় যে যেমন খরচ করবে তেমন হাইট হবে। তবে, দক্ষিণের মতো বাংলা সিনেমা খরচ করতে পারবে না। অত বাজেট আমাদের থাকে না। বাংলা ছোট আকারে করতে পারে ৷ এখন যদি কেউ হলে 10 কোটি বাজেটের অ্যাকশন ফিল্ম বানাবে তাতে পয়সা উঠবে না জীবনেও। পয়সা তুলতে বাইরে সেই সিনেমা দেখাতে গেলেও সমস্যা আছে। লোকে কেন দক্ষিণী ছবি, হিন্দি ছবির ফাইট না দেখে আমাদেরটা দেখবে? "
ফাইট মাস্টার তথা অ্যাকশন ডিরেক্টর চিত্ত কবিরাজ বাংলা, হিন্দি-সহ দক্ষিণী ছবিতে ফাইট সিনে বহু অভিনেতার ডামি হিসেবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর মতে, "অবশ্যই দক্ষিণী ছবির প্রভাব আছে। কপি করারও চেষ্টা হয়। তবে, 100 শতাংশ নয়। বড়জোর 5 শতাংশ। কেন না ওদের বাজেটের সঙ্গে আমাদের বাজেটের আকাশ পাতাল তফাৎ। আমরা সবসময়েই অনুসরণ করি দক্ষিণের ছবিতে কীভাবে ফাইট সিন হচ্ছে ৷ শুধু বাংলা সিনেমা নয়, অন্য ভাষার সিনেমাও বাংলাকে ফলো করে। বলিউড হলিউডকে ফলো করে সবসময়।"
রোম্যান্টিক হিরোর পাশাপাশি যাঁর সমান দক্ষতা অ্যাকশনে তিনি অঙ্কুশ হাজরা। এই প্রসঙ্গে তাঁর মত, "অবশ্যই পড়ছে দক্ষিণী প্রভাব। তবে, ওদের বাজেটের সঙ্গে আমাদের বাজেটের তফাৎ আছে। হতেও তো পারে বাংলা সিনেমাও একদিন দক্ষিণের মতো বাজেট নিয়ে ছবি বানাবে।"
অঙ্কুশ এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, "মানুষ যেটা দেখতে ভালোবাসে সেটাই দিতে হবে সিনেমাকে। সবথেকে বড় কথা অ্যাকশন ফিল্ম হওয়া খুব দরকার। অ্যাকশন অনেক বেশি স্টার ক্রিয়েট করে। অনেক টেকনিশিয়ান যুক্ত হন। সবদিক থেকে ইন্ডাস্ট্রির ভালো হয় তাতে। সবাই এখন চায় একটা হিরোইজম ছবি আসুক। সোজা কথা, হিরো সেলিব্রেট করাটা যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার। সব স্ক্রিপ্ট অসাধারণ হয় না ৷ সেই সময়ে একজন স্টারই প্রযোজকের ঘরে টাকা তুলে দেন। তাই ভালো ছবি, ভালো অ্যাকশন দরকার।"
খাদান'-এ মাখনের অ্যাকশন ইতিমধ্যেই হিট। দেবের বিপরীতে মাখন থুড়ি জন ভট্টাচার্যর অ্যাকশন আলাদা নজর কেড়েছে। জনের কথায়, "অ্যাকশন সিকোয়েন্স ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। দর্শককে আনন্দ দিলেও কাজটা সহজ নয় ৷ একটা সময় অবধি অ্যাকশন ডিরেক্টর দেখিয়ে দেবে। বাকিটা অভিনেতাকেই করতে হবে। আমি মনে করি না বাংলা সিনেমার অ্যাকশনে দক্ষিণী প্রভাব পড়েছে। এভাবে আমি আলাদা করে বলব না। ভারতীয় সিনেমার দর্শক যেটা পছন্দ করছে সেটাই দেখানো হচ্ছে ৷ সেরকমভাবেই তৈরি করা হচ্ছে।"