পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

অস্তিত্বহীন আইন উল্লেখ করে বস্তি উচ্ছেদ ইস্যুতে ডিভিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি কীর্তি আজাদের - DVC Land Recovery - DVC LAND RECOVERY

DVC Land Recovery: ডিভিসি কর্তৃপক্ষের জবরদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার নিয়ে এবার চিঠি দিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের নবনির্বাচিত সাংসদ কীর্তি আজাদ ৷ যা নিয়ে তৈরি হয়ে নয়া আইনী জটিলতা ৷ আইনজীবীর মতে, সাংসদ যে আইনের জোরে চিঠি দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি’র চেয়ারম্যানকে, তা বহুদিন আগেই অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ৷

ETV BHARAT
তৃণমূলের সাংসদ কীর্তি আজাদ (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 8, 2024, 10:55 PM IST

দুর্গাপুর, 8 জুন: 2005 সালে বাতিল হয়ে যাওয়া আইন উল্লেখ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি-কে চিঠি পাঠালেন তৃণমূলের নবনির্বাচিত সাংসদ কীর্তি আজাদ ৷ আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ গত কয়েকবছর ধরে ডিভিসি তাদের দুর্গাপুরের ডিটিপিএসের জবরদখল হয়ে থাকা জমিতে উচ্ছেদের কাজ চালাচ্ছে ৷ নির্বাচনে জিতে, সেই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ডিভিসি চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কীর্তি আজাদ ৷ যেখানে 1971 সালের পুরনো আইন উল্লেখ করে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন দিয়ে, তবে জমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ৷

তৃণমূলের সাংসদ কীর্তি আজাদের ডিভিসি চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠি নিয়ে বিতর্ক ৷ (ইটিভি ভারত)

কিন্তু, দুর্গাপুরের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত সাংসদ সুপ্রিম কোর্টের যে রায়কে উল্লেখ করে ওই চিঠি দিয়েছেন, বর্তমানে তার কোনও অস্তিত্ব নেই ৷ 2005 সালে ওই আইন বাতিল হয়ে যায় এবং 2019 সালে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইনে সংশোধন আনা হয় ৷ ফলে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর, শুরুতেই কীর্তি আদাজ ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন বলেই জানাচ্ছেন ওই আইনজীবী ৷ তাঁর কথায়, "মাননীয় সাংসদ সুপ্রিম কোর্টের যে রায় দেখিয়ে এই চিঠি দিয়েছেন ৷ সেই আইন ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৷ উচ্ছেদ নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে ৷"

কীর্তি আজাদ 1954 সালের জবরদখলকারীদের পুনর্বাসনের দাবিকে সামনে রেখে যে আইনের কথা উল্লেখ করেছেন, তা কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের দুর্গাপুরে ডিটিপিএস বস্তি উচ্ছেদের ক্ষেত্রে ? জবাবে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "মাননীয় সাংসদ যে আইনটির কথা বলেছেন সেটি বাতিল হয়েছে 2005 সালে ৷ এই বিষয়ে 1971 সালের যে আইন ছিল, তা 2019 সালের সংশোধিত হয় ৷ তার চার নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, এস্টেট অফিসার জবর দখলকারীকে নোটিশ পাঠাতে পারেন৷ জবরদখলকারীর পক্ষ থেকে পাঠানো উত্তর যদি এস্টেট অফিসারের কাছে সন্তোষজনক বলে মনে না হয়, তাহলে পাঁচ নম্বর ধারা অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হতে পারে ৷ সে ক্ষেত্রে আইনের 15 নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতের আর কোনও আদালতে সেই মামলা গৃহীত হবে না ৷"

ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে বর্ধমান-দুর্গাপুরের নবীন সাংসদকে আইনের এই ধারা সম্পর্কে কেন বিস্তারিত তথ্য না দিয়েই, একটি চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হল ডিভিসির চেয়ারম্যানকে ? উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে বিজেপির সাংসদ থাকাকালীন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন ৷ বলেছিলেন, পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করতে এলে বুলডোজারের সামনে দাঁড়াবেন ৷ কিন্তু, উচ্ছেদ শুরু হতেই এলাকায় যাওয়া তো দুর, বদলে দিয়েছিলেন কথাও ৷

কিন্তু, নির্বাচনের আগে থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কীর্তি আজাদ ৷ সাংসদ হতেই একেবারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসিকে চিঠি দিয়ে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের রায় উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যানকে ৷ এই মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি-র ডিটিপিএস কারখানার সম্প্রসারণের জন্যে নিজেদের জমি পুনরুদ্ধারে নেমেছে ৷ বছর খানেক ধরেই দফায় দফায় ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের নোটিশ দিচ্ছে সংস্থা ৷ এমনকি আচমকা ঘরের সামনে পাঁচিল তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ উচ্ছেদ রুখতে একাই লড়েছে স্থানীয়রা ৷ তৃণমূল পাশে ছিল ৷

শুক্রবার এই প্রসঙ্গে কীর্তি আজাদ বলেন, "পুনর্বাসন ছাড়া কোনওভাবেই কাউকে আইনত উচ্ছেদ করা যায় না ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি ও ডিএসপির এই উচ্ছেদ ঠিক নয় ৷ আমি ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশে আছি ও থাকব ৷ আমার দলের নেতৃত্বরা ডিটিপিএস এলাকায় গিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেবেন ৷ আমি সংস্থার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে নিয়ম মেনে কাজ করার আবেদন করেছি ৷"

কিন্তু, আইনজীবীর সুব্রত মুখোপাধ্যায় আইনের যে জটিলতার কথা তুলে ধরলেন, তাতে করে এটা স্পষ্ট যে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এই বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারে পুনর্বাসন ছাড়াই ৷ যদিও, এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই জানিয়েছেন পুনর্বাসন দেওয়ার কথা ৷ কিন্তু, বিজেপি বিধায়ক এটাও বলেছেন, যদি কারখানা অন্যত্র চলে যায় তার জন্য দায়ী থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আর সেটা হলে, ডিভিসি-র ডিটিপিএস কারখানার নতুন ইউনিট কি তাহলে বিশ বাঁও জলে চলে যাবে ? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details