কলকাতা, 26 অক্টোবর: ঘূর্ণিঝড় দানার জেরে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা মোকাবিলা নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ সেই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করা হয় 'মীনাক্ষী মুখার্জী' নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে । অভিযোগ ওঠে যে সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কলকাতার মেয়র সম্বন্ধে ৷
যদিও এই বিষয়ে দায় ঝেড়ে ফেলেছেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক ৷ তাঁর দাবি, ওই প্রোফাইলটি তাঁর নয় ৷ তাঁর নাম করে কেউ ভুয়ো প্রোফাইল খুলেছেন ৷ নিজের দাবির স্বপক্ষে সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্টও করেছেন মীনাক্ষী ৷ সেই সেখানে ফেসবুক, এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্টগুলি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যও দিয়েছেন তিনি ৷
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (নিজস্ব ছবি) সোশাল মিডিয়ায় করা একটি পোস্টে বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, "আমার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট Minakshi Mukherjee (https://www.facebook.com/minakshi.mukherjee.108) এবং ফেসবুক পেজ Minakshi Mukherjee-Official (https://www.facebook.com/minakshimukerjee)৷ একটি এক্স হ্যান্ডেল (টুইটার) অ্যাকাউন্ট (Minakshi Mukherjee @MinakshiMukher8)৷ এছাড়া আমার কোনও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক পেজ, এক্স হ্যান্ডেল (টুইটার) অ্যাকাউন্ট নেই ।’’
সোশাল মিডিয়ায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘কিন্তু এর বাইরেও আমার নাম ও ছবি ব্যবহার বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও টুইটার অ্যাকাউন্ট, সামাজিক মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্ট থাকলেও থাকতে পারে । এই সমস্ত অ্যাকাউন্ট যাঁরা পরিচালনা করছেন বা পোস্ট করছেন, সেই প্রসঙ্গে আমার কোনও ভূমিকা নেই । বা কোনও ধরনের পোস্ট সম্পর্কে আমি অবগত নই ।"
সোশাল মিডিয়ায় বিখ্যাত কারও নাম ব্যবহার করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি একেবারে নতুন নয় ৷ সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই কোনও না-কোনও সময় এই সমস্যার মুখে পড়েন ৷ সংশ্লিষ্ট সোশাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এই ধরনের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেন অনেকে ৷ তেমন কোনও পদক্ষেপ মীনাক্ষী নিয়েছেন কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ৷
এদিকে সোশাল মিডিয়ায় ফিরহাদ হাকিমকে কটাক্ষ করে যে পোস্ট করা হয়েছে, তা স্বয়ং মীনাক্ষী করেছেন ধরে নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে ৷ আসরে নেমেছে তৃণমূলও ৷ এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পালটা সরব হয়েছেন কলকাতা পুরনিগমের 98 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী ৷
তাঁর দাবি, সিপিএমের যুব সংগঠনের রাজ্যের নেত্রী হিসেবে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হতেই পারেন ৷ কিন্তু ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে যে পোস্ট মীনাক্ষী করেছেন, তা আসলে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী ৷ অরূপ মীনাক্ষীকে ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী, মনুবাদী’ বলেও কটাক্ষ করেছেন ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ছবি পোস্ট করে সামগ্রিক ভাবে আপনি সমগ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাকে যে আঘাত করেছেন, সেই অপরাধ ক্ষমাহীন ।’’
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (নিজস্ব ছবি) এখানেই থামেননি শাসক দলের দলের এই নেতা৷ সোশাল মিডিয়ায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আসলে এটাই সিপিএমের চরিত্র, এরা মুখে এক, আর চিরকাল কাজে আরেক । গোটা পার্টিটাই আজ এমনি এমনি শূন্য হয়ে যায়নি । আর এসব মীনাক্ষী মার্কা এলিমেন্ট এখন দলের নেতা-নেত্রী হয়েছে বলে দলটাই মহাশূন্যে চলে গেছে । ও হ্যাঁ, ভুলে যাবেন না এই আগুনখেকো নেত্রী (!!) মীনাক্ষী মুখার্জী বিধানসভায় নন্দীগ্রামের সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে নিজের জামানতটুকুও বাজেয়াপ্ত করে এসেছে দায়িত্ব নিয়ে । এদের এই অবস্থা কেন সেটা নিজেরাই বুঝে নিন এবারে ।’’
ফিরহাদের পোস্টের দায় মীনাক্ষী অস্বীকার করার পর তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী ফের এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় লেখেন ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গতকাল এই পোস্টের পরে বহু মানুষ আপত্তি করায় (আমিও গতকাল রাতেই দেখে পোস্ট করি) আজ সকালে শুনলাম উনি জানিয়েছেন এটা ওর অফিসিয়াল প্রোফাইল না । সমর্থকরা এই পেজ চালায়, তাই এই বক্তব্যর দায় ওঁর নয় ।’’
এর পরই শাসক দলের এই নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কিন্তু ওঁর নামে খোলা সরাসরি পেজ (ফ্যান ক্লাব বা সাপোর্টার্স পেজ নয়) যার সদস্য হাজার হাজার, সেটা সম্পর্কে উনি কিছুই জানেন না, এই কথা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য না । আর যদি ওর অজ্ঞাতে হয়ে থাকে, তাহলে ওঁর নাম ব্যবহার করে এধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রচারের জন্য এই পেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এটিকে বন্ধ করাচ্ছেন না কেন ?"
এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তৃণমূলের শীর্ষসারির নেতা কুণাল ঘোষও ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এই পোস্ট অবিলম্বে ডিলিট করে ক্ষমা চাওয়া উচিত । রাজনীতিতে পেরে না উঠলেই এমন বিকৃতি আসে । এই প্ররোচনামূলকভাবে কোনও ধর্মকে অপমান করা ঘোরতর অন্যায় । তবে, সিপিএম তো, এরকমই মানসিকতা স্বাভাবিক ।’’