মুম্বই, 28 নভেম্বর: বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ মহাযুতিকে জেতানোর পর এখনও মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন সম্ভব হয়নি ৷ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার 6 দিন পরেও মহা-মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে ৷ যদিও একনাথ শিন্ডে সমস্ত সিদ্ধান্ত বিজেপি-র হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নাম প্রায় নিশ্চিত হলেও মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে আগের অভিজ্ঞতার দিকে তাকালে, বিজেপি অন্য কাউকে এই পদে বসাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
বিধানসভা নির্বাচনে মহাযুতি সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পেয়েছে ৷ এই বিধানসভা নির্বাচনে জোট লড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বেই। তাই তিনিই ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলেও শোনা যাচ্ছিল। তবে, শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী নাম বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদির উপর ছেড়ে দিয়েছে ৷ এর পরই বিজেপির তরফেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ৷
দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকলেও, তাঁর সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছে আরও পাঁচ বিজেপি নেতা ৷ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বিজেপি শেষ মুহূর্তে এই নাম বদল করতে পারে ৷ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের মতো অভিজ্ঞ নেতাকে সরিয়ে ওবিসি নেতা মোহন যাদবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়েছে। একইভাবে, রাজস্থানেও যখন মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বসুন্ধরা রাজের নাম আলোচনায়, তখন ভজনলাল শর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়ে চমকে দিয়েছে বিজেপি।
দেবেন্দ্র ফড়নবিশের স্থলাভিষিক্ত হতে অনেক নামই আলোচনায় রয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং মারাঠা সম্প্রদায়ের বড় নেতা বিনোদ তাওড়েকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে ৷ যেহেতু বিনোদ তাওড়ে মারাঠা সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ৷ তাই রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠতার বিবেচনায় বিনোদ তাওড়ের নামও মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
উল্লেখযোগ্যভাবে, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপির নেতাদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে আলোচনা করার আগে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার রাতে হঠাৎ বিনোদ তাওদেকে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে আলোচনা করেন। বিনোদ তাওড়ের পাশাপাশি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাতিল এবং বর্তমান রাজ্য সভাপতি চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে, সুধীর মুনগান্টিওয়ার, পঙ্কজা মুন্ডের নামও মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আলোচনায় উঠে আসে ৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিজয় চোরমারের মতে, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লাডকি বাহিন প্রকল্পের অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়ার ফলে বিপুল সংখ্যক মহিলা মহাযুতিকে ভোট দিয়েছেন ৷ মহাযুতির জয়ের জন্য লাভজনক হতে পারে এমন চিন্তা করা রাজ্যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নামও আনতে পারে বিজেপি ৷ আর এর জন্য বিধায়ক পঙ্কজা মুন্ডেকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে ৷ বিজেপি অতীতে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "বিজেপি দলের নেতৃত্ব, বিশেষ করে অমিত শাহের মনে কী চলছে, তা কেউ বলতে পারে না। লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বে রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেছে বিজেপি ৷ ফলে দেবেন্দ্র ফড়নবিশকেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া সহজ হবে না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ৷ রাজ্যের প্রায় 70 শতাংশ বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী পদে সমর্থন করেন ৷ তবে এই কারণে, বিজেপির বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে।"