অশোকনগর ও কলকাতা: কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান ৷ আর তার মধ্যে বাংলার দু’টি জায়গা থেকে উদ্ধার হল সোনার বিস্কুট ও জাল নোট ৷ বুধবার রাতে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগর থেকে প্রায় 60 লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার করে পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে ৷ বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার ধর্মতলা থেকে উদ্ধার হয় প্রায় তিন লক্ষ টাকার জাল নোট ৷ এই ঘটনায় লালবাজারের জালে ধরে পড়েছে একজন ৷
অশোক নগরে উদ্ধার 60 লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট
চোরের উপর বাটপারি ! পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া সোনা মাঝপথে দুষ্কৃতীদের আরেক দল হাইজ্যাক করে নিল । রাজপথে দুই দুষ্কৃতী দলের হাতাহাতি । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগর থানার পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযান । অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল তিন দুষ্কৃতী । ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় 60 লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার করা হয়েছে । বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কার্তুজ ভরা একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ।
বুধবার রাতে অশোকনগর থানার পুলিশের কাছে খবর আসে, দোগাছিয়া এলাকায় গাড়ি থামিয়ে রাস্তার উপর কয়েকজন যুবকের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি চলছে । খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় । পুলিশ দেখে দুষ্কৃতীদের কয়েকজন গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায় । বাকি তিনজনকে পুলিশ ধরে ফেলে । ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বনগাঁর গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বিভূতি বিশ্বাস । রয়েছেন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা রাজেশ ঠাকুর এবং স্বরূপনগরের বাসিন্দা শুভঙ্কর হালদারও ।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, বিভূতি ছ'টি সোনার বিস্কুট নিয়ে দত্তপুকুর স্টেশনে কাউকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন । সেখানে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অন্য আরেক দল দুষ্কৃতী তা়ঁকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে অশোকনগর থানার দোগাছিয়া এলাকায় আসে । সেখানে রাস্তার ওপরে সোনার বিস্কুটের ব্যাগ নিয়ে দুষ্কৃতীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয় । তা দেখে পাশের ক্লাবের ছেলেরা অশোকনগর থানায় খবর দেন ।
পুলিশকে দেখে কয়েকজন দুষ্কৃতী তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে সেখান থেকে চম্পট দেয় । ধরা পড়ে যান বিভূতি, শুভঙ্কর ও রাজেশ । বিভূতির ব্যাগ তল্লাশি করার সময় সিগারেটের কার্টুনের মধ্যে ছ'টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয় । পুলিশি জেরায় বিভূতি জানান, সোনার বিস্কুটগুলি তিনি কারও কাছে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন । দত্তপুকুর রেল স্টেশন থেকে কয়েকজন তাঁকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় । কিন্তু সোনার বিস্কুটের ব্যাগ তিনি হাতছাড়া করেননি । শুভঙ্করের কাছ থেকে কার্তুজ ভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয় । রাজেশের কাছ থেকে মিলেছে একটি চাকু ।
বৃহস্পতিবার হাবড়ার এসডিপিও প্রসেনজিৎ দাস সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, "ধৃতদের কাছ থেকে আনুমানিক 60 লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে । কার্তুজ ভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে । সোনা পাচারচক্রে আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে ।"
ধর্মতলায় উদ্ধার তিন লক্ষের জাল নোট
খাস কলকাতার বুক থেকে উদ্ধার হল প্রায় তিন লক্ষ ভারতীয় টাকার জালনোট । এই জাল নোট মালদার কালিয়াচক থেকে পাচার করতে কলকাতায় এসে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি । ধৃতের নাম মনোয়র শেখ । তাঁর বাড়ি মালদা জেলার কালিয়াচকে । তাঁকে গ্রেফতার করেছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা ।
কলকাতা পুলিশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আগে থেকেই সোর্স মারফত খবর ছিল যে এক ব্যক্তি বিপুল পরিমাণের জাল নোট নিয়ে কলকাতার ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আসবে। আমরা সাদা পোশাকে সেখানে হাজির হয়ে যাই । অভিযুক্তকে আমরা ঘিরে ধরে ফেলি । তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি কালো রঙের বড় ব্যাগ । ব্যাগটি খুলতেই দেখা যায় যে 500 টাকার নোট সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে । পরে তা পরীক্ষা করে জানা যায় প্রত্যেকটি নোটই জাল ।’’
কেন মালদার কালিয়াচক থেকে কলকাতায় এসে এই বিপুল পরিমাণ লক্ষাধিক জাল নোট আনল ওই ব্যক্তি, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে । ময়দান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ । পরে মনোয়র শেখ নামে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে । তাকে জেরা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা ।
এই ঘটনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল ভি সলেমননেশাকুমার ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘আমরা শুনতে পেয়েছি উদ্ধার হওয়া জাল নোটগুলি বাংলাদেশে বানানো হয়েছে । মনোয়ার শেখকে আরও ভালোভাবে জেরা করা প্রয়োজন ।’’