মালদা, 16 অক্টোবর: আরজি করে নির্যাতিতা চিকিৎসক ছাত্রীর খুনিদের কঠোর শাস্তির দাবিতে উত্তাল রাজ্য ৷ কর্মক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে অব্যাহত চিকিৎসকদের আন্দোলন ৷ এরই মধ্যে ফের চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটল মালদায় ৷ সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে এক রোগীর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৷
মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ এই ঘটনায় রাতে মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন নিগৃহীত চিকিৎসক ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি ৷
উত্তপ্ত মালদার মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতাল (নিজস্ব চিত্র) মঙ্গলবার সকালে পুরাতন মালদার ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙামাটিয়া গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর চার বছরের সন্তানকে জ্বর গায়ে মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন ৷ ভর্তির পর শিশুটির চিকিৎসাও শুরু হয় ৷ বেশ কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষা করানো হয় ৷ কিন্তু পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি দেখে তাকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ এতেই ক্ষেপে ওঠেন অভিভাবকরা ৷
তাঁরা ওই চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন ৷ তাঁকে শারীরিক নিগ্রহও করা হয় বলে অভিযোগ ৷ আরও অভিযোগ, শুধু ওই চিকিৎসকই নন, সেই সময় সেখানে উপস্থিত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও নিগ্রহের শিকার হন ৷ খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে চলে আসে মালদা থানার পুলিশ ৷ পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ রাতে নিগৃহীত চিকিৎসক গোটা ঘটনা জানিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷
বুধবার নিগৃহীত চিকিৎসক অরিন্দম চাকি বলেন, "গতকাল সকালে বেবি মণ্ডল নামে চার বছরের একটি শিশুকে এখানে ভর্তি করা হয় ৷ বাচ্চাটি চারদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল ৷ গায়ে র্যাশ বেরিয়েছিল ৷ আমি রাউন্ড দেওয়ার সময় বাচ্চাটিকে পরীক্ষাও করি ৷ তখন সে স্থিতিশীল ছিল ৷ তবে তখনও তার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টগুলি এসে পৌঁছয়নি ৷ বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ অভিভাবকরা জানান, বাচ্চার মুখে ঘা হয়েছে ৷ কিছু খেতে পারছে না ৷ আমি পরীক্ষা করে দেখি, বাচ্চার জিভ লাল হয়ে গিয়েছে ৷"
চিকিৎসক আরও জানান, "পরিস্থিতি সুবিধের নয় ভেবে আমরা শিশুটিকে মেডিক্যালে রেফার করার সিদ্ধান্ত নিই ৷ অভিভাবকদের সে কথা জানানো হয় ৷ তখনই তাঁরা আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করেন ৷ আমার গায়ে হাত দেন ৷ শুধু আমাকে নয়, তখন ওয়ার্ডে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও নিগ্রহ করা হয় ৷ পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ এই ঘটনায় আমি মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ আমার মনে হচ্ছে, চিকিৎসক নিগ্রহ এখন সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য সবাই বদনামের ভাগীদার হচ্ছেন ৷ এখানে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকার জন্যই বাচ্চাটিকে মালদা মেডিক্যালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৷"
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সনাতন পাল জানান, "তখন আমি নিজের বাচ্চার চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম ৷ আমার বাচ্চাকে যখন চিকিৎসক দেখতে শুরু করেছেন, তখনই ওই বাচ্চার মা বা মাসি ডাক্তারবাবুর উপর চড়াও হন ৷ ডাক্তারবাবুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন ৷ ধাক্কাধাক্কিও চলে ৷ তাঁরা চিকিৎসকদের মারধরের হুমকি দিতে থাকেন ৷ খানিক বাদে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷"
মালদা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে ৷"