কলকাতা, 6 নভেম্বর: রাজ্যের আবেদন খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়েকে নিয়ে কুমন্তব্যের ঘটনায় ধৃতদের হেফাজতে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ ৷ সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রাখল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ ।
রায় দিতে গিয়ে বুধবার প্রধান বিচারপতি বলেন, "এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের যোগ রয়েছে । এই ঘটনায় পকসো আইনকে যেভাবে যুক্ত করা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । দুটি মেডিক্যাল রিপোর্টের (ডায়মন্ড হারবার জেল সুপার ও ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের) মধ্যে অসামঞ্জস্য আছে বলে আদালত মনে করে ।"
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, 18 নভেম্বরের মধ্যে একক বেঞ্চে রিপোর্ট জমা করবে সিবিআই । ওইদিনই একক বেঞ্চে শুনানি হবে । প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের মৌখিক মন্তব্য, "কোনও পুলিশ যদি গর্হিত কাজ করে তাকে সমর্থন করা রাজ্যের কখনওই উচিত নয় ।"
ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে সম্পর্কে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ মিছিল থেকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয় বলে অভিযোগ । সেই সময় ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হাততালি দেওয়ার অভিযোগে মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । অভিযোগ, পুলিশের হেফাজতে তাঁদের উপরে অত্যাচার করা হয় । পরে তাঁরা জামিনও পান । কিন্তু বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চ হেফাজতে অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করে । সেই রায়কেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য ।
এ দিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, "প্রাথমিক তদন্ত চলাকালীনই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন । এক্ষেত্রে রাজ্যের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি । যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁরা নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদনের সময় এই অত্যাচারের কথা উল্লেখই করেননি । এই ঘটনার তদন্তে 2 জনের কমিটি গঠন করা হয়েছিল । তাঁরা উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার । রাজ্যকে এই মামলায় কোনওরকম বক্তব্য রাখার সুযোগও দেননি একক বেঞ্চের বিচারপতি ।" প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, "ভিভিআইপি রেফারেন্স তাই এত তৎপরতা !"
মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী সুবীর সান্যাল বলেন, "এখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তাদের যোগ আছে । 7 সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় । 8 সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করা হয় । নিম্ন আদালত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ খারিজ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন । গ্রেফতারের পর ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের রিপোর্টে অভিযুক্তের দেহের কোনও অংশে আঘাতের উল্লেখ না থাকলেও, জেল হাসপাতালের রিপোর্টে আঘাতের উল্লেখ রয়েছে । জেল হাসপাতাল চাপের মুখে প্রকৃত রিপোর্ট দেয় । জেল হাসপাতালের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে তাঁকে হেফাজতে অত্যাচার করা হয়েছিল । সেই কারণেই তৃতীয় কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের প্রয়োজন ।"