মালদা, 4 ডিসেম্বর: ছিল নীল-সাদা, হল গেরুয়া । 10 দিন পর ফের ভবনের রং বদলে হল নীল-সাদা । মধ্যে থেকে সরকারি কোষাগার থেকে বেরিয়ে গেল প্রায় 70 হাজার টাকা । পুরাতন মালদার ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনের রং বদল নিয়ে ফের চর্চা এলাকায় । পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, প্রশাসনিক চাপেই তাঁরা 10 দিনে ভবনের রং ফের পাল্টে দিতে বাধ্য হয়েছেন ৷
10 দিন আগে গেরুয়া রং করা পঞ্চায়েত ভবনের ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন বিডিও সেঁজুতি পাল মাইতি । তবে রং করা নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের সামনে আসতে চাননি তিনি । কেন ভবনের রং পাল্টে ফেলা হল, কেনই বা নীল-সাদা থেকে গেরুয়া করা হল, সেসব বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন তিনি ।
গেরুয়া থেকে ফের নীল-সাদা রং হওয়া নিয়ে সবপক্ষের বক্তব্য (ইটিভি ভারত) তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, যেহেতু গত দু'টি নির্বাচনে ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি'র দখলে গিয়েছে, তাই পঞ্চায়েত প্রধান সরকারি ভবনকে পার্টি অফিস হিসাবে তৈরি করতে চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় ঘাসফুল শিবির । ব্লক ও জেলা প্রশাসনের একাধিক জায়গায় অভিযোগ জানানো হয় । তারই প্রেক্ষিতে ব্লক প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েত দফতরে লিখিত নির্দেশিকায় জানানো হয়, যত তাড়তাড়ি সম্ভব পঞ্চায়েত ভবনের রং ফের নীল-সাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে । সেই নির্দেশ পেয়ে বুধবার থেকেই কাজ শুরু করে দেন রং মিস্ত্রিরা ।
এই বিষয়ে ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক অয়ন সেন বলেন, "ভুলবশত পঞ্চায়েত ভবনের রং গেরুয়া হয়ে গিয়েছিল । প্রশাসনের তরফে আমাদের লিখিতভাবে জানানো হয়, ভবনের রং নীল-সাদা করতে হবে । 10-12 বছর আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিলেন, যে কোনও সরকারি ভবনের রং নীল-সাদা করতে হবে । এটা কারও গাফিলতি নয় । মিস্ত্রিরা ভুলবশত ওই রং করে দিয়েছিলেন । ভবনের রং বদলের কাজ আজ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ।"
প্রথম ধাপে ছিল নীল-সাদা, দ্বিতীয় ধাপে হল গেরুয়া, ফের নীল-সাদা রং করা হচ্ছে (ইটিভি ভারত) যদিও এর পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান প্রভুনাথ দুবে । তাঁর কথায়, "পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্যকে নিয়ে আলোচনা করেই ভবনের রং গেরুয়া করা হয়েছিল । আলোচনায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরাও ছিলেন । তখন কেউ কিছু বলেনি । রং হয়ে যাওয়ার পর তৃণমূলের চাপে প্রশাসন আমাদের রং বদল করার নির্দেশ দেয় । প্রশাসনিক চাপে আমরা ভবনের রং বদলে ফেলছি । আমরা এটা তৃণমূলের নোংরা রাজনীতি হিসাবেই দেখছি । তবে ভবনের রং বদলে ভোট পাওয়া যায় না । এখানে তৃণমূলের কোনও অস্তিত্বই নেই । তাই তারা এভাবে চাপ সৃষ্টি করছে । এতে কোনও লাভ হবে না । মানুষ যেখানে ভোট দেয় সেখানেই দেবে ।"
পঞ্চায়েত ভবনে সাদার উপর নীল বর্ডার দেওয়া হচ্ছে (ইটিভি ভারত) এই নিয়ে পুরাতন মালদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রবীন দাসের বক্তব্য, "ভাবুক অঞ্চল বিজেপি পরিচালিত । পঞ্চায়েত ভবনের রং দীর্ঘদিন ধরেই নীল-সাদা ছিল । এই রং পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন ছিল না । কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান সরকারি ভবনকে পার্টি অফিস বানানোর জন্য সরকারি টাকা খরচ করে ভবনের রং গেরুয়া করার চেষ্টা করেছিলেন । আমরা এর প্রতিবাদ জানাই । বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ জানাই । প্রশাসনের উদ্যোগে পঞ্চায়েত প্রধান এখন গেরুয়া রং মুছে ভবনের রং ফের নীল-সাদা করছেন । দেরিতে হলেও তাঁর বোধোদয় হয়েছে ।"