কলকাতা, 9 জানুয়ারি: নতুন বছরে আদ্যোপান্ত কমার্শিয়াল ছবি নিয়ে দর্শকের দরবারে হাজির হতে চলেছেন পরিচালক অনির্বাণ চক্রবর্তী। আসছে 'খাঁচা'। 'খাঁচা'র পরতে পরতে আছে বার্তা, এমনটাই দাবি পরিচালকের। গত বছর 'ও অভাগী' বানিয়ে সাড়া ফেলেন পরিচালক।
কী আছে 'খাঁচা'তে?
নুন আনতে পান্তা ফুরানো, হতদরিদ্র গ্রাম টিয়াবন দেখতে আপাত দৃষ্টিতে শান্ত। পুলিশের খাতাতেও কোনও ব্যাপারেই খুব একটা কোনও অভিযোগ জমা পড়ে না। তবে তার আশেপাশের বেশ কিছু গ্রামে গভীরভাবে কান পাতলে বোঝা যায়, শান্ত জায়গা মোটেও শান্তিতে নেই। এক বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে গোটা এলাকা জুড়ে। গত তিরিশ বছর ধরে লেবার ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার নামে এক বিরাট নারী পাচার চক্র চালায় বিশ্বম্ভর বিশ্বাস ওরফে মামা এবং তার প্রথম স্ত্রী মীনাক্ষী দেবী।
কমলেশ ওই গ্রামেরই ছেলে। ছোটবেলায় তার দিদিকে মামী এবং তার দলবল তুলে নিয়ে গিয়েছিল তার সামনেই। কিন্তু সে তখন কিছুই করতে পারেনি। তার মা পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ কোনও অভিযোগ জমাই নেয় না। উল্টে তার মা'কেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয় কেউ। দিদিকে সে আজও খুঁজে পায়নি। তার লড়াই চলছে মামা এবং মামীর বিরুদ্ধে। এই ছবির গতিময় কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে রোমহর্ষক দ্বন্দ্ব আর অধর্মের অধঃপতনের দুর্ধর্ষ সংঘাতের অ্যাকশন। টানটান চিত্রনাট্যে আলো আঁধারের হিসেব নিকেষ। অবশেষে কী ভাবে সত্যের জয় হয়, সেই নিয়েই আবর্তিত খাঁচার কাহিনি।
পরিচালকের বক্তব্য
অনির্বাণ বলেন, "ও অভাগী আমার শেষ ফিচার ফিল্ম ছিল, যা সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার জেতে। তবে আমি কখনও কোনও নির্দিষ্ট সীমায় আবদ্ধ থাকতে চাইনি। সিনেমা মানেই বিনোদন, তাই আমি সবসময় নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আমার প্রযোজককে ধন্যবাদ, যিনি আগের মতোই আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "তপ্ত গ্রীষ্মে আমরা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় শুটিং করেছি। আবার কনকনে ঠাণ্ডায় দার্জিলিংয়ে শুটিং করেছি। কিন্তু কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। কারণ পুরো ইউনিটটাই ছিল একটা বড় পরিবারের মতো।" শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে পরিচালক বলেন, "একটি বিশেষ রাত আমার স্পষ্ট মনে পড়ে। আমরা কালিম্পংয়ের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় শুটিং করছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় ম্যানেজার আমার কাছে এসে একটি ভিডিয়ো দেখালেন, যেখানে কয়েক ঘণ্টা আগে ঠিক সেই জায়গায় একটি চিতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে আমি বসেছিলাম। কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেই সময় কোনও এক প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সমস্ত লাইট বন্ধ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে একমাত্র দৃশ্যমান ছিল মোবাইল স্ক্রিনে থাকা সেই চিতার চাহনি। আসলে আমি তার এলাকায় অনাহূত অতিথি, সে নয়।"
সিনেমায় রয়েছেন কারা? মৃন্ময় (কমলেশ), রজতাভ দত্ত (মামা), মীর (মন্ত্রী), প্রত্যুষা পাল (রাধিকা), অনিন্দ্য ব্যানার্জি (সম্পদ), কাঞ্চনা মৈত্র (মামী), সোনালী চৌধুরী (কমলেশের মা), কৃষ্ণ ব্যানার্জি (ট্যাবলেট), ইমন চক্রবর্তী (মইদুল), অরুণাভ দত্ত (ও.সি)নবাগতা পূজা চ্যাটার্জি (রেশমী) সহ আরও অনেকে।
ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় অনির্বাণ চক্রবর্তী। প্রযোজনায় ডক্টর প্রবীর ভৌমিকের স্বভূমী এন্টারটেনমেন্ট ৷ ক্যামেরায় মলয় মণ্ডল। সঙ্গীত পরিচালক মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় এবং অমিত। ছবির চরিত্র সম্পর্কে মৃণ্ময় বলেন, "অনেকেরই মনে হতে পারে, পপুলার ইউটিউবার হিসেবে মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল সিনেমায় কীভাবে প্রত্যাবর্তন হল। আসলে হিরো হওয়ার ইচ্ছা আমার বহু বছরের। 2012-তে প্রথমে রিয়েলিটি শো, তারপর ইউটিউব। কিন্তু তারও আগে থেকে আমার স্বপ্ন হিরো হওয়ার। তবে, মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল সিনেমায় হিরো হওয়া মুখের কথা নয়। তার জন্য সঠিক প্রিপারেশন, সঠিক মানুষদের সান্নিধ্যে আসা, আর সঠিক সময়টা খুব দরকার। ইউটিউবটা আমার প্যাশন এবং প্রফেশন। কিন্তু হিরো হওয়াটা আমার লক্ষ্য। যেটা 2025-এ সফল হতে চলেছে।"
তবে এই ছবি কবে মুক্তি পাবে প্রেক্ষাগৃহে তা এখনও জানা যায়নি ৷ খুব শীঘ্রই ছবি মুক্তির তারিখ নির্মাতারা আনবেন বলে জানা গিয়েছে ৷