কলকাতা, 9 জানুয়ারি: বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ ডিভিসি-র জল ছাড়া নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে টানাপোড়েন হয়েছিল, সেই নিয়েই মামলা দায়ের করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ৷ এই নিয়ে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেছিলেন ওই মামলায় ৷ কিন্তু আদালত মামলাই খারিজ করে দিল ৷
অধীর চৌধুরী জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে ৷ বৃহস্পতিবার সেই মামলা শুনানির জন্য ওঠে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ৷ কিন্তু এই নিয়ে সাংসদের আইনজীবী প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়ের কোনও বক্তব্যই শুনতে চায়নি আদালত ৷ বরং প্রধান বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় অধীরের আইনজীবীকে ৷ তাঁর নির্দেশ, শুধু সংবাদপত্রের কাটিং দিয়ে মামলা না করে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মামলা করতে হবে ৷
উল্লেখ্য, মাসকয়েক আগে ডিভিসি-র জল ছাড়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসি-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন ৷ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে হওয়া বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বলেও দাবি করেছিলেন ৷ ডিভিসি-র বোর্ডে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একজন করে প্রতিনিধি থাকে ৷ সেই বোর্ডই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷
এই নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয় ৷ জল ছাড়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিও সম্মতি জানিয়েছিলেন বলেও কোনও কোনও মহল থেকে দাবি করা হয় ৷ এর পর রাজ্য সরকারের তরফে ডিভিসি থেকে নিজেদের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ৷ এই নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয় ৷ প্রশ্ন ওঠে, প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে যদি ডিভিসি জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে তার দায় কার ?
এই সামগ্রিক বিষয় নিয়েই মামলা দায়ের করেন অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ মুখ্যমন্ত্রী যে ম্যান মেড বন্যার তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন, সেই বিষয়ে তদন্ত করার জন্য আদালত নির্দেশ দিক, মামলার আবেদনে সেই কথাই উল্লেখ করেছিলেন কংগ্রেসের এই নেতা ৷ যদিও তাঁর আবেদন কলকাতা হাইকোর্ট গ্রাহ্য করা হয়নি ৷
বরং অধীরের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেছেন, "আপনার মক্কেল কি জানেন ডিভিসির জলাধারে কী পরিমাণ জল ছিল ? কত ছাড়া হয়েছে ? শুধু খবরের কাগজের কাটিং দিলে হবে ? আমরা জানি আপনার মক্কেল বহুবারের সাংসদ । তিনি জননেতা । অনেক কিছু করতে পারেন । তিনি নিজেই তো এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন ৷ কিন্তু এই মামলা অন্য কোনও ফোরামে গিয়ে করুন ।"
আদালতের এই নির্দেশ সামনে আসার পর অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷ তিনি বলেন, ‘‘অধীররঞ্জন চৌধুরীরা যেকোনও মূল্যে রাজ্য সরকারের কাজে বাধা দেওয়া, রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ভিত্তিহীন অপপ্রচার করা, নজর ঘুরিয়ে দিয়ে এখন রাজনীতিতে টিকে থাকতে চান ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য কংগ্রেসকে অধীর চৌধুরী সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপির বি টিমের ভূমিকা পালন করে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, তাই তাঁরা এই ধরনের পদক্ষেপ করে থাকেন ৷ আদালত যদি তাঁর এই উদ্দেশ্য ধরে ফেলে থাকেন এবং সেখান থেকে মুখের উপর জবাব দিয়ে থাকেন, ফলে এটা ওঁদের প্রাপ্য ছিল ৷’’