কলকাতা, 25 জুন: বাঙালি ও তার মিষ্টির প্রতি ভালোবাসার সম্পর্ক ঠিক কবে থেকে ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে, কয়েকশো বছরের ইতিহাস ঘেঁটে ফেলতে হবে ৷ কিন্তু, কলকাতায় বাঙালির প্রিয় মিষ্টির ঠিকানাগুলির কথা জিজ্ঞেস করলে, তা খুব একটা কঠিন হবে না ৷ তেমনই একটি ঠিকানা হল বিখ্যাত পুঁটীরাম ৷ কলকাতা শহরে যার মোট চারটি শাখা ছিল ৷ হ্যাঁ, ছিল ! যার তিনটি আজ অতীত ৷ বর্তমানে বটবৃক্ষ হয়ে ঐতিহ্য রক্ষা করছে সবচেয়ে পুরনো 150 বছরের বেশি সময়ের সূর্য সেন স্ট্রিটে পুঁটীরাম ৷ সম্প্রতি ব্রিটিশ আমলে হ্যারিসন স্ট্রিট তথা অধুনা এমজি রোডের পুঁটীরামে তালা পড়েছে চিরতরে ৷
দেড়শো পেরিয়ে ব্যাটন ধরে সূর্য সেন স্ট্রিটের পুঁটীরাম (ইটিভি ভারত) শোনা যাচ্ছে, এমজি রোডের পুঁটীরামের শাখার মালিক পরেশ মোদক খুবই অসুস্থ ৷ তিনি আর এই বিশাল ব্যবসা সামাল দিতে পারছেন না ৷ আর তাঁর একমাত্র ছেলের পারিবারিক মিষ্টির ব্যবসায় খুব একটা আগ্রহ নেই ৷ তিনি বর্তমানে প্রবাসী বাঙালি ৷ মুম্বইয়ে তাঁর বাস ৷ ফলে এমজি রোডের পুঁটীরাম উত্তরসূরির অভাবে বন্ধই হয়ে গেল ৷
ব্রিটিশ আমলে মোদকরা দু’টি শাখা খুলেছিল কলকাতার সূর্য সেন স্ট্রিটে ৷ পরবর্তীকালে যার একটি ভেঙে সূর্য সেন স্ট্রিটেই নতুন শাখা তৈরি হয় ৷ অর্থাৎ, সূর্য সেন স্ট্রিটেই তিনটি দোকান ৷ আর তিনটে দোকানেই রমরমিয়ে ব্যবসা চলতে থাকে ৷ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ে ৷ এমনকি পরবর্তী প্রজন্ম পারিবারিক ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ ফলে সূর্য সেন স্ট্রিটের যে দোকান ভেঙে শাখা তৈরি হয়েছিল, সেই দু’টি বন্ধ হয়ে যায় ৷ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এমজি রোডে তৈরি হয় পুঁটীরামের নতুন শাখা ৷ যার মালিকানা অবশ্য একেবারে আলাদা ৷
সূর্য সেন স্ট্রিটের পুঁটীরামের মালিক ইন্দ্রজিৎ মোদক জানিয়েছেন, তাঁর ঠাকুরদা জীতেন্দ্রনাথ মোদক এমজি রোডের দোকানটি মেয়ে-জামাইকে যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন ৷ তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে পরেশ মোদক এই দোকানের মালিক ৷ তবে, তিনি বর্তমানে অসুস্থ ৷ তাই কয়েকদিন আগে তালা বন্ধ হয়েছে দোকানে ৷ গ্রাহকরা এসে ফিরে যাচ্ছেন ৷ সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন, আর কি কোনও দিন খুলবে না পুঁটীরামের এই শাখা ?
সূর্য সেন স্ট্রিটের পুঁটীরামের মালিক ইন্দ্রজিৎ মোদক বলেন, "পুঁটীরামের ছোট দোকান ওটা ৷ সেটা আমার দাদার ৷ উনি অসুস্থ থাকার কারণে, আর পেরে উঠছেন না বলেই বন্ধ আছে ৷ উনি যদি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে খোলার হয়তো আশা আছে ৷ না হলে কিছু করার নেই ৷ তিন-চারদিন আগেই ঝাঁপ নামিয়েছেন, আর চালাতে না পারায় ৷ আমাদের এই দোকানটা খোলা আছে ৷ উনি যদি ভবিষ্যতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলে খুলতে পারেন ৷"