নামখানা, 17 নভেম্বর: ধীরে ধীরে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সুন্দরবনের ভূ-প্রাকৃতিক পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটছে। নদী ভাঙনের ফলে ধীরে ধীরে নদী গ্রাস করে নিচ্ছে পুরো একটি মৌজাকে। এর জেরে নামখানার নারায়ণগঞ্জ মৌজার অস্তিত্ব এখন সঙ্কটের মুখে। হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী গিলে খেয়েছে এই মৌজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বাকি যেটুকু জমি রয়েছে, তা বাঁচিয়ে রাখতেই প্রতিনিয়ত লড়াই চলছে। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পূর্ণিমা ও অমাবস্যার ভরা কোটালের জেরে মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে চলে গিয়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, প্রশাসন যদি তৎপর না-হয় তাহলে যেটুকু নিয়ে অবশিষ্ট রয়েছে সেই অবশিষ্ট টুকু নিয়েও গিলে খাবে মুড়িগঙ্গা। এলাকাবাসী নদী ভাঙন নিয়ে চিন্তিত। প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এলাকার মানুষজনরা। এলাকাবাসীদের দাবি, বারবার স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণের দাবি প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। কিন্তু, তাতেও কোনও সমাধান মেলেনি। ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি মিললেও এবং ভোটের পর আর রাজনৈতিক নেতাদের দেখা মেলে না। প্রতি মুহূর্তে ভাঙনের সঙ্গে লড়াই চালাতে হয় তাঁদের।
প্রশাসন থেকে স্থানীয়দের বক্তব্য
- এবিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা নিরঞ্জন ধাড়া বলেন, "বাবার আমলে নিজেদের জমি অনেকটাই নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। আমার আমলে প্রায় কুড়ি বিঘা জমি নদীর গর্ভে চলে যেতে দেখেছি। এই বছর নদী বাঁধের পাশে তিন বিঘা জমিতে দুধেশ্বর ধানের চাষ করেছিলাম। গত পূর্ণিমার কোটালে ধানের খেত সমেত প্রায় 15 কাঠা জমি নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে। বাকি 15 কাঠা জমিরও সব ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারব না।"
- নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, "অতীতে সুবিশাল এলাকাজুড়ে নারায়ণগঞ্জ মৌজা ছিল। নদীর ভাঙনের ফলে এখন এই এলাকা অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছে। 2 কিলোমিটার লম্বা ও 1 কিলোমিটার চওড়া দীর্ঘ অঞ্চল নদী-গর্ভে চলে গিয়েছে। বহু পরিবার এই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বাড়ি করেছেন। মূলত, এই মৌজার বিপরীত দিকে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীতে একটি নতুন চরের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এই এলাকা ক্রমশ ভাঙছে। এছাড়াও, প্রতিদিন হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর মাঝখানে নারায়ণগঞ্জের কাছাকাছি প্রায় 100টি করে বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকে। যে কারণে এই অঞ্চলের উপকূলে নদীর স্রোত অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই নদীর ভাঙন আরও বেড়েছে।"
- এই অঞ্চলের নদী বাঁধ পরিদর্শন করেন সেচ দফতরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন। তিনি বলেন, "এলাকাটি পরিদর্শন করলাম। আগামিদিনে ভাঙন রোধের ক্ষেত্রে কী করা যায়, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করব।"