কলকাতা, 24 নভেম্বর: জেসি মুখার্জি ট্রফির ম্যাচে চার বলে ওভার শেষ হওয়ার ঘটনায় বিতর্ক থামছে না ৷ গত মঙ্গলবার রেঞ্জার্স মাঠে কুমারটুলি বনাম টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচের দুই ফিল্ড আম্পায়ার এবং অবজার্ভারকে শাস্তি দিয়েছে সিএবি-র টুর্নামেন্ট কমিটি ৷ যা নিয়ে সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে টুর্নামেন্ট কমিটির সিদ্ধান্তে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন আম্পায়ার্স কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ৷ এমনকি ঘনিষ্ঠমহলে পদত্যাগের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি ৷
উল্লেখ্য, ওই ম্যাচে স্বস্তিক দত্ত চৌধুরী এবং দেবতোষ মুস্তাফি ছিলেন দুই ফিল্ড আম্পায়ার ৷ অবজার্ভার ছিলেন দীপ্তেন্দু মাহাতো ৷ অভিযোগ, দুই আম্পায়ার এবং অবজার্ভারকে শাস্তি দেওয়া হলেও, শাস্তি হয়নি থার্ড আম্পায়ার সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই স্কোরার শুভম মণ্ডল ও অতনু জানার ৷ টুর্নামেন্ট কমিটির এই সিদ্ধান্তে সিএবি-র ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে ৷
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতির কথা জানালেন বিশ্বরূপ দে ৷ (ইটিভি ভারত ৷) চার বলে ওভার ঘোষণা বড়সড় ভুল ৷ কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, স্কোরার, অবজার্ভার ও থার্ড আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়েও ৷ ওভারের বল সংখ্যা যদি চার হয়ে থাকে, তাহলে স্কোরার অনলাইনে আপডেট করলেন কীভাবে ৷ কোন অঙ্কে তিনি বল সংখ্যা মেলালেন ৷ অনলাইনে একটি ওভার শেষ না-দেখিয়ে, পরের ওভারের বল গোনা শুরু করা যায় না ৷ তাহলে এই ভুলের অংশীদার স্কোরাররাও ! তাহলে কোন যুক্তিতে, শাস্তির কোপ থেকে দুই স্কোরার বাঁচলেন ৷ একইভাবে ভুল হচ্ছে বুঝতে পেরে তৃতীয় আম্পায়ার কেন সতর্ক করলেন না !
অনেকে বলছেন, স্কোরার এবং আম্পায়ারের ভুল নতুন কিছু নয় ৷ ঘরোয়া ক্রিকেটে বল গোনার ভুল হয়ে থাকে এবং তা পুরনো রোগ ৷ এখন অনলাইন স্কোরিং হওয়ায় ভুলের সংখ্যা কমেছে ৷ আবার বলা হচ্ছে, এই ভুলের জন্য আম্পায়ারদের শাস্তি দেওয়ার অন্য সমীকরণ রয়েছে ৷ অভিযোগ, এর পিছনে আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান বনাম সিএবি-র দুই পদাধিকারীর পুরনো বিবাদ মূল কারণ বলে ধরা হচ্ছে ৷
অভিযোগ, আম্পায়ার্স কমিটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আম্পায়ারদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় ৷ আম্পায়ারদের নিয়মবিধি নথিভুক্ত করেছেন তিনি ৷ মাঠে ক্রিকেটাররা নিয়ম ভাঙলে কতটা ক্ষমতা প্রয়োগ তৎক্ষনাৎ সম্ভব, তার ম্যানুয়াল ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করে আম্পায়ারদের হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ মাঠে তৃতীয় আম্পায়ার রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ৷ যা করতে গিয়ে তাঁকে বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছিল ৷ বাধা দিয়েছিলেন সিএবির সেই দুই পদাধিকারী ৷ যাঁরা বিতর্কিত ওভার-কাণ্ডে দুই আম্পায়ার এবং অবজার্ভারের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন বলে দাবি ৷
সব মিলিয়ে একাংশের দাবি, এই পুরো ঘটনায় সিএবি নির্বাচনের অঙ্ক জড়িয়ে ৷ যা এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ বলা হচ্ছে, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া নির্বাচক কমিটি দল গঠন করেছে ৷ সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৷
তিনি বলেন, “বার্ষিক সাধারণ সভার পরে প্রথম অ্যাপেক্স কমিটির বৈঠকে এই নির্বাচক কমিটি তৈরি হয়। এই বছর সেপ্টেম্বরের শেষে বার্ষিক সাধারণ সভা হয়েছে। তার পনেরো দিন পরে অ্যাপেক্স কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও, পুজো-সহ অন্যা উৎসবের জন্য তা করা যায়নি ৷ 16 নভেম্বর অ্যাপেক্স কমিটির সভায় কমিটি গঠনের কাজ করে নেওয়া হয়েছে ৷ তাছাড়া এই বিষয়ে সিএবি-র সংবিধানে নির্দিষ্ট নিয়ম নেই ৷ বিদায়ী কমিটির প্রেসিডেন্ট মিটিং ডাকেন ৷ সেটা তিন মাস পর্যন্ত টানা যায় ৷ এক্ষেত্রে সেই নিয়মও ভাঙা হয়নি ৷ কার্যত কোনও কিছুই নিয়ম ভেঙে করা হয়নি ৷”
সিএবির বর্তমান অনেক পদক্ষেপ নিয়েই নানারকম কথা রাজ্য ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় ৷ এই ব্যাপারে সিএবির প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে বলছেন, "সবকিছুই যে মনের মতো হবে এমন নয় ৷ দেশ যেভাবে চলছে তাতে আমি-আপনি কি খুশি !৷ তবুও মানছি ৷ সব কিছুর ভালো-খারাপ রয়েছে ৷ সব প্রশাসকের ভালো-খারাপ রয়েছে ৷ সিএবি ব্যতিক্রম নয় ৷ তবে, ব্যক্তিগতভাবে ভিনরাজ্যের ক্রিকেটার খেলানোর ঝোঁক বন্ধ করার পক্ষে রয়েছি আমি ৷ এই ঝোঁক না-কমলে ভুমিপুত্রদের সুযোগ কমে যাচ্ছে ৷ সিএবি যদি সদিচ্ছা দেখায়, তাহলে বাইরের রাজ্যের ক্রিকেটার খেলানো বন্ধ করা সম্ভব ৷" একবছর বাকি রয়েছে সিএবির নির্বাচনের ৷ অঙ্ক কষা চলছে ৷ বিশ্বরূপ দে বলছেন, "নির্বাচনের মাস দু’য়েক আগে থেকে ছবিটা স্পষ্ট হয় ৷"
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের যে উন্নতি হয়েছে, তা খোলাখুলি স্বীকার করছেন ৷ বাংলার ক্রিকেট উন্নতির স্বার্থে তাঁরা দু’জনে বৈঠক করেছেন সেটাও জানিয়েছেন ৷ এই জোটে অভিষেক ডালমিয়াও যে স্বাগত সেটাও বুঝিয়েছেন ৷ কারণ, প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াকে গুরু বলে মানেন বিশ্বরূপ দে ৷
জানালেন, গুরুপুত্রকে শুরুর দিন থেকে জানেন ৷ সম্পর্কও মজবুত বলে দাবি করেছেন বিশ্বরূপ ৷ অতীতে সিএবি-র রাজনীতিতে রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশ বড় ভূমিকা নিয়েছিল ৷ এবারও সেই নির্দেশ আসতে পারে, তার ইঙ্গিত বিশ্বরূপ দে-র কথায় ৷ বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমের 48 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি ৷ রাজনীতি সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত ৷ তবে, খেলাধুলোর প্রয়োজনে সবসময় তৎপর ৷ কোনও রাখঢাক না-করে বলেছেন, বাংলার ক্রিকেটের উন্নয়নে পদ নয়, কাজই অগ্রাধিকার পাবে তাঁর কাছে ৷ ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি দারোয়ানের কাজ করতেও রাজি ৷