সিঙ্গাপুর, 12 ডিসেম্বর: বিশ্বের কনিষ্ঠ দাবাড়ু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার ডোম্মারাজু গুকেশ ৷ বৃহস্পতিবার বিশ্ব দাবাড়ু চ্যাম্পিয়নশিপের 14 নম্বর খেলায় চিনের ডিং লিরেনকে পরাজিত করেছেন গুকেশ ৷ তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ ৷
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু গুকেশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, "ডি গুকেশ বিশ্বের কনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভারতকে গর্বিত করেছে ৷ গুকেশ, আপনি দারুণ কাজ করেছেন ! প্রত্যেক ভারতীয়ের তরফে আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি ৷"
প্রধানমন্ত্রী মোদি সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, "ঐতিহাসিক এবং দুর্দান্ত! ডি গুকেশকে তাঁর অবিস্মরণীয় সাফল্যে শুভেচ্ছা জানাই ৷ তাঁর অপ্রতিরোধ্য মেধা, কঠিন পরিশ্রম এবং অদম্য জেদের ফল এই সাফল্য ৷ দাবার ইতিহাসে শুধু যে তাঁর নামই খোদাই করা হয়েছে তা নয়, লক্ষ লক্ষ তরুণ ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছে ৷ তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক ৷"
রাহুল লেখেন, গুকেশ, আপনি দেশকে গর্বিত করেছেন! মাত্র 18 বছর বয়সে, কনিষ্ঠ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়া একটি অসাধারণ অর্জন। আপনার আবেগ এবং কঠোর পরিশ্রম আমাদের মনে করিয়ে দেয় সংকল্পে অটুট থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব।"
আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ লেখেন, "অভিনন্দন! এটা দাবার জন্য একটা গর্বের মুহূর্ত, ভারতের জন্যও ৷ ডব্লিউএসিএ-র জন্য একটা গৌরবের ক্ষণ এবং আমার জন্য, একটা খুব ব্যক্তিগত গর্বের সময় ৷ ডিং ম্যাচটা দুর্ধর্ষ খেলেছে এবং সে নিজে যে চ্যাম্পিয়ন, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে ৷"
138 বছর ধরে হওয়া এই বিশ্ব দাবাড়ু চ্যাম্পিয়নশিপে (ডব্লিউসিসি) এই প্রথম দুই এশিয় দাবাড়ু- চিনের ডিং লিরেন এবং তাঁর প্রতিপক্ষ ডোম্মারাজু গুকেশ মুখোমুখি হয়েছিলেন ৷ এই অবিশ্বাস্য জয়ের জন্য গুকেশ 21.21 কোটি টাকা (2.5 মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর্থিক পুরস্কার পাবেন ৷
এর আগে রাশিয়ার গ্যারি কাসপারভের এই কৃতিত্ব ছিল ৷ 1985 সালে তিনি আনাতোলি কারপভকে হারিয়ে বিশ্বের কনিষ্ঠ দাবাড়ু চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ৷ তখন কাসপারভের বয়স ছিল মাত্র 22 বছর ৷ ভারতের গুকেশের বয়স কাসপারভের থেকেও কম মাত্র 18 বছর ৷ ভারতীয় হিসাবে দ্বিতীয় ৷ তাঁর আগে ভারতের কিংবদন্তি দাবাড়ু জিএম বিশ্বনাথন বিশ্বের কনিষ্ঠ দাবাড়ু চ্যাম্পিয়নের শিরোপা অর্জন করেছিলেন ৷ তিনি 5 বার অভিজাত ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব জয় করেছেন ৷
লক্ষ্মীবারে ছিল 14তম ম্যাচ ৷ তার আগে 13 তম ম্যাচ পর্যন্ত সমান পয়েন্ট ছিল দুই গ্র্যান্ডমাস্টারের ৷ নিয়ম অনুসারে আগে 7.5 পয়েন্টে যিনি পৌঁছবেন তিনিই জিতবেন ৷ বৃহস্পতিবার গুকেশ জিততেই কাঙ্খিত পৌঁছে যান 7.5 পয়েন্টে ৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি গুকেশ ৷ কান্নায় ভেঙে পড়েন ৷
পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের পর তাঁর শহর চেন্নাই থেকে আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, গুকেশ ৷ বাবা চিকিৎসক ৷ মা মাইক্রোবায়োলজিস্ট ৷ সাত বছর বয়সে চৌষট্টি খোপে যাত্রা শুরু গুকেশের ৷ অনূর্ধ্ব-9 এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতা দিয়ে জয়যাত্রা শুরু ৷ তারপর সময় যত এগিয়েছে গুকেশের দাপট বেড়েছে ৷
অনূর্ধ্ব-12 স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচটি সোনা জেতেন গুকেশ ৷ 12 বছর 7 মাস 17 দিন বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার ৷ তাঁর আগে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন রাশিয়ার সের্গে কারজ়াকিন ৷ ভারতীয় দাবায় তাঁর উল্কার গতিতে উত্থান সবার নজর কেড়েছিল ৷ 26 বছর পরে আনন্দকে টপকে ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু হন গুকেশ ৷ কলকাতায় খেলতে এসে কার্লসন থেকে প্রজ্ঞানন্দ সকলেই বলেছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ফেভারিট গুকেশ ৷ তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী মিলল অবশেষে ৷