হায়দরাবাদ, 28 মার্চ: ভারতের দক্ষিণে হাইভোল্টেজ প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রের শাসকদল ৷ সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি ৷ সেখানে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য়পাল, যিনি সদ্য ইস্তফা দিয়েছেন, দলের প্রাক্তন এবং বর্তমান সভাপতিরা ৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে ব়্যালি করেই চলেছেন ৷ আর তা হয়তো চলবে প্রচারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ৷
প্রাক্তন রাজ্যপাল ডঃ তামিলিসাই সৌন্দরারাজনকে অন্যতম লোকসভা প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে বিজেপি ৷ গেরুয়া শিবিরের আশা, তিনি সাংবিধানিক পদ থেকে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হলে তাতে আরও বেশি আসন পাওয়া যাবে ৷ তেলেঙ্গানা ও পুদুচেরির রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দরারাজন তেলেঙ্গানা এবং তামিলনাড়ু সংলগ্ন ছোট্ট কেন্দ্রশাসিত অঞলে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন ৷ তামিলিসাই সৌন্দরারাজন পেশায় চিকিৎসক ৷ তাঁর পাশাপাশি বিজেপির এক রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন আইপিএস কে আন্নামালাই এবং আরেক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এল মুরুগানও লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ৷
সৌন্দরারাজন ক’দিন আগেই রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সোমবার তিনি দক্ষিণ চেন্নাই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন ৷ এর আগে বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ কানিমোঝি করুণানিধির বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে প্রায় 3.5 লক্ষ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন ৷
দক্ষিণে 128টি আসন
বিগত কয়েক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘন ঘন দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে যাতায়াত করছেন ৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তিনি দক্ষিণী রাজ্যগুলি থেকে 128টি আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত করতে চাইছেন ৷ এই 128টির মধ্যে 30টিতে বিজেপির হাতেই ৷ আর 27টি কংগ্রেসের দখলে ৷ বাকি কেন্দ্রগুলিতে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সদস্য দলগুলির কেউ না কেউ ৷
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে দল কর্ণাটকে 51 শতাংশ ভোট পেয়ে 28টির মধ্যে 25টিই নিজের ঝুলিতে ভরেছিল ৷ তেলেঙ্গানায় প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 19.45 শতাংশ। 17টি আসনের মধ্যে মাত্র 4টিতে জয়ী হয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি । কিন্তু কেরল, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ- এই তিন রাজ্যের কোনওটিতেই একটিও আসনে পদ্ম ফোটাতে পারেনি বিজেপি । রাজ্যগুলিতে প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল যথাক্রমে 12.93, 3.6 এবং 0.9 ।
হেভিওয়েটদের ভোটযুদ্ধ
2021 সালে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মুরুগান ধরমপুরম কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন ৷ সেই সময় তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি ছিলেন ৷ আর বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল এআইএডিএমকে ৷ তবে তিনি ডিএমকে প্রার্থী কায়ালভিজির কাছে 1 হাজার 393 ভোটে পরাজিত হন ৷ তাঁর ৪ জন দলীয় সদস্য কিন্তু এআইএডিএমকে-র প্রার্থীদের হারিয়ে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন । এরপর মুরুগানকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে উন্নীত করা হয় ।
স্বাভাবিকভাবে দলের সভাপতি পদ ফাঁকা হয়ে যায় । আর সেখানে প্রায় প্যারাশুটে চেপেই উঠে আসেন কে আন্নামালাই ৷ এদিকে ডিএমকে প্রার্থী আর এলানগোর কাছে 25 হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন আন্নামালাই। হাতছাড়া হয় আরাভাকুরিচি আসনটি ৷ তিনি দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরই দ্রাবিড়িয় দলটির সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কে চিড় ধরে ৷ কারণ, কর্ণাটক ক্যাডারের প্রাক্তন এই আইপিএস আধিকারিক বেশি কথা বলার অভ্যাস ৷
এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবির উত্তর তামিলনাড়ুর পাট্টালি মাক্কাল কাচ্চির সঙ্গে জোটে গড়েছে ৷ যদি কোনওভাবে দেশের দক্ষিণে ভালো ফল করা যায় ৷
জোট
লোকসভা ভোট দক্ষিণে জিততে মরিয়া বিজেপি কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে তৃতীয় ফ্রন্টও তৈরি করেছে ৷ এই ফ্রন্টের সদস্য দলগুলি ইন্ধিয়া জননায়াগা কাচ্চি, পুথিয়া নিধি কাচ্চি এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিকে ভাসানের নেতৃত্বে তামিল মানিলা কংগ্রেস ৷
অন্য দলগুলির মধ্যে রয়েছে টিটিভি ধিনাকরনের নেতৃত্বে আম্মা মাক্কাল মুন্নেত্রা কাঝাগাম বা এএমএমকে । তিনি আবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ শশীকলার ভাইপো । আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় জয়ললিতার সঙ্গে শশীকলাও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন । এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জয়ললিতার মৃত্যুর পর তাঁর সব দোষ খারিজ হয়ে যায় । এবার নির্বাচনে তামিলনাড়ুতে ঘুরে দাঁড়াতে দল তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে ।