মালদা, 13 নভেম্বর: লোকসভা নির্বাচনে কার্যত নাক কেটেছে ৷ নিজেদের হিসাব মেলাতে পারেনি গেরুয়া শিবির ৷ এবার মিশন পশ্চিমবঙ্গে 26-এর বিধানসভা নির্বাচন ৷ উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন কী করা যায়, দলীয় সাংসদদের কাছে প্রস্তাব চাইল বিজেপির কেন্দ্রীয় শিবির ৷
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির রাজ্য ও জাতীয় স্তরের অনেক নেতাই পশ্চিমবঙ্গে এসে বার্তা দিয়েছেন, ছাব্বিশের নির্বাচন তাঁদের মূল লক্ষ্য ৷ গত লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে বিজেপির থিংক ট্যাংক পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে, শুধুমাত্র মমতা-অভিষেক কিংবা তৃণমূলের বাপবাপান্ত করলে চলবে না ৷
তাদের দুর্নীতি অস্ত্রও এ'রাজ্যের মানুষ ভোঁতা করে দিয়েছে ৷ মানুষের মন পেতে চাই উন্নয়ন ৷ তাই এবার উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই বিধানসভা নির্বাচনের ময়দানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদ্মনেতারা ৷ রাজ্যের উত্তরে গেরুয়া প্রভাব দক্ষিণের চেয়ে বেশি ৷ তাই প্রথমেই তাঁরা বেছে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গকেই ৷ এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের যাবতীয় নির্দেশ চলে এসেছে ৷
বিজেপি সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের আটটি জেলায় কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে বিজেপির থিংক ট্যাংক ৷ গঙ্গার উত্তরে বিজেপির ছ'জন সাংসদ ৷ দিল্লির নির্দেশে সম্প্রতি এই ছয় সাংসদকে নিয়ে গোপন বৈঠক সেরেছে রাজ্য নেতৃত্ব ৷ সাংসদরাও কাজের খসড়া তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন ৷ খসড়ায় প্রাধান্য পেয়েছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ, চিকিৎসা, পর্যটন, গঙ্গা ভাঙন রোধ, সীমান্ত সুরক্ষার মতো বিষয় ৷
দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা পাহাড় ও ডুয়ার্সের পর্যটন নিয়ে একাধিক রূপরেখা তৈরি করেছেন ৷ আলিপুরদুয়ারের মনোজ টিগ্গা ও জলপাইগুড়ির জয়ন্তকুমার রায়ের নকশাতেও এই দু’টি বিষয় উঠে এসেছে ৷ তার সঙ্গে রয়েছে চা শ্রমিকদের সমস্যা ৷ মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ৷ রায়গঞ্জের কার্তিকচন্দ্র পালের নজরে সেখানে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল ৷ বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার দক্ষিণ দিনাজপুরের রেল ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে চাইছেন ৷
মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, "এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে ৷ আমার এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী ভাঙন ৷ তাই ভাঙন রোধের কাজকেই আমি অগ্রাধিকার দিচ্ছি ৷ তার সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ, চিকিৎসার মতো বিষয় তো অবশ্যই রয়েছে ৷"
গোটা ঘটনাটি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে দলের রাজ্য সভাপতি হিসাবে আমি দলীয় সাংসদদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছি ৷ মূলত উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ৷ প্রত্যেক সাংসদকে তাঁর এলাকার সমস্যা এবং কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়, তার প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে ৷ সবার প্রস্তাব জমা পড়ার পর, তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে ৷"
বিজেপি সূত্রে খবর, সুকান্ত মজুমদার যেটা জানাননি তা হল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে, চলতি নভেম্বরের মধ্যেই উত্তরের ছয় সাংসদের প্রস্তাব একত্রিত করে রিপোর্ট আকারে দিল্লিতে পাঠাতে হবে ৷ ওই প্রস্তাব অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব, কাজ শুরু করে দেওয়া হবে ৷ কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরোধিতা হতে পারে বলে অনুমান রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ৷ সেক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরোধিতা মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে ৷
রাজনৈতিক মহল বলছে, এই নির্বাচনী নকশা কতটা কাজে দেবে, তা সময় বলবে ৷ কিন্তু বিজেপির মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে আবাস প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যকে আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা ৷ আর সেই অস্ত্রে ধার দিয়ে ছাব্বিশের ভোটে ময়দানে নামবে তৃণমূল ৷ আর শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে ভাবলে ঘাসফুল শিবির যে রাজ্য ভাগের ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসবে, তা বলাই বাহুল্য ৷