কৃষ্ণনগর, 31 মার্চ:মোদির গ্যারান্টি জিরো, আর আমাদের গ্যারান্টি মানুষই হিরো ৷ কৃষ্ণনগরে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের উদ্বোধনীতে এটাই বার্তা মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ বিজেপিকে গোহারা হারাবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এ দিন সিএএ, 100 দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ নানা বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির দলকে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷
এ দিন বক্তব্যের শুরুতেই মমতা বলেন, "আজ আমি শুধু বলব, কেন তৃণমূলকে ভোট দেবেন ? কেন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না ?" এই প্রশ্নের জবাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা একহাত নেন বিজেপিকে ৷ আর বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর মূল হাতিয়ারই ছিল সিএএ ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মতুয়া ভাইরা বিজেপির মিথ্যে কথায় ভাবছেন নাগরিকত্ব পেয়ে গেলেন ৷ ক্যা-তে সেনসাসের মেম্বার রেখেছে কেন ? ক্যা মাথা আর ল্যাজা এনআরসি ৷ ক্যা করলেই এনআরসি-তে পড়ে যাবেন ৷ আবেদন করলেই বিদেশি হয়ে যাবে ৷ পরশুও মণিপুরে ক্যা নিয়ে 2 জনকে খুন করা হয়েছে ৷ তার মধ্যে একজন বাঙালি ৷ সোনারপুরে একজন সিএএ-র ভয়ে মারা গিয়েছেন ৷ ক্যা যদি এতই জরুরি, তাহলে কেন এখন সেটা বাস্তবায়িত করল ? 2019 সালেই তো আইন পাশ হয়ে গিয়েছিল ৷"
মমতার কথায়, সিএএ হল ভোটের আগে বিজেপির ভাঁওতা ৷ বিজেপিকে জুমলা পার্টি বলে তোপ দেগে মমতা বলেন, "মোদির গ্যারান্টি জিরো, আর আমাদের গ্যারান্টি মানুষই হিরো ৷ আমরা কিছুতেই ক্যা করতে দেব না ৷ আপনারা সব সরকারি প্রকল্প পান ৷ তাহলে কেন আবেদন করবেন ? নির্বাচনের আগে আবার ওরা ভাঁওতা দিচ্ছে ৷ দরখাস্ত করলেই সব হারাবেন ৷ নাগরিকত্ব হারালে কোনও সরকারি প্রকল্পও পাবেন না ৷ ভুলেও আবেদন করবেন না ৷ আগে বিজেপির প্রার্থীরা আবেদন করুন ৷ তাঁরা কেন আবেদন করছেন না !"
যাঁরা নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের পরে দেশে এসেছেন, তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থারও আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তিনি বলেন, "মতুয়ারা বিশ্বাস রাখুন, আমরা আপনাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে দেব না ৷ দরখাস্ত করা মানেই সব কেড়ে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে ৷ যাঁরা পরে এসেছেন তাঁদের জন্য আমরা বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নির্বাচনের পর ভাবব ৷"
এ দিন 100 দিনের কাজ ও আবাস যোজনার বকেয়া টাকা নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সম্প্রতি 100 দিনের কাজের মজুরি বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র ৷ সে প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, "সে দিন দেখলাম ব্রেকিং দিচ্ছে, 100 দিনের কাজে বাংলায় 7 টাকা করে বাড়ল ৷ তুই তো টাকাই দিস না ৷ এ যেন সর্বঘটের মিথ্যে কথা বলার কাঁঠালি কলা ৷ এরা বিছুটি পাতার দল ৷ 59 লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের 100 দিনের কাজের টাকা আমরা দিয়েছি ৷"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলার দুই প্রার্থীকে ফোন করা নিয়েও এ দিন আক্রমণ শানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "এখন আবার ফোন করে বাজারে ছেড়ে দেয় ৷ তাহলে ফোনের গোপনীয়তা কোথায় থাকল ৷ নিজেরাই পেগাসাস হয়ে বসে আছেন ৷ এ দিকে, যাকে ফোন করছেন, তিনিও স্বাস্থ্যসাথী পান, লক্ষ্মীর ভান্ডার পান ৷ মোদিকে এখন ঝুটা কথা বলতে হচ্ছে ৷ বলছে, জিতলে 3000 দেবে ৷ আরে আগে একশো দিয়ে দেখা ৷ এতদিন দিসনি কেন ? লক্ষ্মীর ভান্ডার রাজ্যের প্রকল্প ৷"
ভোটের আগে ইডি, সিবিআই ও আয়কর দফতরের তৎপরতা বৃদ্ধি নিয়ে এ দিন বিজেপিকে একহাত নেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "এবার নাকি 400 পার ৷ তাহলে কেন এত ইডি আইটি ৷ যিনি বিয়ে করবেন, তিনিই বিয়ের পুরোহিত ৷ কোথাও দেখেছেন ? নির্বাচন করছে বিজেপি ৷ সেন্ট্রালের নির্বাচন ৷ যাদের নির্বাচন তারা নিজেদের জেতাবার জন্য এ সব করছে ৷ কোনও লাভ হবে না ৷ বাংলায় গোহারা হারবে ৷" ভোট প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পরেও কেন নোটিশ পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি, এই প্রশ্ন তুলে মমতা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, "ইডি বা সিবিআই ডাকলে বলবেন ভোটে ব্যস্ত আছি ৷" বিজেপির বিরুদ্ধে এ দিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা বলেন, "বলছে 400 পার, আগে 200 পার হন ৷"
আরও পড়ুন:
- উত্তরে মহারণ ! একইদিনে কোচবিহারে মোদি-মমতা
- অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে 2 লক্ষের বেশি ভোটে হারানোর 'শপথ' বিজেপি নেতার, দেখুন ভিডিয়ো
- ‘রেখা পাত্রকে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব আমরা’, বসিরহাটে মিছিল থেকে হুংকার শুভেন্দুর