কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: রাজ্য সঙ্গীত ও রাজ্য দিবস চালু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ৷ এবার বাংলার জন্য আলাদা পতাকার দাবি উঠল ৷ দাবি তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ৷ বুধবার বিধানসভায় তিনি এই দাবি তোলেন ৷
তাঁর এই দাবি সামনে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে ৷ হুগলির বলাগড়ের বিধায়ক যখন এই দাবি তোলেন, সেই সময় বিধানসভায় বিজেপির কোনও সদস্য উপস্থিত ছিলেন না ৷ ফলে বিধানসভার অন্দরে এই নিয়ে কোনও হইচই হয়নি ৷ পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সমালোচনায় সরব হয় বিজেপি ৷ অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে ৷
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের কোনও রাজ্য সঙ্গীত বা দিবস ছিল না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে এই দু’টিই চালু হয়েছে বাংলায় ৷ এখন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহৃত হয় ৷ এছাড়া পয়লা বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করা হয় ৷ বুধবার বিধানসভায় বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী রাজ্য পতাকা চালুর দাবি তোলেন ৷
তিনি যখন এই দাবি তোলেন, সেই সময়ে আসনে ছিলেন না অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর জায়গায় সভা পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ডেপুটি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী প্রথমে বাংলার সংস্কৃতির প্রসঙ্গ তোলেন ৷ বলেন, ‘‘যেকোনও জাতি বেঁচে থাকে তার ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির জন্য । বাঙালি জাতি এবং সাহিত্যের গুরুত্ব সারা পৃথিবী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারও এর গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে ।’’
এর পর রাজ্য পতাকার বিষয়টি বিধানসভায় উত্থাপন করেন তিনি ৷ বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে আমি যাই । আমরা দেখেছি তাদের নিজস্ব রাজ্য সঙ্গীত আছে । এবং নিজেদের একটা পতাকাও আছে, রাজ্য পতাকা । এতদিন আমাদের কোনও রাজ্যে সঙ্গীত ছিল না । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমাদের একটি রাজ্য সঙ্গীত দিয়েছেন । রাজ্যবাসী তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবে অবশ্যই । কিন্তু আমাদের রাজ্যের কোনও পতাকা নেই । অন্যত্র যখন যাই, তাদের যখন পতাকা দেখি, আমাদের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যদি আমাদের একটা পতাকা হয় ।’’
এর পর ডেপুটি স্পিকার উদ্দেশ্য করে তিনি আবেদন করেন, ‘‘আর সে কারণেই আপনার মাধ্যমে এই মহতী সদনের কাছে এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকেও এই আবেদনটি পৌঁছে দিতে চাই যে আমাদের রাজ্যের জন্য একটি নিজস্ব পতাকা, যা আমাদের সংস্কৃতিকে বহন করবে, তা অবশ্যই আমাদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হোক ।’’
মনোরঞ্জন ব্যাপারীর বক্তব্য নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র ৷ বহরমপুরের এই বিধায়ক বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশ ইস্যুতে আমরা যখন বিধানসভায় বলেছিলাম, কীভাবে মালদা ও মুর্শিদাবাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে, তাতে আমাদের সংবিধান বিরোধী বলা হয়েছিল । আজ মাননীয়ার কাছে আমরা জানতে চাইছি ওঁর বিধায়ক বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বললেন রাজ্যের জন্য আলাদা পতাকা চাই । তাহলে কি উনি দেশ ভাগ চাইছেন ? রাজ্যকে কি ভারতবর্ষের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র ঘোষণা করার দাবি তুলছেন । 370 ধারা লাগু থাকার সময় কাশ্মীরে আলাদা পতাকা ছিল । সেই ধরনের কোনও ভাবনাচিন্তা নিয়ে কি ওঁরা আগামিদিনে এগোচ্ছেন ?’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ একটা সর্বনাশের দিকে এগোচ্ছে । এত দুর্নীতি ৷ এত চুরি । তারপরেও আবার পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা করে দেখানোর একটা চেষ্টা । এটার বিরুদ্ধে আমরা ধিক্কার জানাই । তাঁর (মমতা) দলের বিধায়ক যে কথা বলছেন, তা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী ?’’
অন্যদিকে শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এই ব্যাপারটি পরে শুনেছি ৷ আমরা তো ছিলাম না ৷ ফলে বলতে পারব না উনি কী বলেছেন ৷ সরকারিস্তরে এই ধরনের কোনও প্রস্তাব বা বক্তব্য আমাদের কাছে পৌঁছয়নি ৷ ফলে দলীয়ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া আমি দেব না ৷’’
দলের অবস্থান থেকে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ হলেও ব্যক্তি শঙ্কর ঘোষ এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে ৷ পাশাপাশি তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৷ শঙ্কর বলেন, ‘‘আমার মনে হয় মনোরঞ্জনবাবু ওঁর দলে এই মুহূর্তে একটু কোণঠাসা আছেন ৷ আমার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্ত কথা শুনলে খুশি হন ৷ ওঁর অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন ৷ এখন আর নেই ৷ এখন দেখেন না ৷ ফলে প্রধানমন্ত্রী না হয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতো সুখ ভোগ করার যে সুপ্ত মনোবাসনা, সেটাকে একটু সামনে নিয়ে আসে ৷ তাতে মনোরঞ্জনবাবু দলের মধ্যে হয়তো একটু শ্বাস নেওয়ার জায়গা পাবেন ৷ এই কারণে উনি বলতে পারেন ৷’’
একই সঙ্গে তৃণমূলের দিকেও এই নিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ শিলিগুড়ির বিধায়ক বলেন, ‘‘আরেকটা জিনিস হতে পারে, আমি তো ভাবছি এর পর ওরা আলাদা নোট ছাপার কথা বলবে ৷ কারণ, তৃণমূল মানেই তো নোটের ব্যাপার ৷ ফলে পতাকা কেন, নোটের কথাও ওরা বলতে পারে ৷’’
এই নিয়ে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, যখন বিধায়ক এই মন্তব্য করেছেন সেই সময় বিধানসভায় তিনি ছিলেন না । ফলে ঠিক কী বলেছেন মনোরঞ্জন, তা তাঁর জানা নেই । যদি এই ধরনের মন্তব্য করে থাকেন ওই বিধায়ক, তাহলে তিনি পুরো বিষয়টি তৃণমূলনেত্রীকে জানাবেন । তার পরই তিনি এই মন্তব্য করবেন ৷