মহম্মদবাজার, 21 ফেব্রুয়ারি: ট্যাংরা-কাণ্ডের ছায়া এবার বীরভূমে । একই পরিবারের তিনজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ । আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক মহিলা ও তাঁর দুই শিশু সন্তানকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ ঘটনাটি বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার ম্যানেজার পাড়ার ৷ এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে । এই ঘটনায় সন্দেহভাজন দু'জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷ মৃতার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে পুলিশ ৷
কলকাতায় ট্যাংরা-কাণ্ড নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল রাজ্য ৷ ট্যাংরায় একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে । ফ্ল্যাটের মধ্যে মিলেছিল রোমি দে, তাঁর নাবালিকা কন্যা ও সুদেষ্ণা দে-র রক্তাক্ত দেহ ৷ সেই ঘটনার দু'দিনের মধ্যেই ট্যাংরা-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তিই যেন এবার বীরভূম জেলায় ৷ বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার ম্যানেজার পাড়ায় একটি ঘর থেকে মিলেছে একই পরিবারের তিনজনের রক্তাক্ত দেহ ৷ মা লক্ষ্মী মাড্ডি (25) ও তাঁর দুই সন্তান অভিজিৎ (8) ও রূপালি (10)-র দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ।
মৃতা লক্ষ্মী মাড্ডির ননদ মালতি মাড্ডি জানান, দুই সন্তানকে নিয়ে একাই থাকত লক্ষ্মী ৷ তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকত ৷ এদিন, সকালে লক্ষ্মীদের বাড়ি এসে তিনি দেখতে পান একটা কম্বল ঢাকা দেওয়া রক্তাক্ত দুটি দেহ পড়ে আছে । একটি দেহ খাটের থেকে নীচে পড়ে আছে ৷ এরপরই তিনি চিৎকার করে ওঠেন ৷ তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা ৷ খবর দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট মহম্মাদবাজার থানায় ৷ খবর পেয়ে পুলিশ আসে ।
এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় কমব্যাট ফোর্স-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে । স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে । সকলের দাবি, তিনজনকেই খুন করা হয়েছে । মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে । পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে, তারপর দেহ উদ্ধার করতে দেওয়া হবে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা ৷ এই নিয়েই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় ৷

পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পুলিশ দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায় ৷ তবে কেন পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত না-করে দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হল, এই নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি ৷ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা রাণিগঞ্জ-মোড়গ্রাম 14 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ৷ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয় ৷ একইভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামের আদিবাসী মানুষজন । তাঁদেরও একই দাবি, পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট নন তাঁরা ৷ তাঁরাও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ৷
বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, "এই বাংলায় মা-বোনেরা সুরক্ষিত নয় ৷ এবার দেখছি শিশুরাও সুরক্ষিত নয় ৷ বীরভূম জেলা দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে গিয়েছে । আমি কলকাতায় যাচ্ছিলাম, দলীয় নেতার কাছে খবর পেয়ে এখানে এসেছি ।"
মৃতা লক্ষ্মী মাড্ডির ননদ মালতি মাড্ডি বলেন, "আমি আজ না এলে জানতেই পারতাম না ৷ এভাবেই ঘরে পড়ে থাকত দেহ ৷ ওদের কেউ মেরে দিয়েছে ।" তবে ট্যাংরা-কাণ্ডের পর একই ভাবে বীরভূমে একই পরিবারের তিনজনকে খুনের ঘটনায় ঘুম ছুটেছে পুলিশের ৷
বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, "এখনও পর্যন্ত আমরা দু'জনকে আটক করেছি ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে ৷ অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার), ডিএসপি ডিএনটি-র নেতৃত্বে একটা তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে । প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই ঘটনা ৷ আশা করছি দ্রুত কিনারা করতে পারব । মূল অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে ৷" পুলিশের অনুমান, গ্রামেরই কোনও ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল মৃত আদিবাসী মহিলার ৷ তার জেরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে ৷ তবে সবদিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷