পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / politics

নেহরু-গান্ধি পরিবারের শক্ত ঘাঁটি আমেঠি-রায়বরেলি, প্রার্থী দিতে কেন দেরি কংগ্রেস? - Lok Sabha Election 2024

Lok Sabha Election 2024: এবারের লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ময়দানে হারানো জায়গা ফিরে পেতে মরিয়া কংগ্রেস ৷ এক একটি পদক্ষেপ খুব ভেবেচিন্তে ফেলছে হাত শিবির । এই কারণেই কি এখনও আমেঠি-রায়বরেলি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি কংগ্রেস ?

Lok Sabha Election 2024
নেহরু-গান্ধি পরিবারের শক্ত ঘাঁটি আমেঠি-রায়বরেলি আসন

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 21, 2024, 3:56 PM IST

লখনউ, 21 এপ্রিল:একটা সময় ছিল যখন নেহরু-গান্ধি পরিবারের সদস্যদের দখলে ছিল লোকসভা আসনগুলি ৷ কিন্তু আজ সময় এমন পরিবর্তিত হয়েছে যে গান্ধি পরিবার তাদের আমেঠি ও রায়বেরেলির মতো ঐতিহ্যবাহী আসনগুলিতেও প্রার্থী দিতে দ্বিধা বোধ করছে । আমেঠিতেই 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ এরপর ওয়ানাড় আসনে পাকাপাকিভাবে ঘাঁটি জমিয়েছেন তিনি ৷ 2019 সালে তিনি ওয়ানাড় থেকে নির্বাচনে জিতেছিলেন এবং এবারও তিনি সেখান থেকেই লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ।

2019 সালে সোনিয়া গান্ধি কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে একমাত্র রায়বেরেলি আসনে জয়লাভ করেছিলেন । কয়েক মাস আগে তিনি রাজ্যসভায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । এমন পরিস্থিতিতে গান্ধি পরিবারের শক্ত ঘাঁটি রায়বেরেলির মতো আসনে পরিবার থেকে নাকি বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে, সেই নিয়ে জল্পনা বাড়ছে । একনজরে দেখে নিই লোকসভা নির্বাচনে নেহরু-গান্ধি পরিবারের সদস্যদের রেকর্ড ৷

জওহরলাল নেহরু: প্রথমেই পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কথা বলা দরকার । দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি ৷ প্রথমত, 1952 সালে জওহরলাল নেহেরু ফুলপুর আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যান । 1957 এবং 1962 সালেও নেহেরু এই আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন । তবে 1984 সালের পর থেকে এই আসনে কংগ্রেস একবারও জিততে পারেনি । তারপর 2014 সালে প্রবীণ বিজেপি নেতা কেশব প্রসাদ মৌর্য এই আসন থেকে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ পাশাপাশি 2019 সালে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির কেশরী দেবী প্যাটেল ।

উমা নেহরু: জওহরলাল নেহরুর কাকাতো ভাই শ্যামলাল নেহরুর স্ত্রী উমা নেহেরু ৷ তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন । তিনি 1952 সালে সীতাপুর আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে তাঁর প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন । 1957 সালেও তিনি একই আসন থেকে লোকসভা সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন । 1963 সালের 28 অগস্ট 79 বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয় । তাঁর দুই সন্তান ছিল শ্যাম কুমারী খান এবং আনন্দ কুমার নেহেরু । আনন্দ কুমার নেহরুর ছেলে অরুণ নেহরু রাজীব গান্ধির সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন ।

বিজয় লক্ষ্মী পণ্ডিত: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বড় বোন 1952 সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে লখনউয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং জয়ী হয়ে সংসদে যান । স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল বিজয় লক্ষ্মী পণ্ডিতের ৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকেও জেলে যেতে হয়েছিল । তিনি 1962 থেকে 1964 সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালও ছিলেন । 1979 সালে তিনি রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত হন । 1990 সালে তাঁর মৃত্যু হয় । বিজয় লক্ষ্মী পণ্ডিত মেয়েরা হলেন চন্দ্রলেখা ও নয়নতারা সেহগাল ।

ফিরোজ গান্ধি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধিও 1952 সালে রায়বেরেলি লোকসভা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন । 1957 সালেও তিনি রায়বেরেলি আসনে ভোটে লড়াই করেছিলেন । ফিরোজ মূলত মুম্বইয়ের বাসিন্দা ছিলেন এবং পার্সি ছিলেন ৷ 1942 সালে ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর । জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল ফিরোজ জাহাঙ্গীর । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি এবং সঞ্জয় গান্ধি ছিলেন তাঁর দুই ছেলে । 1960 সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় ।

ইন্দিরা গান্ধি: দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধি ৷ 1967 সালে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন । তিনি রায়বেরেলি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবার সাংসদ হয়েছিলেন । তিনি 1971 এবং 1980 সালেও এই আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন ৷ যদিও এর আগে 1977 সালে তাঁকে সমাজতান্ত্রিক নেতা এবং দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজনারায়ণের কাছে পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল । ইন্দিরা গান্ধি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী । তিনি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সামলেছেন । 1984 সালে 13 অক্টোবর 66 বছর বয়সে দেহরক্ষীর হাতে খুন হন ইন্দিরা ।

সঞ্জয় গান্ধি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধি ৷ তিনি 1977 সালে আমেঠি আসন থেকে প্রথমবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং জনতা পার্টির রবীন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন । তবে 1980 সালে তিনি এই আসন থেকেই জয়লাভ করে সাংসদ হন । এর মাত্র কয়েক মাস পরে 23 জুন মাত্র 33 বছর বয়সে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর । সঞ্জয় গান্ধির স্ত্রী মানেকা গান্ধি এবং ছেলে বরুণ গান্ধি এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় । মানেকা গান্ধি সুলতানপুর আসন থেকে 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন ।

অরুণ নেহরু: জওহরলাল নেহরুর ভাইপো এবং আনন্দ কুমার নেহরুর ছেলে ও রাজীব গান্ধির কাকাতো ভাই হল অরুণ নেহরু ৷ রায়বেরেলি আসন থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন তিনি । 1984 সালেও তিনি একই আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন । 1989 সালে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দলে যোগ দেন এবং বিলহৌর লোকসভা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সাংসদ হন । প্রথম দিকে তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন ৷ কিন্তু ইন্দিরা গান্ধির জোড়জুড়িতে তিনি রাজনীতিতে আসতে রাজি হন । রাজীব গানিধী যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন অরুণ নেহেরু ছিলেন তাঁর উপদেষ্টা । তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন । 2013 সালে 25 জুলাই 69 বছর বয়সে মৃত্যু হয় অরুণ নেহরুর ।

রাজীব গান্ধি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির ছেলে রাজীব গান্ধি ৷ তাঁর ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধির মৃত্যুর পর 1981 সালে আমেঠি আসনে উপনির্বাচনে লড়েন তিনি ৷ জয়ী হয়ে প্রথমবার এই আসন থেকে সাংসদ হন ৷ এরপর 1984, 1989 এবং 1991 সালেও আমেঠি থেকে জয়লাভ করেন তিনি । বলা হয়, রাজনীতিতে রাজীব গান্ধির তেমন আগ্রহ ছিল না । তিনি একটি বিমান সংস্থায় পাইলট হিসাবে কাজ করতেন ৷ কিন্তু দুর্ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধির মৃত্যুর পর তাঁকে রাজনীতিতে নামতে হয় । ইন্দিরা গানিধীর মৃত্যুর পর রাজীব 1984 সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন । 1991 সীলে 21 মে তিনি একটি নির্বাচনী সভায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ।

মানেকা গান্ধি: ইন্দিরা গান্ধির ছোট ছেলে সঞ্জয়ের স্ত্রী মানেকা গান্ধি ৷ তিনি 1984 সালের নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন । তিনি আমেঠি আসন থেকে তাঁর ভাশুর রাজীব গান্ধির বিরুদ্ধে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পরাজিত হয়েছিলেন । 1989 সালে তিনি আমেঠি ছেড়ে পিলিভীত আসন বেছে নেন এবং জনতা দলের টিকিটে জয়ী হয়ে প্রথমবার সাংসদ হন । 1996 সালেও তিনি জনতা দলের টিকিটে পিলিভীত থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন । 1998 ও 1999 সালেও তিনি একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন । 2004 সালে তিনি বিজেপিতে যোগ নেন এবং জয়ী হয়ে লোকসভায় যান । 2014 সালে তিনি পিলিভীত এবং 2009 ও 2019 সালে সুলতানপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং নির্বাচনে জয়ী হন । এবারও তিনি সুলতানপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ।

সোনিয়া গান্ধি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির স্ত্রী সোনিয়া গান্ধি ৷ কংগ্রেসের টিকিটে 1999 সালে আমেঠি আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন । এর পরে তিনি 2004, 2009, 2014 এবং 2019-এও রায়বরেলি থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করেন । 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন 77 বছর বয়সি সোনিয়া গান্ধি । তবে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সংসদে উপস্থিত থাকবেন । কংগ্রেস সভানেত্রী ও ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধির আমলে 2004 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ছিল । তবে এর পর কেন্দ্রে ক্রমশ কংগ্রেসের হাত দুর্বল হতে থাকে ।

রাহুল গান্ধি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব ও সোনিয়া গান্ধির ছেলে রাহুল গান্ধি ৷ 2004 সালে কাকা, বাবা এবং মায়ের উত্তরাধিকারসূত্রে আমেঠি আসন থেকে নির্বাচনের ময়দানে পা রাখেন তিনি । রাহুল গান্ধি 2009 এবং 2014 লোকসভা নির্বাচনেও এখান থেকে জিতেছিলেন ৷ কিন্তু 2019 সালে তিনি বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হন । রাহুল গান্ধি ওই নির্বাচনে আমেঠি আসনের পাশাপাশি কেরলের ওয়ানাড় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন । তাই ওয়েনাড় আসন থেকে জিতে ফের সাংসদ হন তিনি । রাহুল 2024 লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড় থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমেঠি এবং রায়বেরেলি থেকে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি । এমন পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধি আমেঠি থেকে নির্বাচনে লড়বেন না বলেই জল্পনা । তেব ধোঁয়াশা রয়েছে রায়বেরেলিতে আশন নিয়ে ।

আরও পড়ুন:

  1. এবারও কি আমেঠিতে লড়বেন, উত্তর দিলেন রাহুল গান্ধি
  2. রাহুলকে টেক্কা স্মৃতির, সাংসদ হয়েই আমেঠিতে বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত
  3. দেশে দুর্নীতির স্কুল চালাচ্ছেন মোদি, অভিযোগ রাহুল গান্ধির

ABOUT THE AUTHOR

...view details