কলকাতা, 4 জানুয়ারি: ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন শুরু হচ্ছে । কিন্তু, আন্দোলন শুরু করা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকতার অভাব হচ্ছে ৷ একটানা কর্মসূচিতে কলকাতা জেলার খামতি রয়েছে । কলকাতার মতো জেলায় হিন্দিভাষী প্রচারকের দুর্বলতাও রয়েছে । সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনের প্রথম দিনের রিপোর্টে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ।
এই নিয়ে সিপিএমের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ ৷ তবে পার্টির একটি সূত্র বলছে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সামনে জেলার রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদনেও মহিলাদের দলে টানার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব । কার্যত, ঘুরপথে সিপিএম পুরুষতান্ত্রিক, তা উল্লেখ করা হয়েছে ।
ওই সূত্র আরও জানাচ্ছে যে, মহিলাদের দলে অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে সিপিএমকে । কেন মহিলাদের পার্টিতে আনা যাচ্ছে না, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ‘2015-র কলকাতা প্লেনামে বলা হয়েছিল- মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি করার প্রশ্নে দীর্ঘসূত্রিতা, এমনকি বাধার অভিজ্ঞতা আছে' । এই ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে ।
এই প্রসঙ্গে আরজি কর প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, ‘আরজি করের ছাত্রী খুনের পর কলকাতায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে অভূতপূর্ব জনবিক্ষোভ হয়েছিল, তাতে মূলত মহিলারাই অংশগ্রহণ করেছিল । মহিলাদের এই বিপুল অংশগ্রহণ আসলে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই । মহিলারা যে গণ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য শক্তি হয়ে উঠতে পারে, এই ঘটনা তার অন্যতম প্রমাণ ।’ সূত্রের দাবি, আজকে সম্মেলনের প্রথমদিনে প্রশ্নও উঠেছে যে, ‘আরজি কর আন্দোলন এখনও জ্বলন্ত, তা নিয়ে বর্তমানে কোনও কর্মসূচি নেই কেন ?’
মহিলাদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি নিয়ে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে শ্রমিক শ্রেণি থেকে সদস্য নিয়ে আসা যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মহিলাদের মধ্য থেকে পার্টিতে নিয়ে আসা ।’ অথচ, কলকাতা জেলায় অফিস-কারখানা বেশি আছে । যেখানে মহিলাদের সংখ্যা কম নয় । 2011-র জনগণনা অনুযায়ী কলকাতাবাসীর মধ্যে 1000 পুরুষ পিছু 900 জন মহিলা । কিন্তু, সিপিএম কলকাতা জেলার অঞ্চলভিত্তিক এরিয়া কমিটিগুলির পার্টি সদস্যদের মধ্যে তার প্রতিফলন পড়েনি । যে কারণেই 2015-র প্লেনামের প্রসঙ্গ টেনে 25 শতাংশ মহিলাকে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে । সূত্রের খবর, 2020 সালে সিপিএমের কলকাতা জেলায় মহিলা সদস্য মাত্র 13 শতাংশ ছিল । 2024 সালে এসে তা মাত্র 1400-তে ঠেকেছে ।
শুধু মহিলা নয়, শ্রমজীবীদের দলে টানার ক্ষেত্রে ব্যর্থ সিপিএম । মহিলাদের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে যে, ‘জেলা পার্টির মহিলা সদস্যদের শ্রেণিগত ভিত্তি মূলত মধ্যবিত্ত (88 শতাংশ) । মাত্র 12 শতাংশ শ্রমজীবী শ্রেণি থেকে । সমগ্র পার্টিতে শ্রমিক শ্রেণির যে শতাংশ তার থেকে এই শতাংশ অনেকটাই কম । কেন গরিবদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না, তার উত্তর খুঁজছে সিপিএম ।
কারণ ? কলকাতা জেলা সিপিএম মেনেই নিয়েছে যে, আগামিদিনেও মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে খুব তাড়াতাড়ি তারা যে উন্নতি করতে পারবে, তার সম্ভাবনা দেখছে না । কারণ ? প্লেনাম নির্দেশিত 25 শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দূর, গত তিন বছরে যাঁদের এজি সদস্য দেওয়া হয়েছে, তাতে 2022, 2023 ও 2024 সালে মহিলা থেকে আসা সদস্যদের শতাংশ যথাক্রমে 17, 20 ও 19 । প্রার্থী সদস্যদের ক্ষেত্রে এই শতাংশ যথাক্রমে 15, 17 ও 18 । তাই, দুর্বলতা কাটিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ কী নেওয়া যেতে পারে, তা ভাবতে বলা হয়েছে ।
সূত্রের খবর, 2022 সালে জেলার 23টি এরিয়া কমিটিতে মোট 44টি মহিলা শাখায় (একটি এরিয়ায় 4টি, চারটিতে 3টি, দশটিতে 2টি, আটটিতে 1টি করে) 258 জন সদস্য ছিলেন । যা মোট মহিলা সদস্যের 19.6 শতাংশ । 2024 সালে পুনর্নবীকরণের সময়, 2022 সালের এই 23টি এরিয়া কমিটির মধ্যে 2টি এরিয়া কমিটিতে কোনও মহিলা শাখা নেই । সেখানে 3টি শাখা কমেছে । 3টি এরিয়াতে 1টি করে মহিলা শাখা কমেছে । কিন্তু 1টি এরিয়া কমিটিতে 22জন মহিলাদের নিয়ে নতুন করে 4টি শাখা হয়েছে । ফলে 2024 সালে 22টি এরিয়া কমিটিতে 42টি মহিলা শাখায় (একটি এরিয়ায় 4টি, পাঁচটিতে 3টি, সাতটিতে 2টি, ন’টিতে 1টি করে) 264 জন সদস্য আছেন । যা মোট মহিলা সদস্যের 19.4 শতাংশ ।