কলকাতা, 2 মে:তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কুণাল ঘোষকে অপসারণের ঘটনায় এ বার আলোচনায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট । যেখানে সারা বাংলা আতশবাজি সমিতির নেতা বাবলা রায়কে দেখা গিয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে যে, "আপনি দলনেত্রীকে বলুন, কুণালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ।" এই চ্যাট প্রকাশ্যে আসার পর তা নিয়ে যখন রাজনৈতিক মহলে জোরদার চর্চা চলছে, তখন ইটিভি ভারত কথা বলে বাবলা রায়ের সঙ্গে । তিনি স্পষ্টত স্বীকার করে নিয়েছেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন । এবং তিনি নিজেও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি নিয়ে মেসেজ করেছেন । এ দিন বাবলা রায় ইটিভি ভারতকে বলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক । কারওকে তিনি ভয় পান না ।
গতকাল রাত থেকেই সোশাল মিডিয়ায় কুণাল ঘোষকে নিয়ে যে হোয়াটসঅ্যাপের স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে উত্তর কলকাতা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বলছেন, "এক্ষুণি দলবিরোধী কাজের জন্য কুণাল ঘোষকে সাসপেন্ড করা হোক ।" এখানেই শেষ নয়, তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও লিখছেন, "দাদা এইসব জালিদের বের না-করলে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে 31 লাখ সদস্যকে নিয়ে সরে দাঁড়াব ।" এর জবাবও দেন সুদীপ । তিনি বলেন, "এগুলোকে এড়িয়ে যা । তুই পুরো উদ্যমে পয়লা জুনের ভোটটা করা । চার জুন জবাব দেব ।"
এরপর বাবলা রায় লেখেন, "তুমি নেত্রীকে বলো । আমিও মেইল করছি । প্রাক্তন মুখ্যসচিব (হরিকৃষ্ণ) দ্বিবেদিকে বলেছি মুখ্যমন্ত্রীকে বলার জন্য ।" তাঁর এই কথায় জবাব দিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আচ্ছা বলছি ।"
বাবলা রায়ের এই কথোপকথন প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইটিভি ভারত । তিনি বলেন, "আমি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় কারওকে চিনি না ৷ আমি একমাত্র চিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে প্রার্থী করবেন তিনি আমার প্রার্থী । একই মঞ্চে বসে আমার বিরোধীদলের কারও সঙ্গে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ যদি কিছু বলে । আমি বিরোধিতা করবই । যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভালোবাসে, যাঁরা পেটে গামছা বেঁধে দিদির জন্য লড়াই করেন, তাঁদের সকলের কাছে এটা অস্বস্তির ৷ গতকাল থেকে আমার কাছে হাজার হাজার ফোন আসছে । ব্যক্তি কুণালের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই । কিন্তু রোজ এ ধরনের কথা মেনে নেওয়া যায় না । আজকে দেবের সম্বন্ধে বলল, আবার কল্যাণের সম্বন্ধেও বলেছে, ও নিজেকে কী মনে করছে !"
এখানেই শেষ নয়, বাবলা রায় মনে করছেন কুণাল ঘোষ পদে থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি করছিলেন । তাঁর কথায়, "তৃণমূলের সঙ্গে থেকে আমি যদি বিজেপির প্রশংসা করি বা অন্যান্য বিরোধী দলের প্রশংসা করি, তাহলে তো তা দলের ক্ষতিই ।"
গতকাল কুণাল ঘোষের পদ কেড়ে মুখ বন্ধ করার পর দলের কোনও ক্ষতি হল কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বাবলা রায়কে ৷ তিনি বলেন, "আমার মনে হয় না কুণাল ঘোষকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে দলের কোনও ক্ষতি হবে । তিনি যা ক্ষতি করার আগেই করেছেন । তিনি যে বলেছিলেন কালীঘাটে গেলে টাকা পাবেন, এটা কোনও দলের সৈনিক বলেন না । আর আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কেন এ সব কথা বাইরে বলছি । দক্ষিণপন্থী দলে দলে গণতন্ত্র আছে । এ ধরনের বিরোধিতার জায়গা রয়েছে । যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নিই, আমার সঙ্গে কুণালের লড়াই আছে তা তো হতেই পারে ।"
আরও পড়ুন:
- আমার মুখে লাগাম পরানোয় আনন্দিত বিরোধীরা, ক্ষুব্ধ কুণাল; কুইজমাস্টার তকমা ডেরেককে
- বিজেপির তাপস রায়ের প্রশংসার পরই কুণাল ঘোষকে ‘শাস্তি’ তৃণমূল কংগ্রেসের
- বিজেপির তাপস রায়ের প্রশংসা করে কলকাতা উত্তরে ছাপ্পা ভোট আটকানোর ডাক কুণালের