কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি:চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে 100 দিনের কাজে বঞ্চিত মানুষদের টাকা ফেরানোই মূল অস্ত্র তৃণমূলের । শুক্রবার দলের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, সভাধিপতি, সভাপতি-সহ বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । নির্বাচনের আগে নিবিড় জনসংযোগ এবং প্রচারে 100 দিনের কাজে বঞ্চনার বিষয়টিকে সামনে রেখেই দলকে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে দিলেন তিনি ।
নবজোয়ার থেকে শুরু করে দিল্লি দরবার, রাজভবনে অভিষেকের ধরনা থেকে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ - বারবার রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছে রাজ্যের শাসকদল ৷ তারা মানুষকে বোঝাতে চায় যে, এই অবস্থায় বঞ্চিত মানুষদের পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার । কেন্দ্র বঞ্চিত করলেও আগামী পয়লা মার্চের মধ্যে রাজ্যে বঞ্চিত 27 লাখ গরিব মনরেগা উপভোক্তার হাতে তাঁদের হকের টাকা তুলে দেবে রাজ্য । নির্বাচনের আগে প্রচারের মূল অস্ত্রও এই বিষয়টিকে করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে অভিষেক দলের বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়েছেন । মূলত এই কর্মসূচি 100 দিনের কাজের টাকা ফেরানোকে সামনে রেখেই । এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "100 দিনের টাকা, আবাস প্রকল্পের বাড়ি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিচ্ছে । বিজেপি সরকার তা আটকে রেখেছে । তৃণমূল যেখানে টাকা দিচ্ছে, আর বিজেপি বলছে মানুষকে টাকা না দিতে । নির্বাচনের আগে এই বিষয়টি নিয়ে একদম তৃণমূল স্তর পর্যন্ত যেতে হবে ।"
তিনি বলেন, 100 দিনের কাজের টাকা দেওয়ার আগে মানুষ যাতে টাকা পায় তার জন্য আবেদন করতে সাহায্য করবে তৃণমূল কংগ্রেস । 18 থেকে 25 ফেব্রুয়ারি একেবারে শিবির করে এই কাজ করা হবে ।
এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, আগামী 18 ফেব্রুয়ারি থেকে গোটা বাংলায় যতগুলি অঞ্চল রয়েছে, সেই 3343টি অঞ্চলের প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে সহায়তা শিবির তৈরি করা হবে । এই কর্মসূচিতে মানুষের দরজায় গিয়ে বলতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ পয়লা মার্চের মধ্যে টাকা পান ৷ তার জন্য এই সহায়তা শিবির প্রত্যেক অঞ্চলে 18 থেকে 25 তারিখ পর্যন্ত করা হবে । আট দিনের শিবির চলবে সকাল 10টা থেকে সন্ধ্যা 6টা পর্যন্ত । কোথায় এই শিবির হচ্ছে, সেটা মানুষকে আগে থেকে জানাতে হবে । এখানে একটা ফর্ম দেওয়া হবে ৷ সেই ফর্ম মানুষ ফিলাপ করার পর, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে তা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে । শিবির শেষের দুটি দিনের মধ্যেই যাতে সাধারণ মানুষ টাকা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের ।
এই নিয়ে বলতে গিয়ে এ দিন অভিষেক বলেন, "গরিব মানুষের যে টাকা বিজেপি আটকে রেখেছে, সেই টাকাই তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিচ্ছে । এই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধেই তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই । এরা বছরে একবার করে আসবে, মানুষকে নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত করে রেখে বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে বাংলার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করবে ।"
তিনি আরও বলেন, "বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ ও বিধায়করা চিঠি লিখে প্রকাশ্য সাংবাদিক বিবৃতি দিয়ে বলবেন, আমরা চাই বাংলার টাকা আটকে রাখা হোক । এই জমিদারদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই । পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দাঁড়িয়ে আমরা বলতাম, বাংলার বকেয়া এক লক্ষ 15 হাজার কোটি টাকা । আজকের দিনে সেই বকেয়ার পরিমাণ এক লক্ষ 60 হাজার কোটি টাকা । গত পাঁচ বছরে ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সের মাধ্যমে এরা চার লক্ষ 64 হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছে ।" অভিষেকের কথায়, কেন্দ্র বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে আর বাংলার টাকা আটকে রাখছে । এটা চলতে পারে না ।
এ দিন এই বৈঠক থেকে অভিষেক 100 দিনের উপভোক্তাদের সাহায্য করতে বিধায়ক ও সাংসদদের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন । বিধায়কদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আট দিনে প্রত্যেকটা শিবির দু'বার করে অন্তত যেতে হবে তাঁদের । দু'বছর ধরে এই 100 দিনের টাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই আন্দোলনের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে তাঁদের । আট দিনে কম করে 30টা ক্যাম্পে যেতে হবে তাঁদের । সাংসদদের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সংসদ এলাকায় সাতটি করে বিধানসভা রয়েছে ৷ প্রত্যেকটি বিধানসভার পাঁচটি করে ক্যাম্পে যেন তাঁরা যান বলে নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক ।
এ দিন এই সংক্রান্ত নির্দেশ রাজ্যসভায় এবং লোকসভার সাংসদদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও'ব্রায়েনকে । একইভাবে বিধায়কদের ক্ষেত্রে জনসংযোগের কাজ করবেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী এক এবং দুই মার্চ সরকারের তরফ থেকে একটি প্রচার ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে । সেখানে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের উপভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের নিয়ে এই ক্যাম্পে হাজির করাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক ।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরোধী শিবিরের প্রধান অস্ত্র শাসকের দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি-সহ একাধিক বিষয় ৷ তবে তৃণমূলের অস্ত্র অবশ্যই মানুষের জন্য কাজ এবং কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও মানুষের পাশে থাকার লড়াই, এটা এ দিনের বৈঠক থেকে স্পষ্ট ।
আরও পড়ুন:
- ভার্চুয়াল বৈঠকে সন্দেশখালি এড়িয়ে চোপড়া নিয়ে সরব অভিষেক
- 5 বছরে কোন বিধানসভায়, কত টাকা খরচ ? হিসেব তুলে ধরলেন যাদবপুরের সাংসদ
- সন্দেশখালি থেকে 1 কিলোমিটার আগে অধীরকে আটকাল পুলিশ, রাস্তায় বসে বিক্ষোভ কংগ্রেসের