দক্ষিণ এশিয়া আশ্চর্যজনক ও চ্যালেঞ্জের একটি অঞ্চল হিসাবে অব্যাহত রয়েছে ৷ এখানে প্রায়ই আঞ্চলিক অংশীদার ও অতিরিক্ত-আঞ্চলিক শক্তির প্রতিযোগিতামূলক মিশ্রণ দেখা যায় ৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন একসময় বিশ্বের এই অংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও চিন এখন ক্রমবর্ধমানভাবে সেই স্থান পূরণ করছে । অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রভাবশালী শক্তি ৷ তারা প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলে একটি স্থায়ী শক্তি হয়ে উঠেছে। যেহেতু আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলি অতীতের তুলনায় তাদের শক্তিকে একত্রিত করেছে এবং অতিরিক্ত-আঞ্চলিক শক্তিগুলি নতুন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পেরেছে, তাই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের (আইওআর) সামুদ্রিক পরিসরে প্রতিযোগিতা বেড়েছে । ভারত মহাসাগর-সহ অন্য অঞ্চলে চিনের নৌ-শক্তির বৃদ্ধির জেরে ভারতের মতো আঞ্চলিক শক্তি এবং অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কোনও একতরফা আধিপত্য রোধ করতে কোয়াড গঠন করেছে ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চারপাশে সাম্প্রতিক আলোচনা, বঙ্গোপসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপাত আগ্রহের কারণ নিয়ে ভুল রিপোর্ট করা হয়েছে ৷ তবে তা অবশ্যই সমালোচনামূলক মূল্যায়নের যোগ্য ।
ভারত মহাসাগরের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত কৌশলগত ও ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৷ বিশেষ করে নৌ যুদ্ধে, যেখানে মালাক্কা প্রণালী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে । এই উপসাগর দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সীমান্ত ঘেঁষা৷ এর মধ্যে ভারত ছাড়া বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ অশান্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে । নেপাল শাসন পরিবর্তনের প্রায় চিরস্থায়ী অবস্থায় রয়েছে, যা মূলত ভারত-বিরোধিতা দ্বারা পরিচালিত। সামরিক জুন্টা এবং বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা সংঘর্ষের কারণে মায়ানমারও গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে । সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সংকটের পরিস্থিতিতে পড়েছে ৷ যা এশিয়ার গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে । সম্পর্কের এই জটিলতা, শাসন কাঠামো ও প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থের মধ্যেও ভারত অভ্যন্তরীণভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গণতন্ত্রের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি প্রদান করার দিক থেকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ।
দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে জটিল সম্পর্কের দ্বারা চিহ্নিত ৷ এখানে আঞ্চলিক গণতন্ত্রগুলি প্রায়শই তাদের এলাকায় বড়শক্তির প্রতিযোগিতার অনুপ্রবেশকে প্রতিরোধ করে । কোল্ড ওয়ারের সময় ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা হয়েছিল ৷ এর জেরে এই অঞ্চলের দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব এলাকার বিশ্বের দু’টো দেশের ক্ষমতার লড়াই দেখতে হয়েছিল, যা তাদের কাছে অস্বস্তিকর ছিল । এই অস্বস্তির জন্য ভারত মহাসাগরকে বড় শক্তিগুলির প্রতিযোগিতা থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ‘শান্তি অঞ্চল’ ঘোষণার জন্য স্থানীয় দেশগুলি একত্রিত হয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রসংঘে ৷ যদিও মার্কিন-সোভিয়েত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারত মহাসাগরে হয়েছিল, তবে তা 1971 সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় বেশি সতর্কতার সঙ্গে হয়েছিল ।
এই শতাব্দীর শুরু থেকে বৈশ্বিক ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে৷ এতে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিনের মতো বড় শক্তির আপেক্ষিক প্রভাব রয়েছে । বাহারিনে পঞ্চম নৌ-বহর, জিবুতিতে একটি নৌ সুবিধা এবং দিয়েগো গার্সিয়াতে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের ঘাঁটি কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে একটি প্রধান শক্তি হিসাবে রয়ে গিয়েছে ।