বাঁকুড়া, 6 অক্টোবর: ইতিহাস আমাদের বেশিরভাগ সময়ে হাতছানি দেয় ৷ আর সেই ইতিহাস যদি মুঘল সাম্রাজ্যর হয় তাহলে তো কথাই নেই। দেওয়ালের অবস্থা বেহাল। শ্যাওলাপড়া ছাদ, নোনা লেগে যাওয়া প্রত্যেকটা ইট, এরই মাঝে কয়েকটি থামবিশিষ্ট ঠাকুর দালান ৷
মুঘল আমলের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বাঁকুড়ার মালিয়াড়ার চন্দ্রাধূর্য্য রাজপরিবার। সেই রাজপরিবারে পুজোর বিশেষত্ব তুলে ধরল ইটিভি ভারত ৷
মালিয়াড়া রাজ পরিবারের পুজো (ইটিভি ভারত) দিল্লিতে তখন একছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন মুঘল সম্রাট আকবর ৷ তৎকালীন আকবরের মন্ত্রী মানসিং কর্তৃকপ্রাপ্ত সম্মত্তি নিয়ে রাজত্ব শুরু করেন বাঁকুড়ার মালিয়াড়ার এই চন্দ্রাধূর্য্য পরিবার। বংশপরম্পরায় একের পর এক রাজা রাজত্ব করেন ৷ শুরু হয় নিয়মনীতি মেনে দুর্গাপুজো ৷ আজ 500 বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও একইভাবে চলে আসছে মা দুর্গার আরাধনা ৷ জৌলুস আগের তুলনায় কমেছে ঠিকই তবু আভিজাত্য অটুট ৷ কনৌজ ব্রাক্ষণ দেওধর চন্দ্রাধূর্য্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই রাজবাড়ির ঠাকুর দালান ৷ তারপর থেকে ধুমধাম ও আড়ম্বর করে চলতে থাকে দশভূজার অর্চনা ।
500 বছর ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা (নিজস্ব ছবি) তৎকালীল দুর্গাপুজোর বহর-
একটা সময় ছিল, দুর্গাপুজো উপলক্ষে ঠাকুর দালানে টাঙানো হত নানারকম রঙিন ঝাড়বাতি ৷ লখনউ, বারাণসী থেকে আসতেন দেশের নামজাদা গাইয়েরা ৷ পুজোর ক'টা দিন ঠাকুর দালান প্রাঙ্গনে নাচ-গান চলত ৷ গান বাজনার আসর, কামানের তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হত সন্ধিপুজো। আজ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় 500 বছর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়িও আজ অনেকটা ফ্যাকাশে ৷ আগের রেওয়াজ কমে এলেও ঠাকুর দালান আবার ঝাঁ-চকচকে হয়ে নিয়ম মেনে সেজে উঠেছে মায়ের পুজো উপলক্ষে ।
বাঁকুড়ার মালিয়াড়ার চন্দ্রাধূর্য্য রাজপরিবার (নিজস্ব ছবি) পুজোর রীতিনীতি-
এই পুজোয় রয়েছে বেশ কিছু বিশেষ রীতি ৷ দেবীর পুজো মহালয়ার পুণ্য লগ্ন থেকে শুরু হয়ে চলে দশমী পর্যন্ত ৷ সপ্তমীতে দেবীর পুণ্যস্নান থেকে শুরু হয়ে নবমী পর্যন্ত একইভাবে প্রজ্জ্বলিত থাকে হোমকুণ্ড । পরিবারের সদস্য বলছেন, সিংহবাহিনী মা এখানে একাই পূজিত হন ৷ সরস্বতী, লক্ষী এখানে থাকেন না ৷
কালের নিয়মে রাজত্ব হারিয়ে গিয়েছে ৷ যেটুকু আছে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে রয়েছে এই পরিবারের উত্তরসূরিরা। শুধু এই চন্দ্রাধূর্য পরিবার নয় এই রাজবাড়ির পুজোতে মেতে ওঠে পুরো মালিয়াড়া গ্রাম।