টাকি (উত্তর 24 পরগনা), 12 অক্টোবর: পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে টাকির ঐতিহ্যবাহী পুবের জমিদার বাড়ির মাতৃ প্রতিমা পাড়ি দিলেন কৈলাসে !
পুবের রাজবাড়ির ঠাকুর দালান থেকে উমাকে 24 বেয়ারার কাঁধে চাপিয়ে প্রায় দু'কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ইছামতির ঘোষবাবুর ঘাটে । এরপর রীতি মেনে জমিদার বাড়ির মা'কে সাতপাক ঘুরিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হয় টাকির ইছামতিতে ।
পান্তাভাত-কচু শাক খেয়ে কৈলাসের পথে টাকির পুবের রাজবাড়ির উমা (ইটিভি ভারত) পুবের জমিদার বাড়ির উমা কৈলাসে গেলে, তবেই বাকি বনেদি এবং বারোয়ারি মণ্ডপের পুজোর মাতৃ প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে টাকিতে । দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়মই চলে আসছে এখানে । সেই মতো একে একে অন্যান্য প্রতিমাও নিরঞ্জন হয়েছে টাকির ইছামতিতে ।
টাকির পুবের রাজবাড়ির মাতৃ প্রতিমার বিসর্জন (নিজস্ব চিত্র) হিন্দুশাস্ত্র মতে আজ বিজয়া দশমী! তাই, শাস্ত্রীয় রীতি-নীতি এবং সমস্ত উপাচার মেনে পুবের জমিদার বাড়িতে দশমীর পুজো ও মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়েছে । এরপর, নিষ্ঠার সঙ্গে চলে উমাকে বরণ করে নেওয়ার পালা । তাতে অংশ নেন জমিদার বাড়ির মহিলা সদস্যরা ৷
টাকির পুবের রাজবাড়ির সিঁদুর খেলা (নিজস্ব চিত্র) বাদ যায়নি সিঁদুর খেলাও । বয়স্কদের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়া । মা'কে বেয়ারার কাঁধে চাপিয়ে ইছামতির ঘাটে নিয়ে যাওয়া । সবেতেই পুবের জমিদার বাড়ির মহিলাদের সামনে সারিতে থেকে অংশগ্রহণ এক অন্য মাত্রা জোগায় ৷ এমনিতেই টাকির পুবের জমিদার বাড়ির পুজোর একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে । সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি এই রাজবাড়ির পুজোয় এখনও মা'কে বিদায় জানানো হয় পান্তা ও কচু শাক দিয়ে । সেই রীতি সমানে বজায় করে চলেছেন রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম ।
টাকির পুবের রাজবাড়ির মাতৃ প্রতিমার বিসর্জন (নিজস্ব চিত্র) বহু বছরের পুরনো এই পুজোর ইতিহাসও রয়েছে প্রচুর । কথিত আছে, মা যখন কৈলাসে পাড়ি দিয়েছিলেন, তখন শিব তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি বাপের বাড়ি থেকে কী খেয়ে এসেছেন ? তার উত্তরে উমা জানিয়েছিলেন, পান্তা এবং কচু শাক খাওয়ানোর কথা । সেই রীতি মেনে এখনও পুবের রাজবাড়ির দেবী দুর্গা পান্তা ও কচু শাক খেয়ে পাড়ি দেন কৈলাসে । নিরঞ্জন হওয়ার পর মায়ের সেই ভোগ বিতরণ করা হয় এলাকার লোকজনের মধ্যে । এছাড়া দশমীর বিকেলে মঙ্গল যাত্রারও আয়োজন করা হয়ে থাকে এখানে ।
টাকির পুবের রাজবাড়ির মাতৃ প্রতিমার বিসর্জন (নিজস্ব চিত্র) এদিকে, শাস্ত্রীয় মতে আজই পুবের রাজবাড়ির উমা কৈলাসে পাড়ি দেওয়ায় মন খারাপ জমিদার বাড়ির সদস্যদের । এই বিষয়ে জমিদার বাড়ির পরিবারের সদস্য শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলেন, "কাদা এবং গোবর দিয়ে মানুষের আকৃতির একটি মূর্তি তৈরি করে সেটি বলি দেওয়ার জায়গায় মারা হয় শত্রুর বিনাশ ঘটাতে । আর কচু শাক, পান্তাভাত দিয়ে মাকে কৈলাসে পাঠানো হয় । জমিদার বাড়ির যা রীতি-নীতি রয়েছে, তা সবটাই এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয় । এখানে মাকে কোনও যানবাহনে নিয়ে যাওয়া হয় না । 24 বেয়ারার কাঁধে চাপিয়ে মাকে নিরঞ্জন দেওয়া হয় ইছামতির ঘাটে নিয়ে গিয়ে ।"
টাকির পুবের রাজবাড়ির মাতৃ প্রতিমার বিসর্জন (নিজস্ব চিত্র) মায়ের পুজোর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, "রথের দিন এখানে মায়ের কাঠামো পুজো হয় । মহাপঞ্চমীর দিন মায়ের চক্ষুদান, তারপর মায়ের বোধন হয়ে থাকে । মহাষ্টমী এবং নবমী একইদিনে হওয়ায় দু'রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে । মহাষ্টমীর দিন মায়ের ভোগও বিলি করা হয় । টাকি যেহেতু পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান । তাই তাঁদের কথা ভেবে গত তিন বছর ধরে ঠাকুর দালানে মায়ের একটি প্রতিকৃতি রাখা হচ্ছে । যাতে পর্যটকরা দর্শন করতে পারেন মায়ের মূর্তি ।"
পান্তাভাত-কচু শাক খেয়ে কৈলাসের পথে টাকির পুবের রাজবাড়ির উমা (নিজস্ব চিত্র)