নয়াদিল্লি, 22 অগস্ট: পোল্যান্ড থেকে ট্রেনে ইউক্রেন যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ড থেকে 10 ঘণ্টা ট্রেনে যাত্রা করে পরদিন সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিভে পৌঁছবেন মোদি। আর এভাবেই এক কূটনীতির অংশ হতে চলেছেন তিনি। তাঁর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে ফরাসি প্রেসিডেন্টও এভাবেই ইউক্রেন পৌঁছেছেন।
এই ট্রেনটি রেলফোর্স ওয়ান নামে পরিচিত। এই ট্রেন পথ 'আইরন কূটনীতির' অংশ। ইউক্রেন পরিচালিত এই ট্রেনে বিশ্বনেতারা সওয়ার হয়ে ইউক্রেনের প্রতি নিজেদের সহমর্মিতা দেখান। জানা গিয়েছে রাজধানী ওয়ারশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের সবথেকে বড় শহর রেজশ জেসনিকায় পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ট্রেনে যাবে ইউক্রেন।
কেন বিশেষ এই ট্রেন পরিষেবা?
বসার জায়গা থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দিক থেকে এই ট্রেন অন্য ট্রেনের থেকে একেবারেই আলাদা। ট্রেনে কনফারেন্স রুম পর্যন্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই ট্রেন কখন ছাড়বে এবং কখন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছবে তাও গোপন রাখা হয়। ট্রেনের পাশাপাশি রেললাইনের নিরাপত্তার দিকেও বিশেষ নজর থাকে ৷ দিনের বিভিন্ন সময়ে এই রেল লাইনের প্রতিটি অংশে নজরদারি চলে। নিরাপত্তার ভার থাকে সেনার হাতে।
ট্রেন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থার এক প্রাক্তন কর্তার মতে, রেলফোর্স ওয়ানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি হল নিরাপত্তা। কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আচমকাই রেলফোর্স ওয়ানে যাত্রা করেন। যাত্রার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, তা এক ব্রিটিশ দৈনিককে জানিয়েছিলেন এই প্রাক্তন কর্তা। তিনি জানান, এত বড় সফর যে হতে চলেছে তা আগে থেকে কারও জানা ছিল না। পাশাপাশি গোটা সফরের কোনও অংশে নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা যায়নি। ইউক্রেনের দাবি, নিরাপত্তা এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে রাজধানী কিভ থেকে এই ট্রেনেই বেশি সময় কাটান বাইডেন।
কি এই আইরন কূটনীতি?
রাশিয়া হামলা শুরু করার পর পালটা কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে এই রেলপথ শুরু করে ইউক্রেন। বিশ্বের তাবড় নেতাদের ট্রেনে পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেনে নিয়ে গিয়ে রাশিয়ার উপর চাপ তৈরি করাই এই কূটনীতির লক্ষ্য। 2022 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার হামলা শুরুর দু'মাস বাদে এপ্রিলের 8 তারিখ থেকে এই পরিষেবা শুরু হয়।
তার আগে পর্যন্ত ইউক্রেনে নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে এই ট্রেন পথ ব্যবহার করত সামরিক বাহিনী। তবে যুদ্ধ শুরুর পর এই ট্রেন লাইনকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করে সামরিক বাহিনী।
দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অস্ত্র বা অন্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ট্রেন লাইনের ব্যবহার করে ইউক্রেন সেনা। সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রেন লাইন। আর এর মাধ্যমেই বিশ্ব নেতাদের পোল্যান্ড থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে এসে রাশিয়ার ওপরে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করে ইউক্রেন। পাশাপাশি দেশের জনগণকেও এভাবেই বিশেষ বার্তা দেয়া হয়। বলতে চাওয়া হয়, এমন ভয়াবহ যুদ্ধের পরেও ইউক্রেন পৃথিবীর অন্য অংশের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করছে।
বিদেশে গিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের ট্রেন সফরের ইতিহাস
এই প্রথম নয়, এর আগেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীরা বিদেশ সফরে গিয়ে ট্রেনে চড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বেশ কয়েকবার ট্রেনে সফর করেছেন। 2018 সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় জুরিখ থেকে ডাভোস পর্যন্ত ট্রেনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সে বছর অক্টোবর মাসে জাপানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে সঙ্গে নিয়ে বুলেট ট্রেনে সফর করেেন মোদি। এরপর জাপানের সাহায্য নিয়ে ভারতে বুলেট ট্রেন শুরুর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেতে থাকে ৷
স্বাধীনতার পরপর 1948 সালে ব্রিটেন গিয়ে লন্ডন থেকে অক্সফোর্ড পর্যন্ত ট্রেন সফর করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। 1966 সালে মস্কো গিয়ে ট্রেনে চড়ে তৎকালীন অবিভক্ত সোভিয়েত সংঘের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। সে সময়ে লেলিনগ্রাদও ( অধুনা সেন্ট পিটার্সবাগ) গিয়েছিলেন ইন্দিরা ৷ ছেলে রাজীবও প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় 1985 সালে এই একই রুটে যাত্রা করেছিলেন।
2003 সালে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী চিন সফরে গিয়ে বেজিং থেকে সাংহাই পর্যন্ত ট্রেন যাত্রা করেছিলেন। তবে পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেন ট্রেনে গেলে একদিক থেকে অন্য সমস্ত প্রধানমন্ত্রীকে ছাপিয়ে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। এক দেশ থেকে অন্য দেশ ট্রেনে যাওয়ার নজির গড়বেন তিনি। এই রেকর্ড অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রীর নেই।