ঢাকা, 3 ডিসেম্বর: কোনও একটি ইস্যু দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে বাধা হতে পারে না ৷ ভারত, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ৷ মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তলবের পর সাংবাদিকদের জানালেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা ৷
সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে ৷ এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ভারত ৷ অন্যদিকে বাংলাদেশও ভারতকে জানায়, এটা শেখ হাসিনার জমানা নয় ৷ এই চাপানউতোরের মাঝে এদিন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মাকে তলব করে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ৷
বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, "আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে তাঁকে (প্রণয় বর্মা) তলব করেছিলাম ৷ তিনি এসেছিলেন ৷" এর আগে বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হুসেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "তাঁকে (প্রণয় বর্মা) তলব করা হয়েছে ৷" দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) অনুযায়ী এদিন বিকেল 4টের সময় রাষ্ট্রদূত প্রণয় বর্মা বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ে পৌঁছন ৷ ভারতীয় হাইকমিশনারকে সমন পাঠিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত বিদেশসচিব রিয়াজ হামিদুল্লা ৷
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা বলেন, "আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ৷" তিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বহুধা প্রসারিত বলে উল্লেখ করেন ৷ একটা কোনও ইস্যু বা এজেন্ডা এর পথে বাধা হতে পারে না ৷ দু'দেশের মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্য পূরণে ভারত, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ৷ এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে দু'টি প্রতিবেশী দেশ একে অপরের উপর নির্ভরশীল ৷ পারস্পরিক সুবিধার জন্যই দিল্লি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ৷
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনে সতর্ক প্রহরায় রত নিরাপত্তাকর্মীরা (ছবি সৌজন্য: পিটিআই) সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে ৷ সনাতনী নেতার গ্রেফতারি ও তাঁকে জামিন দিতে অস্বীকার করার ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা করে ভারত ৷ এর পাল্টা জবাবে বাংলাদেশ ভারতকে জানায়, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় ৷ এমনকী বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগ, ভারতীয় মিডিয়ায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে ৷
এর প্রতিবাদে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে নেমেছে সাধারণ মানুষ ৷ 2 ডিসেম্বর, সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে ৷ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ভারত ৷ অন্যদিকে এই ভাঙচুরের ঘটনাকে ভারতের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ৷
সোশাল মিডিয়ায় তিনি এর কড়া সমালোচনা করে লেখেন, "সাম্য ও পারস্পরিক স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আমরা তাতে বিশ্বাসী ৷ শেখ হাসিনা নির্বাচনকে বাদ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতমুখী নীতি নিয়ে চলতেন ৷ ভারতের বোঝা উচিত এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয় ৷" গত 5 অগস্ট বাংলাদেশে আন্দোলনের চাপে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা ৷ তারপর থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্তই ৷ আইনি উপদেষ্টা আরও লেখেন, "এই হামলা চালিয়েছে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি ৷ ভাঙচুরের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ৷"
সোমবার ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় ৷ প্রতিবেশী দেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধেও সরব হয় তাঁরা ৷ তখনই অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশন চত্বরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানা গিয়েছে ৷