মালদা, 8 জানুয়ারি: যে মানুষটি দু'দিন আগে বন্ধুর খুন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলতে গিয়ে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন, তিনিই সেই বন্ধুকে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ? জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর দুলাল সরকারকে খুনের ঘটনায় শহর তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির গ্রেফতারিতে এটাই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া মালদাবাসীর ৷
14 দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে বুধবার তাঁকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ পুলিশের তরফে একই আবেদন জানানো হয়েছে আরেক ধৃত স্বপন শর্মার ক্ষেত্রেও ৷ বিচারক দু'জনকেই 3 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷
নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির গ্রেফতারিতে নিহত দুলালবাবুর স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকারের প্রতিক্রিয়া, "প্রথম থেকেই আমি পুলিশি তদন্তের উপর ভরসা রেখেছি ৷ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বকসির উপরও আমার যথেষ্ট ভরসা রয়েছে ৷ 2022 সালে একটি ঘটনা ঘটেছিল ৷ কিন্তু তার জন্য ওরা যে এত বড় কাণ্ড ঘটাবে, সেটা কখনও বুঝতে পারিনি ৷"
তিনি বলেন, "আমার ধারণা, এর পিছনে আরও লোকজন রয়েছে ৷ পুলিশ নিশ্চয়ই তাদের খুঁজে বের করবে ৷ আমি বলব, পুলিশ নিজের কাজ করুক ৷ শ্রাদ্ধের সমস্ত কাজ শেষে আমি দলের সঙ্গে দেখা করব ৷ কথা বলব ৷ কিন্তু স্বপন শর্মার সঙ্গে আমার স্বামীর যে কোনও ঝামেলা ছিল, তা জানা ছিল না ৷ সেটা পুলিশ বলতে পারবে ৷"
জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসির কথায়, "আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যে বা যারা বাবলাদাকে খুনের ঘটনায় জড়িত, তারা যে দলের যত বড় নেতাই হোক না কেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না ৷ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে ৷ নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এই ঘটনায় জড়িত হলে তাঁরও শাস্তি হবে ৷ আমাদের রাজ্যে পুলিশ যে পক্ষপাতদুষ্ট নয়, সেটা তাঁর গ্রেফতারিতেই প্রমাণ পেয়েছে ৷ পুলিশি তদন্তে আমাদের ভরসা রয়েছে ৷ আরও কেউ এই ঘটনার নেপথ্যে থাকলে সে'ও ধরা পড়বে ৷ এনিয়ে আমরা নিশ্চিত ৷"
তবে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির গ্রেফতারিতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জেলা তৃণমূল নেতা তথা ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "দলে থেকে কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে তাঁকে মাফ করা যায় না ৷ দুলাল সরকারকে খুনের ঘটনায় নন্দু তিওয়ারি জড়িত ৷ অনেকদিন ধরেই দুলালকে সরানোর চেষ্টা করছিল ৷ ভোটের পর যেদিন ওদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়, তারপর থেকে সবাইকে বলে বেরিয়েছিল, যেভাবেই হোক, ও একদিন বাবলা সরকারকে মারবে ৷ অনেককেই একথা বলেছে ৷"
তাঁর কথায়, "আর স্বপন শর্মা একজন ভাড়াটে খুনি ৷ সিপিএম নেতা শৈলেন সরকারের ডানহাত ছিল ৷ ও অনেককে খুন করেছে ৷ আমাকেও অনেকবার খুনের চেষ্টা করেছে ৷ একবার আমাকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিল ৷ সেবার বেঁচে গিয়েছিলাম ৷ বোমার আঘাতে আমার বন্ধু মারা যায় ৷ নিজের বাড়ির সামনে নিতাই নামে একজনকে খুন করেছে ৷ সেই মামলায় ও জামিনে মুক্ত রয়েছে ৷ তারপরেও এই ধরনের কাজ করছে ৷"
কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী আরও বলেন, "নন্দু নিজেই একজন প্রভাবশালী ৷ তা না হলে এই খুন করতে পারে ? এলাকা দখল নিয়ে ওদের ঝামেলা ছিল ৷ নন্দু নিজের পরিবারের লোকজন নিয়ে ঝলঝলিয়া এলাকা দখল করতে চেয়েছিল ৷ ওর ওয়ার্ডে বাবলা জিতে যায় ৷ তখন থেকেই বাবলাকে সরানোর পরিকল্পনা করেছিল নন্দু ৷ এক বছর আগে বাবলাকে নিয়ে ওর হুমকি যে এতটা সিরিয়াস হবে, সেটা ভাবিনি ৷"