হাসনাবাদ, 24 ফেব্রুয়ারি: টাকা দিয়ে গোপনে জমির রেকর্ড বদল করা হয়েছে ৷ এই অভিযোগে ধুন্ধুমার-কাণ্ড বাধল উত্তর 24 পরগনার হাসনাবাদের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ৷ অভিযোগ, জমি দখলের প্রতিবাদ করায় বিএলআরও অফিসে তিন প্রতিবাদী মহিলাকে বেধড়ক মারধর করেন দফতরের কর্মীরা ৷
পাশাপাশি বিএলআরও-র চেম্বারে ঢুকে তাঁকে মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ৷ এই ঘনটার জেরে সোমবার রীতিমতো তপ্ত হয়ে ওঠে হাসনাবাদের বিএলআরও অফিস ৷ খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসনাবাদের আমলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের তকিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ দাসের পারিবারিক একটি জমি গোপনে অন্য এক ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে ৷ বিষয়টি পরে জানতে পারেন রাজেশ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ এনিয়ে হাসনাবাদ ভূমি সংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হন তাঁরা ৷ তাঁদের নায্য জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয় ৷
এদিকে রাজেশ দাসের পরিবারের অভিযোগ, দফতরের পক্ষ থেকে সেই জমির রেকর্ড তাদের নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি ৷ শুধু তাই নয়, বাদী-বিবাদী দু'পক্ষকে ডেকে জমির বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনও পদক্ষেপ করেননি বিএলআরও ৷
এদিন দুপুরে রাজেশ দাস ও তাঁর স্ত্রী-সহ দুই বোন হাসনাবাদ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আসেন ৷ এরপর তাঁরা বিএলআরও তপনকুমার বসুর চেম্বারে যান ৷ তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, "কীভাবে তাঁদের জমির রেকর্ড গোপনে বদল হয়ে গেল অন্য ব্যক্তির নামে !" দফতরের কর্মীদের কারসাজি ছাড়া এ কাজ হতে পারে না বলেও ভূমি সংস্কার অধিকারিকেরকে জানান রাজেশের পরিবার ৷ তাঁদের দাবি, "প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বিএলআরও ৷"
তখনই দু-এক কথায় বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায় ৷ অভিযোগ, এরপরই চেম্বারের ভিতরে রাজেশবাবুর পরিবারের সদস্যরা বিএলআরওকে হেনস্তা ও মারধর করেন ৷ দফতরের সিসিটিভি ফুটেজে বিএলআরও তপনকুমার বসুকে হেনস্থা করার দৃশ্য ধরা পড়েছে ! এই ঘটনায় পাল্টা রাজেশের পরিবার অভিযোগ, 'দফতরের কর্মী ও বহিরাগত লোকজন তাঁদের মারধর করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন ৷ তাতে তিন প্রতিবাদী মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন ৷"
এই বিষয়ে রাজেশ দাসের বড় বোন কাবেরী দাস বলেন, "আমাদের পৈর্তৃক জমি গোপনে অন্য ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে ৷ বিষয়টি জানতে পেরে আমরা অভিযোগ করি ৷ কিন্তু ভূমি সংস্কার দফতরের অধিকারিকের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না ৷ আজ তিনি আমাদের অফিসে আসতে বলেছিলেন ৷ এখানে আসার পর আমাদের মারধর করা হল ৷ আমরা অনেকেই আক্রান্ত হয়েছি ৷ আমার ভাইয়ের স্ত্রী গুরুতর জখম হয়েছেন ৷ তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷"
এদিকে, ঘটনার পিছনে দফতরের গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসনাবাদের বিএলআরও তপনকুমার বসু ৷ তিনি বলেন, "বাদী-বিবাদী দু'পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু তার আগেই এই জমির রেকর্ড বদল হয়ে গিয়েছে ৷ একজনের গাফিলতির জন্যই এই কাণ্ড ঘটেছে ৷ যাদের জমি তাঁদের পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল ৷ পুলিশকে আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়েছি ৷ তারা যা করার করবে ৷"
অন্যদিকে, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে হাসনাবাদ থানার পুলিশ পৌঁছয় বিএলআরও অফিসে ৷ সেখানে দু'পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয় তারা ৷ পরে, দু'পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করে হাসনাবাদ থানায় ৷ অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান ৷