গাইঘাটা (উত্তর 24 পরগনা), 8 জানুয়ারি: সরকারি ঋণের জন্য আবেদন করা হয়নি ৷ অথচ ব্যাংক অ্য়াকাউন্টে জমা পড়েছে টাকা ৷ এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটার সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷
যদিও যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে, তাঁদের বক্তব্য শুনলে এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর কিছু নেই বলেই মনে হচ্ছে ৷ বরং রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ৷ কারণ, এলাকার দুই গৃহবধূর দাবি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার পর থেকেই স্থানীয় এক সিভিক ভলান্টিয়ার ওই টাকা চাইছে ৷
অন্যের টাকা ওই দুই বধূর অ্যাকাউন্টে তিনিই জমা করার ব্যবস্থা করেছেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ৷ ওই দুই মহিলার কাছে এমনই দাবি করেছেন তিনি ৷ যদিও সেই সিভিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷ তবে তাঁর স্ত্রী অবশ্য অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ৷
স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা ৷ বিজেপি সরাসরি তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে ৷ তৃণমূলের নেত্রী তথা গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ এই নিয়ে তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন গাইঘাটার বিডিও নীলাদ্রি সরকার ৷
ঘটনাটি ঠিক কী ?
উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থানার সুটিয়া বারাসতের বাসিন্দা কবিতা দাস । তাঁর দাবি, গত মাসে তাঁর ব্যাংকের অ্য়াকাউন্টে 10 হাজার টাকা জমা পড়েছে । কিসের টাকা জমা পড়ল, তা তিনি বুঝে উঠার আগেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যায় স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ার তাপস মণ্ডল । কবিতার অভিযোগ, তাপস তাঁকে গিয়ে বলেন তাঁর অ্যাকাউন্টে একশো দিনের কাজের টাকা ঢুকেছে । টাকা তুলে দিতে হবে । টাকা তুলে দিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছেন ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার ।
ইতিমধ্যে ওই বধূ ব্যাংকে যান ৷ জানতে কোনও সরকারি ঋণের টাকা জমা পড়েছে তাঁর অ্যাকাউন্টে ৷ অথচ তিনি কোনও ঋণের জন্য আবেদনই করেননি ৷ তিনি জানান, এর আগেও একবার তাঁর অ্যাকাউন্টে 10 হাজার টাকা জমা পড়েছিল ৷ সেই টাকা তাপস মণ্ডল নিয়ে নিয়েছিল ৷ একই বক্তব্য স্থানীয় বাসিন্দা জোৎস্না দাসেরও ৷ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও এভাবেই টাকা জমা পড়েছিল ৷ আর তা চেয়ে বারবার বাড়িতে আসছেন তাপস মণ্ডল ৷
এই নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এখনও কোনও অভিযোগ করেননি ওই দুই মহিলা ৷ তাঁদের বক্তব্য, তাপস সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার পাশাপাশি এলাকার তৃণমূল নেতা ৷ তাই তাঁরা এই নিয়ে কোথাও অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছেন ৷ যদিও এই অভিযোগ জানানো হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন গাইঘাটার বিডিও নীলাদ্রি হালদার ৷
বিষয়টি ঠিক কী হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের ইলা বাগচী ৷ তাঁর দাবি, তাপস মণ্ডল এই ধরনের কাজ যদিওবা করে থাকেন, তার পরও তৃণমূল দলগত তা সমর্থন করে না ৷ তবে এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে ৷ সরব হয়েছে বিজেপি ৷
স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আনন্দকুমার বালার দাবি, তাপসের স্ত্রী স্থানীয় মহিলা সমিতির দায়িত্ব রয়েছেন । তিনি বিভিন্ন সময়ে এই সমস্ত মহিলাদের দিয়ে কাগজ স্বাক্ষর করে নিতেন । তারপরে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হতো । যা এই মহিলারা জানতেন না । সিভিক ভলেন্টিয়ারদের দিয়ে এই সমস্ত কাজ করিয়ে তার ফায়দা লুটতো তৃণমূলের নেতারা । তাপসের তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে ।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, তার কোনও বক্তব্য মেলেনি ৷ কিন্তু তাঁর স্ত্রী সরস্বতী মণ্ডল অবশ্য তাপসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন ৷ তবে সেই টাকা একশো দিনের কাজের টাকা বলে দাবি করেছে তিনি । তাঁর আরও দাবি, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া হবে, সেই কথা ওই মহিলারা জানতেন । তাঁরা সব জেনেই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিলেন ।