নয়াদিল্লি, 23 জুন: দেশের মানুষ চায় অপরাধ-মুক্ত রাজনীতি। রাজনীতিকে অপরাধ মুক্ত করতে গেলে এমন ব্যক্তিদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিতে হবে যাঁরা নিজেরা কোনওভাবেই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। ভোট দেওয়ার জন্য এমন নেতা পাওয়া দেশের অধিকার, পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তলের।
2020 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর-পূর্ব দিল্লি-সহ রাজধানীর কয়েকটি অংশে সংঘর্ষের পরিস্থিত তৈরি হয়। সেই ঘটনায় 53 জনের প্রাণ গিয়েছিল। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে। হিংসায় মদত দেওয়া থেকে শুরু করে একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয় বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাঁদেরই একজন তাহির হুসেন। আপাতত তিনি জেলেই রয়েছেন।
এবারোর দিল্লির নির্বাচনে এআইএমআইএম তাঁকে প্রার্থী করেছে । প্রচার করতে চেয়ে জামিনের আবেদন জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাহির। সেই মামলার শুনানিতেই এই মন্তব্য করেন বিচারপতি। বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তলের পর্যেক্ষণ, তাহিরের বিরুদ্ধে শুধু হিংসার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে এমনটা নয়। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক অঙ্কিত শর্মার মৃত্যর ঘটনাতেও তিনি অভিযুক্ত ।
দুই বিচারপতির দুই মত
বুধবার এই মামলার শুনানির সময় দুই বিচারপতির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয় । বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তল জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন । কিন্তু এই ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি আসাদউদ্দিন আমানুল্লা মনে করেছিলেন জামিনের আবেদন নায্য। কিন্তু দুই বিচারপতি একমত না হওয়ায় আপাতত জেলেই থাকতে হবে তাহিরকে। জামিন মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ তৈরি করবেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ।
জামিনের আবেদনের পক্ষে রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি আমানুল্লা মন্তব্য করেছিলেন, "অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুলি আমি খতিয়ে দেখেছি । সেগুলি যে গুরুতর তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই । তবে এখনও পর্যন্ত এগুলি সবই অভিযোগ ।" এই মামলায় দিল্লি পুলিশের হয়ে সওয়াল করছিলেন ভারত সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে, জামিন খারিজ করে বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তল জানান, তাহিরের বিরুদ্ধে মোট 11টি অভিযোগ আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হিংসার। এই তথ্য স্বভাবতই প্রশ্ন তুলে দেয়, তিনি আইন মেলে চলতে পছন্দ করেন কি না ?
বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তলের মন্তব্য
এখানেই বিচারপতি মিত্তল আরও বলেন, " নাগরিকদের এক স্বচ্ছ দেশ উপহার দেওয়ার এটাই সেরা সময়। স্বচ্ছ দেশের অংশ স্বচ্ছ রাজনীতি ।রাজনীতিকে স্বচ্ছ রাখতে হলে যাঁদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল নয় তাঁদের নির্বচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা উচিত। পাশাপাশি যাঁরা জেলে আছেন অথবা জেল থেকে মুক্ত হয়ে সরাসরি ভোটে অংশ নিতে চাইছেন তাঁদের অবশ্যই নির্বচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে হবে। "
পাশাপাশি তাহিরকে জামিন না দেওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনি জানান, এখন ভোটের প্রচার করতে সবসময় সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোনও মানে নেই । সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে অন্য মাধ্যমকে ব্যবহার করেও প্রচার করা যায়। তবে সবমিলিয়ে দুই বিচারপতি একমত না হওয়ায় আপাতত জেলেই থাকতে হবে তাহিরকে । প্রধান বিচারপতির তৈরি তিন সদস্যের বেঞ্চ ঠিক করবে তাহিরকে জেল থেকেই ভোটে লড়তে হবে নাকি তিনি ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারের সুযোগ পাবেন ?