কলকাতা: গুরু পূর্ণিমা তিথির মাহাত্ম্য অনস্বীকার্য । সনাতন ধর্ম বা যে কোনও শাস্ত্র যা ভগবানের শ্বাস থেকে সৃষ্ট কোনও মানুষের দ্বারা সৃষ্ট নয়, যার ব্যাপ্তি অসীম, জীব যেদিন সৃষ্টি হয়েছে সেদিন থেকেই সনাতন ধর্মের উৎপত্তি। গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য সমস্ত শিষ্যদের কাছে অনেক বেশি । কারণ এদিন তাঁরা নিজ নিজ গুরুকে পূজা করেন এবং শ্রীগুরুর পাদপদ্মে নিজেকে অর্পণ করেন ।
আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক শুভদীপ রায় চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায়, শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে গুরুপূজায় চারটি উপাদান অবশ্যই প্রতিটি শিষ্যকে দিতে হয়, তবেই গুরুপূজা সার্থক । সেই চারটি উপাদান হল- আসন, বসন, ভূষণ এবং বাহন। তাই গুরু পূজার উপযুক্ত আসন হল- হৃদয়াসন । অর্থাৎ হৃদয় রূপী আসন দিতে হবে শ্রীগুরুকে । আর গুরুর প্রতি অনুরাগের বসন প্রদান করতে হবে শিষ্যকে । সবসময় যেন গুরুর প্রতি অনুকূলে চলতে পারি, প্রতিকূল যেন না হয় এবং তাঁর প্রতি সেবার উৎকণ্ঠা এই নিরন্তর অনুরাগের বসনই গুরু পূজার উপযুক্ত । এর পাশাপাশি, নিরন্তর ভগবানের শ্রীনামের ভূষণ দিতে হবে ও গুরুর আজ্ঞা যেন বহন করে চলা যায়, গুরু আজ্ঞা যেন প্রতিমুহূর্তে ও প্রতিকাজে জীব পালন করতে পারে সেই বাহনই গুরু পূজার উপযুক্ত উপাচার ।
সদগুরুর পূজার উপাচার হওয়া উচিত পারমার্থিক উপচার, কারণ গুরুর সঙ্গে শিষ্যের সম্পর্ক জন্মজন্মান্তরের ৷ ঈশ্বর চেয়েছেন তাই সঠিক সময়ে মিলিয়ে দিয়েছেন । তাই কোনও জাগতিক সম্পর্ক নয় তাঁর সঙ্গে ৷ সবটাই পূর্ব নির্ধারিত এবং দিব্যজ্ঞান সংগ্রহের সন্ধানে । তাই সমস্ত পরনিন্দা পরচর্চা ছেড়ে এবং মায়ায় জড়িয়ে না পড়ে পারমার্থিক শান্তিলাভের চেষ্টায় গুরুর সান্নিধ্যে এলেই তবেই ভগবানের সঠিক পূজা সম্ভব এবং গুরুপূজাও সম্ভব ।
আরও জানা যায়, সনাতন ধর্মে জীবের শিক্ষাদানে যাঁর অবদান চিরস্মরণীয়, তিনি হলেন ভগবান বেদব্যাস । দ্বাপরযুগের শেষ দিকে পরাশর মুনি ও মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর পুত্র রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন ঋষি ব্যাসদেব । শাস্ত্রী তাঁকে ভগবানের চব্বিশ অবতারের এক অবতাররূপেই বর্ণনা করেছেন । বলাবাহুল্য ভগবান বেদব্যাসের আবির্ভাব হয় আষাঢ়ী পূর্ণিমাতিথিতে ও সনাতনধর্মে গুরুরূপে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি যা অন্যত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না । তাই বেদব্যাসের জন্মতিথিকেই গুরুপূর্ণিমা বলে উল্লেখ করা হয় । অর্থাৎ কলিযুগে যিনি আদিগুরু রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁকেই ভগবানের প্রেরিত অবতারস্বরূপ উল্লেখ করা হয় । কারণ, জীব কীভাবে সেই অনন্ত আনন্দের সন্ধান পাবে বা পারমার্থিক শান্তিলাভ করবে সেই পথ সন্ধানে সবচেয়ে বেশি ব্যাকুল ছিলেন গুরু বেদব্যাস ।