কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: 48তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতেও আরজি কর আন্দোলনের বার্তা । মূলত সিপিএম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের বুক স্টল যুবশক্তি এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের বুক স্টল ছাত্র সংগ্রামে আরজি করের ঘটনার বিচার চাওয়া হয়েছে ।
এ বছর যুবশক্তি পত্রিকার স্টল নম্বর 508 এবং ছাত্র সংগ্রাম পত্রিকার স্টল নম্বর 342 - দুটোরই থিমে আরজিকর আন্দোলন ও আগামীর আন্দোলনের বার্তা । যুবশক্তি স্টলের থিমে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, "তিলোত্তমার রক্ত চোখ সবার চোখের আগুন হোক ৷" দুটি প্রবেশদ্বারের একদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাট-আউটের নীচে তারই কথা লেখা রয়েছে - 'এ লড়াই লড়তে হবে এ লড়াই জিততে হবে'। আর আরেক দিকে রয়েছে সীতারাম ইয়েচুরির কাট আউট । তার নীচেই সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, "সংবিধান রক্ষার লড়াই ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো মজবুত করার লড়াই চলবে ৷"
তবে দলীয় সংগঠনের যা অবস্থা তাতে শুধুমাত্র আরজি কর কেন্দ্রিক কিংবা স্যালাইন কাণ্ড নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না । সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে যে লড়াইয়ের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম । আজ থেকেই রাজ্যজুড়ে দলের ছাত্র-যুব গণ সংগঠনগুলোকে একাধিক ইস্যুতে রাস্তায় নামার বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷
বুক স্টলের থিমের বিষয়ে ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত বলেন, "গোটা রাজ্যের মানুষই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে । তিলোত্তমার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন । এখনও তিলোত্তমার যথার্থ বিচার হয়নি । অথচ হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নেমেছিল । রাত দখলে নেমেছিল । তাই আমরা বার্তা দিতে চাইছি, যাঁরা বইমেলাতে ঘুরতে আসেন, তাঁরা যেন আরজি করের ঘটনা ভুলে না যান । তাঁরা যাতে অপরাধীদের গারদের ভিতরে প্রবেশ করাতে আরও বেশি বেশি করে প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ৷ সেটাই মনে করাতে আমাদের থিম, এটা রাখা হয়েছে । তিলোত্তমার বিচার যে হল না, সেই বিচার পাওয়ার আগুনটা যাতে জ্বলতে থাকে, তার জন্য এই থিমটাকে বেছে নেওয়া ।"
তিনি জানান, স্টলের সামনে নিয়মিত আলোচনা ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে । তাঁর কথায়, "আরজি কর ইস্যুতে একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে, সে সমস্ত বইয়ের সম্ভার রয়েছে আমাদের স্টলে । আমরা চাই সাধারণ মানুষ এই বই কিনুক, পড়ুক, জানুক রাজ্যের শাসকের বর্তমান অবস্থা । কারণ আরজি কর শুধুমাত্র একটা ঘটনা নয়, পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি কিংবা আরজি করের পরবর্তীতেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের উপর, শিশুদের উপর অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে ।"
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, "কলকাতা বইমেলাতে প্রতিবছরই একটা মুক্তমঞ্চ থাকে । এবার সেটা রাখা হয়নি । অথচ এই মুক্ত মঞ্চটা ছিল আলাপ-আলোচনার একটা অন্যতম কেন্দ্র । সেটা বন্ধ করে দেওয়া হল । গোটা বইমেলার একটা অংশে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট নিয়ে বসত । এবার তাদের বসতে দেওয়া হল না । বাঁশের কাঠামো দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে । একটা সেমি কর্পোরেট বইমেলায় রূপান্তরিত করতে চাইছে বর্তমান শাসক ।"
তিনি জানান, তাঁদের স্টলে তিলোত্তমার বিচারের লড়াইয়ের উপাখ্যান তুলে ধরা হয়েছে । একইভাবে আগামীর লড়াইয়ের বার্তাটা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াও উদ্দেশ্য । তাঁর কথায়, "এ কারণেই আমাদের স্টলে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, তিলোত্তমা ভয় নাই ক্যাম্পাস ছাড়ি নাই । তিলোত্তমা এবং ক্যাম্পাস এই দুটো শব্দকে আমরা তুলে ধরতে চাইছি বা সামনে রাখতে চাইছি । কারণ ক্যাম্পাসের ভিতরেই তিলোত্তমাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে । অর্থাৎ ক্যাম্পাস সুরক্ষিত নয়, নিরাপদ নয় । সেই ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত করার দাবি এবং ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমরা আছি, ছিলাম, থাকব ।"