কলকাতা: বর্ষাকাল মানেই মশার উৎপাত আর মানুষের অসুস্থ হওয়ার ভয় । সবাই জানে বর্ষাকালে মশা ও পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে । এর ফলে মশাবাহিত রোগ ও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সতর্কতা যথাযথভাবে মেনে চললে মশাবাহিত রোগ থেকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দিল্লির লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ আশরির কোরেশি বলেন, "প্রতিবছর বর্ষাকালে হাজার হাজার মানুষ মশাবাহিত রোগের শিকার হন ৷ কোনও কোনও মশাবাহিত রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।"
শুধু তাই নয়, এমন কিছু মশাবাহিত রোগ রয়েছে যেগুলি থেকে নিরাময় হওয়ার পরও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে দেখা যায় ৷ ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা-সহ আরও নানা সমস্যা হতে পারে।
মশার কামড় দ্বারা সৃষ্ট রোগ:ডাঃ কোরেশীর মতে, মশার কামড়ে কিছু বিশেষ রোগ হয়, তাদের কারণ ও লক্ষণগুলি নিম্নরূপ।
ডেঙ্গি জ্বর:ডেঙ্গি জ্বর ভাইরাস দ্বারা হয় ৷ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে । ডেঙ্গি লক্ষণবিহীন সংক্রমণ বা হালকা অসুস্থতা থেকে শুরু করে গুরুতর হেমোরেজিক জ্বর এবং ডেঙ্গি শক সিনড্রোম পর্যন্ত হতে পারে । যা কখনও কখনও মারাত্মক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে ।
উপসর্গ: হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, ত্বকে ফুসকুড়ি ইত্যাদি ।
ম্যালেরিয়া:ম্যালেরিয়া হল প্লাজমোডিয়াম প্যারাসাইট দ্বারা সৃষ্ট একটি মারাত্মক মশাবাহিত রোগ ৷ এটি মহিলা অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে হয় । মশা কামড়ের পর 10 দিন থেকে 4 সপ্তাহ পর থেকে এই লক্ষণগুলি দেখা যায় ৷
লক্ষণ:জ্বর, কাঁপুনি, ঘাম, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি ।
চিকুনগুনিয়া:চিকুনগুনিয়া হল একটি ভাইরাল রোগ যা চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এবং সংক্রমিত মশার কামড়ে ছড়ায় । এই রোগটি ডেঙ্গি জ্বরের মতোই কিন্তু মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম ।
লক্ষণ:জ্বর, তীব্র জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, ত্বকে ফুসকুড়ি ।
জিকা ভাইরাস:সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে অনেক খবর বেরিয়ে আসছে । প্রকৃতপক্ষে জিকা ভাইরাসও একটি মশাবাহিত সংক্রমণ যা মূলত এডিস মশা দ্বারা ছড়ায় ৷ যা দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় কামড়ায়। এটি ডেঙ্গি জ্বর বা ইয়োলো ফিভার সঙ্গে খুব মিল। তবে এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক ৷ কারণ এটির সংস্পর্শে আসা গর্ভবতী মহিলাদের বাচ্চাদের মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য জন্মগত ত্রুটিগুলি বিকাশ করতে পারে ৷ পাশাপাশি এটি অকাল জন্ম এবং গর্ভপাতের কারণ হতে পারে । এছাড়াও, জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের মধ্যে গুইলেন-বারে সিনড্রোম, নিউরোপ্যাথি এবং মাইলাইটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে ।
উপসর্গ: হালকা জ্বর, ফুসকুড়ি, চোখ লাল হওয়া, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি ।
মশার কামড় প্রতিরোধের উপায়: এই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই উপকারী হতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
যদি সম্ভব হয়, সকাল-সন্ধ্যা বা এমনকি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সর্বদা সারা শরীর ঢাকা থাকে, এমন পোশাক পরুন । এছাড়া হালকা রঙের পোশাক পরুন কারণ মশা গাঢ় রঙের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় ।
ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য । বাড়িতে মশা স্প্রে, কয়েল ব্যবহার করতে পারেন ।
বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় এবং বাড়িতে মশার উপদ্রব বেশি হলে ঘরের ভিতরেও ত্বকে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে লাগান । পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন ও বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না । কারণ জমা জলেই মশা বংশবিস্তার করে। কুলার, ফুলদানি এবং জলের ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করুন ৷ আপনার বাড়ি ও আশেপাশের এলাকা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
রোগের লক্ষণ:ডাঃ আশির কোরেশি ব্যাখ্যা করেন, "এমন জায়গায় বসবাসকারী মানুষ যেখানে খুব বেশি মশা থাকে বা যে কোনও মশাবাহিত রোগ প্রচলিত থাকে বা এমনকি স্বাভাবিক অবস্থায়ও থাকে, তারা জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, জয়েন্টে ফোলাভাব, বমি বা ত্বকে ফুসকুড়িতে ভুগতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। সময়মত চিকিৎসার মাধ্যমে, এই রোগের গুরুতর পরিণতি এড়ানো যায় ।"
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য নির্দিষ্ট গবেষণা থেকে প্রাপ্ত এবং এর মতামতও ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষক-বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত ৷ শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যাদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷