কলকাতা, 19 অগস্ট: নাট্যজগৎ এবং সিনেমাজগতের কিংবদন্তি অভিনেতা উৎপল দত্ত ৷ বাংলা-হিন্দি সিনেমা ও নাট্যজগতে তাঁর অবদান আজও অমলিন ৷ তুখোড় এই অভিনেতার সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর ৷ কাজ করেছেন 'পদ্মানদীর মাঝি', 'কলঙ্কিনী', 'আগন্তুক'-এর মতো ছবিতে ৷ শিল্পী উৎপল দত্তের প্রয়াণ দিবসে স্মৃতিতে ভাসলেন মমতা শঙ্কর।
অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর (ইটিভি ভারত) নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রী মমতা বলেন, "আমি উৎপল দা'র সঙ্গে কাজ করেছি অনেক পরে। তার অনেক আগে থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে ওঁর আলাপ। যত নাটক হত বাবা মাকে ডেকে দেখাতেন উনি। ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম ছবি 'কলঙ্কিনী'। ওই ছবির শুটিংয়ের সময়ের একটা অভিজ্ঞতার কথা আমি কোনওদিন ভুলব না।"
মমতা শঙ্কর বলেন, " আমরা সবাই শটের আগে বসে আছি, উৎপলদা তখন খৈনি সেজে খাচ্ছেন। আমি বললাম কী খাচ্ছেন? বললেন, খৈনি। তুমি খাবে? আমি বললাম, হ্যাঁ খাব। আমি তার আগে কোনওদিনই খৈনি, জরদা কিছুই খাইনি । আমাকে উৎপলদা বলে দিয়েছিলেন গিলবে না ৷ আর আমি গিলে ফেলেছিলাম। আর ব্যস, মাথা ঘুরতে শুরু করে। তার একটু পরেই অমল পালেকরের সঙ্গে আমার গানের একটা দৃশ্যের শুট। আমাকে লিপ দিতে হবে। আমার মাথা ঘোরানো দেখে উৎপলদা হেসেই লুটোপুটি। বললেন, 'তুমি গিললে কেন? আমি তো তোমাকে প্রথমেই বললাম গিলবে না ৷' আর আমার তো অবস্থা যায় যায়। গানের সিনে লিপ দেওয়া যায় ওভাবে?"
এরপর মমতা শঙ্কর সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'আগন্তুক' ছবিতে অভিনয় করেন উৎপল দত্তর সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে বলেন, "মামা-ভাগ্নীর গল্প আগন্তুক। আমার সৌভাগ্য যে ওই ছবিতেও আমি উৎপল দা'র সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। মাণিক কাকা (সত্যজিৎ রায়) আমাকে এই ছবিতে অভিনয়ের কথা বলেন। তখন আমি বিদেশে। আমার, টিটো দা'র (দীপঙ্কর দে), উৎপল দা'র অভিনয়ের কথা বলেন। আমি রাজি হয়ে যাই। উৎপলদা যেমন জ্ঞানী মানুষ তেমনই মজার ছিলেন। মাণিক কাকার সেটে সেভাবে আড্ডা মজার সুযোগ পাওয়া যেত না। কিন্তু 'কলঙ্কিনী'র সময়ে আমরা খুব আড্ডা মেরেছি। সবার সঙ্গে মজা করতেন উৎপলদা। উৎপল দা'র সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি আমি। ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা আমার চিরকাল থাকবে।"
1929 সালের 29 মার্চ অবিভক্ত ভারতের অর্থাৎ বাংলাদেশের বরিশালের কীর্তনখোলায় জন্ম শিল্পী উৎপল দত্তের ৷ পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল কুমিল্লায়। তবে, শিলংয়ে মামার বাড়িতে তাঁর জন্ম হয় বলে নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন অভিনেতা ৷ বাংলার পাশাপাশি একাধিক হিন্দি ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শক আজও মনে রেখেছেন ৷ গোলমাল, নরম গরম, রঙ্গ বিরেঙ্গী ছবির জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার বেস্ট কমেডিয়ান অ্যাওয়ার্ড ৷ 1993 সালের 19 অগস্ট, বাংলার বিনোদন দুনিয়াকে ছেড়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন ভার্সেটাইল অভিনেতা-পরিচালক উৎপল দত্ত ।