কলকাতা, 9 জুন:রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বিনোদন জগতের অন্যতম স্টলওয়ার্ট রামোজি রাওয়ের ৷ পাশাপাশি রামোজি গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা পদ্মবিভূষণে সম্মানিত প্রয়াত চেরুকুরি রামোজি রাওয়ের মৃত্যুতে অন্ধ্রপ্রদেশে দু'দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে ৷ তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত রাজনীতি থেকে বিনোদন দুনিয়া । বন্ধুর প্রয়াণে ইটিভি ভারতের কাছে স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ । পরিচালক ইটিভি ভারতকে বলেন, "অনেকটা দেরি হয়ে গেল বন্ধুকে নিয়ে বলতে তবু আমি বলতে চাই তাঁর কথা । আমার থেকে বয়সে বড় হলেও আমি বন্ধুই বলি ওঁকে । বন্ধুর মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষটি ।"
স্মৃতির পাতা উলটে অনেকগুলি বছর পিছনের দিকে ফিরে যান পরিচালক ৷ গৌতম ঘোষের কথায়, "আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন আগে আলাপ ওঁর (রামোজি রাও) । আমি আমার জীবনের প্রথম কাহিনিচিত্র নির্মাণ করি হায়দরাবাদে ৷ তেলেঙ্গানা কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে 'মা ভূমি'। একটা বড় ক্যানভাসের ছবি । ওদিকে আমাদের সীমিত বাজেট । সেই সময়ে অনেক ইয়ং প্রোডিউসার ছবিটা করার জন্য এগিয়ে আসেন । তো আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলাম সেদিন । একজন বাঙালি ছেলে হয়ে তেলেঙ্গানায় গিয়ে সেখানকার কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ছবি করার পরিকল্পনা করি । ভাষা ছিল হিন্দি । কিন্তু সেখানকার লোকেরা বলল, হিন্দি অনেকেই বুঝবে না ওখানে ৷ তাই তেলুগু ভাষায় করি ছবিটা । সাদা কালো ছবি ৷ অর্থাভাবে সময় লেগেছিল পাক্কা দু'বছর । অল্প বয়স, উত্তেজনা প্রবল । তাই ধৈর্য হারাইনি ।"
পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করে গৌতম ঘোষ আরও জানান, "ছবি তৈরি হওয়ার পর ওখানকার কিছু মানুষ এবং মিডিয়ার লোকেদের দেখানো হয় ছবিটা । সেদিন রামোজি রাও'ও এসেছিলেন । ছবিটা দেখে রামোজি রাও আপ্লুত হন । তিনি বলেন, আমরা তেলেঙ্গানা কৃষক আন্দোলন নিয়ে ছবি বানাতে পারিনি অথচ একজন বাঙালি পরিচালক তা করে দেখালেন । উনি সেদিন তাঁর এনাডু সংবাদপত্রকে নির্দেশ দিলেন, এই ছবিটাকে সবরকমভাবে সমর্থন করতে । আর এনাডু সেটা করেছিল । ফলে আমরা অনেক প্রচার পাই । অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও পাশে দাঁড়িয়েছিল । তবে, এনাডুর অবদান ছিল অনবদ্য । অনেক পুরস্কার পায় ছবিটা ৷ অনেকদিন চলেছিল ছবিটা অন্ধ্রপ্রদেশে । আমি এর জন্য ওঁর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ।"
গৌতম ঘোষ আরও একটি স্মৃতির কথা বলেন এ দিন । তিনি বলেন, "রামোজি স্টুডিও তৈরি হওয়ার সময় আমাকে উনি আমন্ত্রণ জানান । আমাদের আর্ট ডিরেক্টর নীতিশ রায় স্টুডিওটি ডিজাইন করেন । আমাকে নীতিশ নিয়ে গিয়েছিলেন । গিয়ে দেখলাম কী বিরাট স্টুডিও! উন্নতমানের যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি, সাউন্ড রেকর্ডিং থিয়েটার সবই তৈরি হচ্ছে সেখানে । শুধু তাই নয়, রামোজি স্টুডিওতে যাওয়ার জন্য একটি বিশাল হাইওয়ে তৈরি করেছেন । সাক্ষাতের পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী কী করা যায় । আমি বলেছিলাম, যেখানে সাউন্ড রেকর্ডিং থিয়েটার করছেন, সেখানে একটি এক্সক্লুসিভ কোয়ালিটির থিয়েটার করুন । অর্থাৎ, স্পেশাল এফেক্টের জন্য আলাদা থিয়েটার । যাকে এখন 'ফোলি' বলা হয় । সেদিন আমার কথা উনি গুরুত্ব দেন এবং সেটা তৈরি করান । এর জন্য আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ । ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ 'ফোলি' থিয়েটার আজও রামোজিতেই রয়েছে । "
তাঁর সংযোজন, "এরপর যখন রেখা, নানা পাটেকর, দীপ্তি নাভালকে নিয়ে আমি 'যাত্রা' ছবিটা বানাতে রামোজি স্টুডিওতে যাই উনি সকলকে বলে দিয়েছিলেন গৌতমের যেন কোনও অসুবিধা না হয় । যা চায় তাই যেন পায় । এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে অমন মাপের একজন মানুষের কাছ থেকে । এর থেকে বড় বন্ধু আর কে হতে পারে?" এ কথা বলতে বলতে আবেগে ভাসলেন পরিচালক... ।