কলকাতা, 3 জানুয়ারি: প্রয়াত পরিচালক অরুণ রায়। বৃহস্পতিবার তাঁর শেষযাত্রায় পাশে ছিলেন দেব, রুক্মিণী থেকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন আরও একজন। অরুণ রায়ের হাত ধরেই যাঁর প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, অরুণ রায়ের পাশে বসেই যাঁর লং শট আর বিগ শট চেনার হাতেখড়ি সেই সৃজা দত্ত। অরুণ রায় পরিচালিত 'বাঘাযতীন' ছবির ইন্দুবালা।
ফিল্মি কেরিয়ারের শুরুতেই দেবের বিপরীতে অভিনয় করেন সৃজা। বৃহস্পতিবার অভিনয় জগতের শিক্ষাগুরুকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ছিলেন অভিনেত্রী ৷ পরিচালককে নিয়ে মনের কথা সামনে আনলেন শুক্রবার ৷ সৃজা ইটিভি ভারতের সঙ্গে শেয়ার করলেন পরিচালকের সঙ্গে ফেলা আসা টুকরো কিছু স্মৃতি।
সৃজা বলেন, "অরুণ স্যার বাঁচতে চেয়েছিলেন। আরও অনেক কাজ করতে চেয়েছিলেন। দেব দা'র সঙ্গেও এপ্রিলে শুটিং শুরুর কথা ছিল। সব কাজ ফেলে রেখে চলে গেলেন। আমাকে কখনও সৃজা ডাকতেন না। ইন্দু বলেই ডাকতেন। আমাকে 'বাঘাযতীন'-এর শুটিংয়ের সময় বলতেন, তোকে শুধু ইন্দুবালা বলে ডাকলে তাকাবি। সৃজা বলে ডাকলে নয়। তুই ইন্দুবালা। কথাগুলো আজও কানে বাজে আমার। উপর থেকে ভীষণ হ্রাসভারী একজন মানুষ। কিন্তু মিশলে বোঝা যাবে কতটা মজার একজন মানুষ অরুণ দা। এত মজা করে কথা বলতেন গম্ভীরভাবে, সবাই হাসত। উনি চুপ করে থাকতেন।"- বলতে বলতে গলা ভার হয়ে আসছিল সৃজার।
অভিনেত্রী আরও বলেন, " 'বাঘাযতীন'-এর অডিশনও আমি অরুণ দা'র সামনেই দিই। এরপর সিলেক্ট হই। শুটিং শুরু হয়। ক্যামেরার সামনে কীভাবে দাঁড়াব সেটাও অরুণ দা শিখিয়েছেন আমাকে। কোনটা লং শট, কোনটা বিগ শট থেকে শুরু করে যাবতীয় এই ক'দিনে যেটুকু জেনেছি ওঁরই কল্যাণে। এমনকী, আমার বাংলা সংলাপ বলতে গিয়ে ইংরেজি টান চলে আসত ৷ সেটাও অরুণ দা ঠিক করিয়েছেন ৷ আমি যে কোনও ব্যাপারে দেব দা আর অরুণ দা'কেই ভরসা করি। মতামত নিই। কোনও ব্যাপারে কিছু জানার দরকার হলে, নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে অরুণ দা'র কাছে জানতে চাইতাম। উনিই উপায় বলে দিতেন আমাকে। আর কাকে জিজ্ঞেস করব এরপর থেকে?... "
সৃজা বলতে থাকেন, "আমিআরজি কর-এ গিয়েছিলাম দেখতে। আমার ভালো লাগেনি। দেখতে পারছিলাম না। তবে, সেরেও উঠছিলেন মাঝে। তারপর কী যে হয়ে গেল! তবে, জানতাম বেশিদিন পাব না মানুষটাকে। আর সেটাই হল। কিন্তু খুব বাঁচার ইচ্ছা ছিল অরুণ দা'র। কিন্তু শরীরের প্রতি অবহেলা করতেন। অত বড় রোগ শরীরে বাসা গড়েছিল, গুরুত্বই দিতেন না। বলতেন, এত ভাবিস না। ঠিক আছি। কোথায় ঠিক থাকলেন? চলেই তো গেলেন।"
প্রসঙ্গত, সৃজা এখন ব্যস্ত নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পরীক্ষা নিয়ে। তাই এই মুহূর্তে সিনেমার কোনও খবর নেই তাঁর কাছে। একদিকে পড়ার চাপ, আরেকদিকে অভিভাবকসম পরিচালককে হারানোর যন্ত্রণা সব নিয়ে সৃজা বেশ কাহিল, তাঁর কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট সেই ছাপ।