হায়দরাবাদ, 5 সেপ্টেম্বর: আরজি কর ঘটনায় পেড়িয়ে গিয়েছে তিন সপ্তাহ ৷ মৃত ডাক্তারি পড়ুয়ার জন্য ন্যায় চেয়ে সোচ্চার আমজনতা থেকে তারকা মহল ৷ এর মধ্যেই অনেকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ অনেকে অনিরাপত্তারও ভয় পেয়েছেন ৷ বুধবার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেওয়ায় বৃহত্তর স্বার্থে সামাজিক আন্দোলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই ৷ বৃহস্পতিবার সোশাল মিডিয়ায় সমষ্টিগত লড়াইয়ে বড় বার্তা দিলেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ৷
এদিন সোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, "যে কোনও গণআন্দোলন চেহারায় বড়ো হতে চায়। আমাদের মতো অনেকেই আগেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। আজও করছেন। অনেকেই হয়তো আগে চুপ করেছিলেন, কিন্তু আজ সোচ্চার হচ্ছেন। অনেকেই আগে প্রতিবাদ না করে অন্যায়কে সমর্থন করেছেন, কিন্তু আজ প্রতিবাদে গলা মেলাতে আসছেন এবং আসবেন। তার মধ্যেও কেউ কেউ হয়তো পরে আবার আপন স্বার্থের তাগিদে ক্ষমতার আশ্রয়ে ফিরে যাবেন। কেউ আজও আন্দোলনে আসছেন না - 'অনিরাপত্তার' ভয় কিংবা 'মেকি নিরাপত্তার' লোভের বশবর্তী হয়ে। কেউ আন্দোলনের বিরোধিতা করার ষড়যন্ত্রও করছেন।"
পরিচালক এরপর লেখেন, "তবু, বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে লড়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন। এটা আমাদের বিরাট পাওনা। কেউ কেউ আন্দোলনে যোগদান না করেও মনে মনে আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। কেউ শুধু স্বাস্থকর্মী বলে, কেউ বা নারী ও এল-জি-বি-টি-কিউ-আই -এ প্লাসদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এই পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক পরিসরেও অনেক পুরুষ তাঁদের প্রিয় মা-বোন-মেয়ে-স্ত্রী-প্রেমিকা-পার্টনারের স্বাধীনতার জন্যে লড়তে আসছেন। কেউ আসছেন রাজনৈতিক কারণে । তাঁরা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন দেখতে চান। আমার আপনার সঙ্গে তিনি ভিন্নমত হলেও তাঁকে সঙ্গে নিন। মানুষ রোজ বদলায়। কোনও মানুষ সাদা বা কালো হন না। মানুষ ছাইরঙের। আমরা সবাই এই পচা গলা সময় আর বাণিজ্যব্যবস্থা থেকেই উঠে এসেছি । তবু আমাদের বোধ ও চেতনা আজ আমাদের সমাজের এই অসুখের চিকিৎসা করতে রাস্তায় নামিয়েছে।"
এরপর কমলেশ্বর পোস্টে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সমাজের যাবতীয় অন্যায় আপাদমস্তক রাজনৈতিক হলেও, অনেকেই কোন রাজনৈতিক মঞ্চ কিংবা পতাকার তলায় আসতে চান না। তাতে অসুবিধের কি আছে ? আন্দোলন নিজেই নিজের রঙ খুঁজে নেবে।
তিনি লেখেন, "'সমষ্টিগত' লড়াইয়ে, 'ব্যক্তিগত'ভাবে আমার কাকে 'বিপ্লবী' মনে হয় বা 'বেইমান' মনে হয়- এর কোনও গুরুত্ব নেই। আমি কারোর গায়ে কোনও তকমা লাগিয়ে দিতে রাজি নই। কে 'বিপ্লবী', কে 'বেইমান'- অদূর ভবিষ্যতেই সময় প্রমাণ করে দেবে। আর সে পরীক্ষা সবার মতো, আমাকে-আপনাকেও দিতে হবে। তাই আজ এই গণআন্দোলনে কাউকেই বেছে বেছে 'অচ্যুত' চিহ্নিত করার কোনও দরকার নেই। যাঁরা আন্দোলনের বিরোধিতা করছেন তাঁদের বোঝান, তাঁদের সঙ্গে তর্ক করুন, তাঁদের কথার প্রতিবাদ করুন। কিন্তু তর্ক, ঝগড়া, মান, অভিমান গঠনমূলক হোক। গণআন্দোলনের বৃত্ত বড় হোক। আরও মানুষের যোগদান আবশ্যক। মনে রাখবেন, আমরা সবাই পাহাড়প্রতিম অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছি। আমাদের এখন সকলকে প্রয়োজন। বিশেষ করে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক মানুষকে।"